রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে শিরোপা কুমিল্লার

শেষ বলে প্রয়োজন ৩ রান। শহিদুল ইসলামের বলে এক্সট্রা কাভারে খেলেন তৌহিদ হৃদয়। ফিল্ডারের হাতে বল যাওয়াতে ১ রানের বেশি আসার কথা নয়। ঠিক তাই হলো। ২ রান নিতে গিয়ে আউট হন মুজিব। পরতে পরতে রোমাঞ্চ ছড়ানো এই ম্যাচে ১ রানে জেতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ড্রেসিং রুম-ডাগআউট থেকে দুরন্ত গতিতে ছুটে আসেন কুমিল্লার ক্রিকেটার-সাপোর্ট স্টাফরা। এ যে তৃতীয় শিরোপার আনন্দ।

বিপিএলের ফাইনালে তিনবার উঠে তিনবারই চ্যাম্পিয়ন হয় ইমরুল কায়েসের দল। যার মধ্যে দুবারই নেতা ছিলেন ইমরুল। এর আগে মাশরাফি বিন মুর্তজা দুইবার ট্রফি জয়ের স্বাদ পান। অন্যদিকে বরিশালের ঠিক উল্টোটা। তিনবার ফাইনালে তিনবারই হার। প্রথমবার ঢাকার কাছে, শেষ দুইবার কুমিল্লার কাছে।

শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ফাইনালের মহারণে আগে ব্যাটিং করে ১৫২ রানের লক্ষ্য দেয় কুমিল্লা। রান তাড়া করতে নেমে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৫০ রানে থামে বরিশাল।

ম্যাচের মোড় পাল্টে দেন সুনিল নারিন। ১৯ বলে প্রয়োজন ছিল ১৮ রান। নারিন ১৮তম ওভারের প্রথম বলেই ফেরান ব্রাভোকে। এই ওভারে মাত্র ২ রান দিয়ে ১ উইকেট নেন। চাপ নয় শুধু যেন ম্যাচ থেকেই ছিটকে যায় বরিশাল।

পরের ওভারে মোস্তাফিজ এলবিডব্লিউ করে ফেরান শান্তকে। এই ওভারে মোস্তাফিজ দেন ৬ রান। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১০ রান। ওয়াইড-তানভীরের ক্যাচ মিসের পরও শহিদুলের করা এই ওভারে বরিশাল নেয় ৮ রান। যেন তীরে এসে তরী ডোবা। শেষ তিন ওভারে নারিন-মোস্তাফিজ-শহিদুল দেন ১৬ রান।

অথচ এর আগ পর্যন্ত বরিশালই ছিল চালকের আসনে। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে মিড অনে ক্যাচে দিয়ে ফেরেন ওপেনার মুনিম শাহরিয়ার। শুরুতে উইকেট হারানোর ধাক্কা সামাল দেন সৈকত আলী। তিনি এই ম্যাচে খেলছেন জিয়াউর রহমানের পরিবর্তে। ক্রিজে এসে প্রথম বল ডট দিয়েছেন। এরপর শহিদুলের টানা তিন বলে তিন চার মেরে শুরু করেন নিজের ইনিংস। মাঝে নারিনের ওভার থেকে আসে ৬ রান।

এর পরেই মোস্তাফিজের ওভারে তিন চারে নেন ১৪ রান! পঞ্চম ওভারে নারিন দেন মাত্র ২ রান! মঈনের ষষ্ঠ ওভারে সৈকত ১ ছয়, ১ চারে নেন ১৩ রান। পাওয়ার প্লে থেকে বরিশাল ১ উইকেট হারিয়ে ৫১ রান তোলে। পাওয়ার প্লের পরের ওভারে আবু হায়দার রনিকে টানা দুই চারে ২৬ বলে ফিফটি করেন সৈকত।

ঝড়ো ফিফটির পর ইনিংসের দশম ওভারে সাজঘরে ফেরেন সৈকত। তানভীরের বলে লং অনে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন ইমরুলের হাতে। ক্রিজে আসেন নুরুল হাসান সোহান। ৩৪ বলে ৫৮ রান করেন তিনি। দশম ওভারে সৈকত যখন ফিরছিলেন তখন গেইলের রান ২০ বলে ১৪। পরের ওভারের প্রথম বলেই ৬ হাঁকিয়ে যেন জ্বলে ওঠার আভাস দেন গেইল। তাই হলো। পরের ওভারে ১ ছয় ১ চারে নেন ১২ রান। কিন্তু বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেননি। নারিনের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন সাজঘরে। রিভিউ নিয়েছিলেন; কিন্তু কোনো কাজে আসেনি। তার ব্যাট থেকে আসে ৩১ বলে ৩৩ রান।

মোস্তাফিজের অসাধারণ ক্যাচে সাকিব ফেরেন ৭ বলে ৭ রান করে। সোহানের সঙ্গে নতুন ব্যাটসম্যান শান্তর জুটিতে জয় দেখছিল বরিশাল। কিন্তু আরিফুলের থ্রোতে সোহানের আউটে ভেঙে যায় সেই জুটি। ১৩ বলে ১৪ রান করেন সোহান। এরপর শেষ তিন ওভারে একে একে সাজঘরে যান ব্রাভো (১), শান্ত (১২) ও মুজিব (৪)।

কুমিল্লার হয়ে ২টি করে উইকেট নেন সুনিল নারিন ও তানভীর ইসলাম। ৪ ওভারে মাত্র ১৫ রান দেন এই ক্যারিবীয়ান। ১টি করে উইকেট নেন মোস্তাফিজ, শহিদুল।

এর আগে সুনীল নারিন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে পাওয়ার প্লেতে ভাসিয়েছেন রান উৎসবে। মুজিবকে লং অনে ৬ মেরে শুরু, প্রথম ওভারেই নেন ১৮ রান! শফিকুলের দ্বিতীয় ওভারে আবার ২ ছয় ১ চারে ১৮ রান! দুই ওভারে আসে ৩৬ রান। তৃতীয় ওভারে সাকিব মাত্র ৪ রান দিয়ে ফেরান লিটন দাসকে। ডোয়াইন ব্রাভোর চতুর্থ ওভারে মাত্র ৬ রান আসলেও সাকিবের পঞ্চম ওভারে নারিন নেন ১৬ রান! পাওয়ার প্লের শেষ ওভারের প্রথম বলে মেহেদি হাসান রানাকে ৬ হাঁকিয়ে ২১ বলে দেখা পান ফিফটির। তার ইনিংসে চার-ছয়ের মার ছিল সমান ৫টি করে। পরের বলেই সোজাসুজি উড়িয়ে মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ধরা পড়েন শান্তর হাতে। ক্যাচ নিয়েই খুশিতে নেচে ওঠেন তিনি। পাওয়ার প্লেতে কুমিল্লার সংগ্রহ ২ উকেট হারিয়ে ৭৩ রান। নারিনের আউটে যেন সব থমকে যায়।

প্রথম ৬ ওভারেই আসে ৭৩ রান। পরের ১৪ ওভারে আসে ৭৮ রান! ফাইনালের মহারণে রান উৎসব করবে কুমিল্লা এমন কল্পনাও করে ফেলেছিলেন অনেকে। কিন্তু মুজিব-ব্রাভোরা তা হতে দেননি। দারুণ বোলিংয়ে আটকে রাখেন কুমিল্লার ব্যাটসম্যানদের। শেষ দিকে মঈন-রনির ব্যাটে ৫১ বলে ৫৩ রান যোগ করে কুমিল্লা। ৩২ বলে ৩৮ রান করে মঈন ফিরলে ভাঙে এই জুটি। সর্বোচ্চ ২৩ বলে ৫৭ রান করেন নারিন। ২১ বলে ফিফটি করেছিলেন এই ক্যারিবীয়ান। এ ছাড়া আর কেউ ২০ রানের বেশি করতে পারেননি।

সর্বোচ্চ ২ উইকেট করে পেয়েছেন মুজিব উর রহমান ও শফিকুল ইসলাম।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ২০ ওভারে ১৫১/৯ (নারিন ৫৭, মঈন ৩৮; মুজিব ২/২৭)।
ফরচুন বরিশাল: ২০ ওভারে ১৫০/৮ (সৈকত ৫৮, গেইল ৩৩; নারিন ২/১৫)।
ফল: কুমিল্লা ১ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: সুনীল নারিন।
সিরিজসেরা: সাকিব আল হাসান।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts