তাঁকে নিয়ে বিতর্ক, তাঁর ব্যাটেই ইতিহাস: আনন্দবাজার

ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ ৭৭ রান করে ম্যাচসেরা হয়েছেন সাকিব আল হাসান। সাকিব আল হাসানের জীবনে উত্থান-পতন এ ভাবেই সঙ্গী। যখন দল খাদে পড়েছে, তিনি টেনে বের করেছেন। যখনই তাঁকে নিয়ে সমালোচনা হয়েছে, উঠে দাঁড়িয়েছেন। প্রতিবেদন ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এই কিছু দিন আগেও তাঁকে নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ায় ঝড় উঠেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটমহলে। অনেকেই অভিযোগ করছিলেন, অন্যায্য সুবিধা পাচ্ছেন তিনি। কিছুটা বাধ্য হয়েই রামধনুর দেশে গিয়ে খেলার কথা বোর্ডকে জানান তিনি। গোটা দল তখন পৌঁছে গিয়েছে। তিনি সবার শেষে যান। দায়বদ্ধতা এতটাই যে বিমানবন্দর থেকে হোটেলে না গিয়ে সরাসরি অনুশীলনে চলে যান। বাকিরা সে সময় নেটে ব্যাট করছিলেন। তিনি মাঠের ধারে চক্কর লাগাতে থাকেন। কয়েক দিন পরে দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের ইতিহাস রচনার দিনে তিনিই মূল কারিগর।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শাকিব আল হাসানের জীবনে উত্থান-পতন এ ভাবেই সঙ্গী। যখনই দল খাদে পড়েছে, তিনি টেনে বের করেছেন। যখনই তাঁকে নিয়ে সমালোচনা হয়েছে, তিনি উঠে দাঁড়িয়েছেন। মুখের উপর জবাব দিয়েছেন সমালোচকদের। হয় ব্যাট, না হয় বল তাঁর হয়ে কথা বলেছে।

শাকিবকে পাওয়া যাবে কি না, তাই নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগে চূড়ান্ত নাটক হয়। তাঁর অধিকাংশ সতীর্থও ক্ষুব্ধ ছিলেন। জোহানেসবার্গ উড়ে যাওয়ার আগে বোর্ডকর্তাদের সঙ্গে রুদ্ধ দ্বার বৈঠক হয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছে তিনি বাকিদের থেকে অতিরিক্ত মনোযোগ পেতে থাকেন। সেটাও অনেকের মনঃপূত হয়নি।

শুক্রবার সেঞ্চুরিয়নে চার মেরে নিজের ইনিংস শুরু করেন শাকিব। পরের বাউন্ডারি আসতে সময় লাগে ২৬ বল। কিন্তু যে ভাবে দ্বিতীয় বাউন্ডারি পাওয়ার পর নিজের খেলায় বদল আনেন, তা চমকে দিয়েছে অনেককেই। বাংলাদেশ সাধারণত শেষ দশ ওভার বাঁচিয়ে রাখে আক্রমণের জন্য। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের বিরুদ্ধে ম্যাচের মাঝামাঝি থেকেই আগ্রাসী ভঙ্গিতে খেলতে থাকে তারা, যার নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন শাকিব। চতুর্থ উইকেটে ইয়াসির আলির সঙ্গে ১১৫ রান যোগ করেন। দক্ষিণ আফ্রিকা যে ভয় পেয়েছিল, তা তাদের রণনীতি দেখেই স্পষ্ট। বাধ্য হয়ে ডেথ ওভারের জন্য না রেখে আগেই কাগিসো রাবাডাকে নিয়ে আসেন প্রোটিয়া অধিনায়ক তেম্বা বাভুমা। তা কাজেও দেয়। তিন বলের ব্যবধানে শাকিব এবং ইয়াসির ফিরে যান। কিন্তু পরের দিকে ব্যাটাররা তাতে ভয় পাননি। একসঙ্গে চেষ্টা করে দলের রান তিনশো পার করে দেন।

ম্যাচের পর শাকিব বলেছেন, “৩০-৪০ ওভারের সময় বোলারদের উপর আক্রমণ করা দরকার ছিল। না হলে ২৬০-২৭০ রানে আমরা শেষ করতাম। জানতাম রাবাডা শেষ দিকে বল করবে। তাই ওকে আগে আনার জন্যেই আমরা কৌশল বদলাই। পুরনো বলকে কাজে লাগানো আমাদের আসল উদ্দেশ্য ছিল। সেটা সফল হয়েছে।”

শাকিবের কোচ নাজমুল আবেদিন মনে করেন, ছাত্রের ব্যাটিং কৌশল বদলেই সাফল্য এসেছে। বলেছেন, “আগে ও সাধারণ পজিশনেই ব্যাট করত। ব্যাটের গ্রিপ ছিল উপরের দিকে। এখন নীচের দিকে গ্রিপ করে। দাঁড়ানোর ভঙ্গিতেও বদল এসেছে। ফলে ফিল্ডিংয়ের ফাঁক খুঁজে নেওয়ার সুযোগ এখন অনেক বেশি। এখন সহজেই সোজাসুজি বা একস্ট্রা কভারের দিকে অনায়াসে শট খেলতে পারে।”

দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে ১৪টি এক দিনের ম্যাচে হারার পর এই প্রথম জয় পেল বাংলাদেশ। সাফল্যের পিছনে একটা নামই রয়েছে। তিনি শাকিব আল হাসান। বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts