আবু নাঈম: পঞ্চগড়ে বিধবা নারীর দায়ের করা ধর্ষণ মামলায় কারাগারে যাওয়া পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল জলিল (৪৫) জামিন পেয়ে সেই নারীকে বিয়ে করেছেন।
বুধবার (২৩ মার্চ) বিকেলে পঞ্চগড় জেলা আইনজীবি সমিতি ভবনের দ্বিতীয় তলায় ৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকা দেনমোহরে ওই নারীকে বিয়ে করেন আব্দুল জলিল।
এর আগে পঞ্চগড় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালে আব্দুল জলিল জামিন আবেদন করলে মামলার বাদীকে বিয়ে করার শর্তে ট্রাইবুন্যালের বিচারক মেহেদী হাসান তালুকদার জামিন মঞ্জুর করেন।
গত রোববার (২০ মার্চ) পঞ্চগড় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালে আব্দুল জলিল জামিন আবেদন করলে ট্রাইবুন্যালের বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আব্দুল জলিল কুড়িগ্রাম সদর থানায় কর্মরত আছেন। তিনি গাইবান্ধা সদর উপজেলার উত্তর ফুলিয়া এলাকার শুকুর আলীর ছেলে। এর আগে তিনি পঞ্চগড় সদর থানায় কর্মরত ছিলেন।
জানা গেছে, গত ২৩ জানুয়ারি ভুক্তভোগী নারীর দায়ের করা মামলা আমলে নিয়ে আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরওয়ানা জারি করেন আদালত। পরে উচ্চ আদালত থেকে ৬ সপ্তাহের জামিন পান আব্দুল জলিল। উচ্চ আদালতের অস্থায়ী জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত রোববার পঞ্চগড় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালে স্থায়ী জামিন চাইলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠান।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগি ওই নারী তার মৃত স্বামীর ভাইয়ের সঙ্গে বাড়ির সীমানা নিয়ে বিরোধের জেরে ২০২০ সালের ৩০ এপ্রিল পঞ্চগড় সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। আব্দুল জলিল সেটির তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন। সেই সুবাদে ভুক্তভোগি নারীর সঙ্গে বিভিন্ন সময় যোগাযোগ ছিলো তার। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন প্রস্তাবও দেন। এক পর্যায়ে একই বছরের গত ৬ অক্টোবর রাতে ঘরে ঢুকে জোর পূর্বক ধর্ষণ করেন। সেখানে ধরাও পরেন তিনি। পরে আব্দুল জলিল ওই নারীকে বিয়ে করবেন বলে আশ্বস্ত করেন। এসময় তার পরিচিত দুজনকে ডেকে এনে মিথ্যা বিয়ের নাটকও সাজান।
ভুক্তভোগি ওই নারী বলেন, পঞ্চগড়ে কর্মরত থাকাকালীন আব্দুল জলিল আমাকে স্ত্রীর স্বীকৃতি দিলেও বিয়ের কাগজ দেখাতে কালক্ষেপণ করছিলো। নানা অজুহাত দেখিয়ে একসময় বদলি নেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ৭ অক্টোবর পঞ্চগড় আদালতে স্বাক্ষী দিতে আসবেন এবং সেদিনই আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে যাবেন। ৭ তারিখে আসেনও এবং আমার বাড়িতেই রাতযাপন করেন। কিন্তু পরদিন আদালতে স্বাক্ষী দিয়ে আর আমার সঙ্গে দেখা করেননি। ফোনে যোগাযোগ করলে মিথ্যা বিয়ের কথা বলে ধর্ষণ করার কথা স্বীকার করে বিভিন্ন রকম হুমকি দেন।
তিনি বলেন, ন্যায় বিচার পেতে আমি আদালতে এসেছিলাম। আমি ন্যায় বিচার পেয়েছি। এজন্য আদালতের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
বাদীপক্ষের আইনজীবি মেহেদী হাসান মিলন বলেন, আব্দুল জলিলের স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি পেতে ভূক্তভোগী নারী আদালতে এসেছেন। আদালত ন্যায় বিচার দিয়েছে। আমরা আদালতের প্রতি সন্তুষ্ট।