একি ম্যাজিক দেখালেন মিরাজ-আফিফ

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের দেওয়া ২১৬ রানের জবাবে ৬ উইকেট হারিয়ে ২১৯ রান করে বাংলাদেশ। ৭ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় টাইগাররা।

রান তাড়ায় বা দ্বিতীয় ইনিংসে সপ্তম উইকেটে বিশ্ব রেকর্ড জুটি এখন আফিফ-মিরাজের। আফগানিস্তানের বিপক্ষে আজ তাঁরা গড়েছেন অবিচ্ছিন্ন ১৭৪ রানের জুটি। এর আগে এ রেকর্ডটি ছিল ইংল্যান্ডের জস বাটলার ও ক্রিস ওকসের। ২০১৬ সালে নটিংহ্যামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওকস-বাটলার করেছিলেন ১৩৮ রান। ওয়ানডেতে যে কোনো ইনিংসে সপ্তম উইকেটে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সর্বোচ্চ জুটিটি বাটলার ও আদিল রশিদের, ২০১৫ সালে এজবাস্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।

মাত্র ৪৬ রানে ৬টি উইকেটের পতন। চার পাণ্ডবও সাজঘরে। কঠিন বাস্তবতায় দুইশর বেশি রান তাড়া অসম্ভব ব্যাপারই ছিল। অথৈ সাগর থেকে দলকে টেনে তুললেন আফিফ হোসেন ধ্রুব ও মেহেদী হাসান মিরাজ। দুই তরুণের কাঁধে চড়ে ধীরে ধীরে বাংলাদেশ পৌঁছাল গন্তব্যে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে টাইগাররা পেল জয়ের ঠিকানা।

সাগরিকার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আফগানদের দেয়া ২১৬ রানের লক্ষ্য টাইগাররা টপকেছে ৭ বল হাতে রেখে। সপ্তম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ১৭৪ রানের রেকর্ড জুটিতে জয়ের বন্দরে নোঙর করে বাংলাদেশ। ৪ উইকেটের রোমাঞ্চকর জয়ে সিরিজে এগিয়ে (১-০) গেল তামিম ইকবালের দল।

২০১৮ সালে মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইমরুল কায়েস ও মো: সাইফউদ্দিন করেছিলেন ১২৭। সপ্তম উইকেটে এটিই ছিল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি। রান তাড়ায় সেটি টপকালেন আফিফ-মিরাজ। ১১৫ বলে ৯৩ রানে আফিফ ও ১২০ বলে ৮১ রানে অপরাজিত থাকেন মিরাজ।

শুরুর ছয় ব্যাটারের মধ্যে সাকিব আল হাসান শুধু ছুঁতে পেরেছেন দুই অঙ্ক। ১০ রান করে উইকেট বিলিয়ে আসেন। তার আগে সাজঘরে ফেরেন লিটন দাস (১), তামিম ইকবাল (৮), মুশফিকুর রহিম (৩), ইয়াসির আলি রাব্বি (০)।

শুরুর চার ব্যাটারকে একাই ফেরান ফজল হক ফারুকি। এই নামটা বিপিএল শুরুর আগ পর্যন্ত অচেনাই ছিল অনেকের কাছে। বাংলাদেশের
টিটুয়েন্টি আসরে মিনিস্টার ঢাকার হয়ে তিন ম্যাচ খেলে নেন মোটে দুই উইকেট। সাইড বেঞ্চে কেটেছে তার বেশি সময়। অথচ সেই বোলারই কিনা জাতীয় দলের জার্সি জড়াতেই হয়ে উঠেন বাংলাদেশের টপঅর্ডারের যম। এর আগে মাত্র একটি ওয়ানডে খেলা ফারুকির নামের পাশে যখন ৪ উইকেট, বাংলাদেশের সংগ্রহ তখন মোটে ১৮ রান।

সাকিবকে ফেরান মুজিব উর রহমান আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (৮) আউট হন রশিদ খানের বলে। তার আগে সাকিব বল হাতে জ্বলে উঠতে সময় নেন। ৮ ওভারে ৪৯ রান খরচের পর নবম ওভারে জোড়া উইকেট। আড়াইশর দিকে ছুটতে থাকা আফগানিস্তান ছন্দ হারিয়ে ফেলে তাতে। ৪৯.১ ওভারে গুটিয়ে যায় ২১৫ রানে।

কিছুটা চাপের মাঝেই থিতু হতে পেরেছেন কয়েকজন। ইনিংস বড় করতে না পারার হতাশা নিয়েই ফিরতে হয়েছে। তবে ব্যতিক্রম ছিলেন নজিবউল্লাহ জাদরান। ইনিংসের একমাত্র ফিফটি আসে তার ব্যাটে। ৮৪ বলে ৬৭ রানের ইনিংস খেলে আউট হন নবম ব্যাটার হিসেবে। তার ইনিংসে ছিল ৪টি চার ও ২ ছক্কা।

শুরুতেই রহমতউল্লাহ গুরবাজের (৭) উইকেট তুলে নেন মোস্তাফিজুর রহমান। দ্বিতীয় ও পঞ্চম উইকেট জুটিতে ভর করে দুইশর পথ পাড়ি দেয় আফগানিস্তান। সফরকারীদের সংগ্রহ নাগালে রাখতে বড় ভুমিকা রাখেন তাসকিন-শরিফুল-মিরাজরা।

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বল হাতে নেন এক ওভারের জন্য। তুলে নেন একটি উইকেট। একটি ক্যাচ ছাড়ার আক্ষেপ মেটান আফগান অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শাহিদীকে (২৮) আউট করে। মোস্তাফিজের বলে ইয়ামিন আহমেদজাইয়ে হাই ক্যাচ দুর্দান্তভাবে মাহমুদউল্লাহ তালুবন্দী করলে ৫ বল আগেই অলআউট হয় আফগানিস্তান।

কোনো উইকেট না পেলেও অসাধারণ বোলিং করেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ১০ ওভারে খরচ করেন মাত্র ২৮ রান। তিন ওভার মেডেন পান এ অফস্পিনার। রান খরচায় তিনিই ছিলেন সবচেয়ে কৃপণ। ব্যাটে ও বলে কৃতিত্বের জন্য ম্যাচ সেরাও হন তিনি।

মোস্তাফিজ ৯.১ ওভারে ৩৫ রানে তিনটি উইকেট নেন। দুটি করে উইকেট শিকার করেন তাসকিন, শরিফুল ও সাকিব।

Print Friendly

Related Posts