ধর্ষণকাণ্ডে আটকদের মুক্তির দাবিতে হরিজনরা সড়কে
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি: গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে এখন গোপালগঞ্জ উত্তাল। এদিকে ধর্ষণকাণ্ডে সন্দেহভাজন ৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে ছাত্রীকে গণধর্ষণের প্রতিবাদে এবং ধর্ষকদের গ্রেপ্তারের দাবীতে গোপালগঞ্জ থানা ও মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোনাপাড়া এলাকায় প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। আটকা পড়েছে বিপুল সংখ্যক যাত্রীবাহী বাস ও মালবাহী ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন।
গণধর্ষণের ঘটনায় রাতেই গোপালগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলায় সন্দেহভাজন ৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে।
শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গণধর্ষণের শিকার ওই শিক্ষার্থী তার বন্ধুর সঙ্গে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার নবীনবাগস্থ হেলিপ্যাড থেকে হেঁটে বের হচ্ছিলেন। এ সময় একটি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে কয়েকজন ব্যক্তি তাদের তুলে নেয়। ৭-৮ জন মিলে তাদের হ্যালিপাডের পাশেই নির্মাণাধীন গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন স্কুল ও কলেজের ভবনে নিয়ে গিয়ে ওই শিক্ষার্থীর বন্ধুকে মারধর করে তাকে গণধর্ষণ করে।
পরে খবর পেয়ে সহপাঠিরা ওই শিক্ষার্থী ও তার বন্ধুকে উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ ২৫০-শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে।
এ ঘটনায় রাতেই ধর্ষকদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বশেমুরবিপ্রবি ক্যাম্পাস থেকে পায়ে হেঁটে বিক্ষুব্ধ প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী গোপালগঞ্জ সদর থানায় অবস্থান করে এবং ধর্ষকদের বিচার চেয়ে ৩ দফা দাবি ও আল্টিমেটাম প্রদান করে।
আল্টিমেটামে ভোর ৬ টার মধ্যে অপরাধীকে শনাক্ত এবং গ্রেপ্তারের দাবি জানায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। আল্টিমেটাম অনুয়ায়ী পুলিশ ধর্ষকদের গ্রেপ্তার করতে না পারায় ভোর সাড়ে ৬টার পর থেকে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোনাপাড়ায় অবস্থান নিয়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের উপর গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ শুরু করে। এসময় শিক্ষার্থীরা প্লাকার্ড নিয়ে মহাসড়কের উপর বসে ধর্ষকদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবীতে বিভিন্ন শ্লোগান দিচ্ছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রাজিউর রহমান বলেন, এ খবর পেয়ে আমরা তাৎক্ষণিক ওই শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলেছি এবং আমি নিজে এ ঘটনায় বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় মামলা দায়ের করেছি।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি (তদন্ত) শীতল চন্দ্র পাল বলেন, এ ঘটনায় রাতেই গোপালগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় সন্দেহভাজন ৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ অ্যান্ড অপারেশন) নিহাদ আদনান তাহিয়ান বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে অভিযান চালানো হয়েছে। আমাদের টিম ইতিমধ্যে অভিযান শুরু করেছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবো।
এদিকে গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) এক শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণের ঘটনায় আটক তিনজন হরিজন সম্প্রদায়ের বলে জানা গেছে।
তাদের মুক্তির দাবিতে গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজন। সড়ক অবরোধের ফলে দুই শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ায় জেলা শহরে সড়ক যোগাযোগ বিঘ্নিত হচ্ছে।
জানা গেছে, গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) এক শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রাজিউর রহমান বাদী হতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় রাতেই সন্দেহভাজন হিসাবে হরিজন সম্প্রদায়ের তিনজনকে বাড়ি থেকে আটক করে পুলিশ।
এ ঘটনায় তাদের মুক্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর থেকে গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া সড়কের নবীনবাগ এলাকায় ময়লা ফেলে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে।
হরিজন সম্প্রদায়ের সন্ধ্যা জমাদ্দার বলেন, এ ঘটনায় আমাদের কেউ জড়িত নয়। কিন্তু পুলিশ রাতেই আমাদের সম্প্রদায়ের তিন ছেলেকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। আমরা দ্রুত তাদের মুক্তি চাই।
সুরভী জমাদ্দার ও দিলীপ দাস বলেন, কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে আমরা জানি না। কিন্তু আমাদের সম্প্রদায়ের উপর মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের মুক্তি না দিলে আমরা অবরোধ থেকে সরবো না।