সারা বিশ্বের বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এটা স্বীকৃত হয়েছে যে অতিরিক্ত লবণ গ্রহণের ফলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। আমাদের খাবার লবণে রয়েছে সোডিয়াম এবং ক্লোরাইড। যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তাদের জন্য স্বীকৃত মাত্রার বেশী লবণ গ্রহণ ভয়ানক বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। পক্ষান্তরে স্বল্প মাত্রার লবণ গ্রহণের ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা সহজতর হয়। সেজন্য খাদ্যে লবণ গ্রহণের ব্যাপারে সচেতনতা জরুরী। বিশেষত যাদের উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ কিংবা কিডনীর ব্যাধি রয়েছে তাদের জন্য এ বিষয়টি আরো বেশী গুরুত্বপূর্ণ।
দৈনিক লবণ গ্রহণের মাত্রা:
যাদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস কিংবা কিডনীর অসুখ রয়েছে তাদের জন্য আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশন সুপারিশ করেছে দৈনিক ১৫০০ মিলিগ্রাম। যাদের এসব ব্যাধি নেই তারা ২৫০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণ গ্রহণ করতে পারেন। এর চেয়ে বেশী নয়। এক টেবিল চামচে ২৪০০ মিলিগ্রাম লবণ থাকে। সুতরাং সারাদিনে সাকুল্য এক টেবিল চামচের চেয়ে অনেক কম নুন খেতে হবে যারা ব্যাধিমুক্ত।
লবণ কোথায়?
আমাদের খাদ্যে তো লবণ থাকবেই। লবণ না হলে স্বাদ যে হয় না। কিছু খাবারে লবণের আধিক্য রয়েছে। যেমন প্রক্রিয়াজাত খাবার, ক্যান জাত খাবার এবং প্যাকেজ করা খাবার। অনেক সময় এসব ক্যান কিংবা কৌটার গায়ে লবণের পরিমাণ লেখা থাকে। ১০০ গ্রাম খাদ্যে যদি ০.৩ গ্রামের কম লবণ থাকে তবে তা আপনার জন্য ভালো। যদি ১.৫ গ্রামের বেশী লবণ থাকে তবে মনে রাখবেন এতে লবণের আধিক্য রয়েছে যা আপনার সুস্থতার অন্তরায়।
লবণের ক্ষতিকর প্রভাব :
খাদ্যে লবণের আধিক্য হলে রক্তে পানির পরিমাণ বেড়ে যায়। কিডনী তখন অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনে ব্যর্থ হয়। এগুলো রক্ত নালীতে থেকে যায়। ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। অনেকেরই পায়ে পানি জমে যায়। কিডনী, হৎপিন্ড, লিভারের অসুখ সহ আরো কিছু হরমোন ঘটিত রোগে এমনটি হতে পারে। লবণ গ্রহণের ফলে এসব পানি শুকানো মুশকিল হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ করলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ ও অনেক সময় অকার্যকর হয়ে পড়ে। কোনো কোনো মানুষের ক্ষেত্রে লবণ গ্রহণে তেমন প্রতিক্রিয়া হয় না। তারা লবণ সহনশীল। কিছু মানুষের সামান্য বেশী লবণ গ্রহণের ফলে নেমে আসতে পারে বিপর্যয়। এদের কিডনী অতিরিক্ত পানি আটকে রাখে, ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়, হৎপিন্ডের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে। মধ্যবয়স্ক, বৃদ্ধ, মোটাসোটা মানুষদের উপর লবণের নেতিবাচক প্রভাব বেশী।
কাঁচা লবণের বিকল্প:
রক্তচাপের রোগীদের আলগা লবণ গ্রহণ না করার পরামর্শ দিলে পাল্টা প্রশ্ন করে তারা জানতে চান তাহলে কি লবণ ভেজে খাওয়া যাবে। উত্তর হবে—না। লবণ ভেজে নিলে সোডিয়াম ক্লোরাইডের কোনোই ব্যাত্যয় ঘটে না। সুতরাং লবণ ভেজে খাওয়ার মাঝে কোনো কল্যাণ নেই। বিকল্প লবণ গ্রহণের প্রশ্ন ও এক্ষেত্রে অনেকেই করে থাকেন। বিকল্প লবণ হলো পটাসিয়াম ক্লোরাইড। যাদের উচ্চ রক্তচাপ, কিডনীর অসুখ কিম্বা হৃদরোগ রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এসব লবণ গ্রহণও বিপজ্জনক। এছাড়া উচ্চ রক্তচাপের কিছু ওষুধ গ্রহণ করলে এমনিতেই পটাসিয়ামের আধিক্য থাকতে পারে তাদের ক্ষেত্রে এমন লবণ গ্রহণ করা রীতিমতো ক্ষতিকর হতে পারে। সেজন্য এগুলো গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া দরকার।
লে. কর্ণেল ডা: নাসির উদ্দিন আহমদ
ক্লাসিফাইড মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট
সিএমএইচ, ঢাকা।
চেম্বার: আল-রাজি হাসপাতাল ২ তলা, ফার্মগেট।
মোবাইল: ০১৭৫৬১৭৩৭৬৫