ঢাকায় সড়কে গুলি, আ.লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুসহ দুজন নিহত

রাজধানীর শাহজাহানপুরে দুর্বৃত্তের গুলিতে নারীসহ দুজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় একজন গুলিবিদ্ধ হন।

বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) রাতে এ ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ তিনজনকে রাতে সোয়া ১১টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জাহিদুল ইসলাম টিপু (৫৪) ও সামিয়া আরেফিন প্রীতিকে (২৪) মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতদের মধ্যে জাহিদুল ইসলাম টিপু (৫৪) মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তিনি মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন।

বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে আমতলী পানামা ভবনের সামনের সড়কে মাইক্রোবাসে থাকা টিপুকে লক্ষ্য করে এই হামলা হয় বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।

হামলাকারী কয়েকজন ছিলেন বলে স্থানীয়রা জানালেও পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেছেন, একজন দুর্বৃত্ত মোটরসাইকেলে এসে গাড়িতে থাকা টিপুকে লক্ষ্য করে গুলি চালান।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক মো. আলাউদ্দিন বলেন, গুলিবিদ্ধ টিপু এবং প্রীতিকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়।

স্থানীয়রা বলছেন, হামলার সময় টিপু মাইক্রোবাসে যাচ্ছিলেন। তাকে গুলির পর দুর্বৃত্তরা এলোপাতাড়ি গুলি চালালে ওই সড়কে থাকা রিকশারোহী প্রীতিও গুলিবিদ্ধ হন। আহত হন টিপুর গাড়িচালক মুন্না (২৪)।

নিহত প্রীতির বান্ধবী সুমাইয়া জানান, গোলাগুলির ঘটনার সময় তাঁরা শাজাহানপুর আমতলা এলাকায় রিকশায় ছিলেন। হঠাৎ কোথা থেকে গুলি এসে প্রীতির শরীরে বিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় প্রীতিকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রীতি বদরুন্নেসা সরকারি কলেজের অনার্সের ছাত্রী ছিলেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া জানান, রাত সোয়া ১১টার দিকে তিনজনকে হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক টিপু ও প্রীতিকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত মুন্নাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

চিকিৎসাধীন গুলিবিদ্ধ মুন্নার ভাষ্যমতে, তার মালিক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে নিয়ে এজিবি কলোনি থেকে গাড়িযোগে শাজাহানপুরের বর্তমান বাসায় যাচ্ছিলেন তিনি। শাজাহানপুর আমতলা মসজিদ এলাকায় পৌঁছালে হঠাৎ মুখোশ পরা এক ব্যক্তি তাঁদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন। এতে তাঁরা গুলিবিদ্ধ হন।

টিপুর স্ত্রী ফারজানা ইসলাম ডলি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওই এলাকার নারী কাউন্সিলর। তাদের বাসা শাহজাহানপুরে।

টিপুর মৃত্যুর খবরে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী ঢাকা মেডিকেলে জড়ো হয়েছেন।

সেখানে থাকা ঢাকা দক্ষিণের ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সলর মামুনুর রশীদ শুভ্র বলেন, “আমরা যতদূর জেনেছি, উনি বাসায় ফিরছিলেন নিজের গাড়িতে। গাড়িটা জ্যামে পড়েছিল। তখন কিছু ‍যুবক এসে গুলি চালায়। উনার (টিপু) গায়ে ৯টি গুলি লাগে। তার ড্রাইভারের হাতে গুলি লেগেছে। এলোপাতাড়ি গুলিতে একটি রিকশায় থাকা একটি মেয়ের গায়েও গুলি লাগে।”

কী কারণে কারা এই হামলা চালাতে পারে- জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা শুভ্র বলেন, “সেটা আমরাও বুঝতে পারছি না। তিনি (টিপু) একজন ভালো মানুষ। এমন ঘটনার কোনো কারণও খুঁজে পাচ্ছি না।”

ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের পুলিশের উপ-কমিশনার আবদুল আহাদ বলেন, টিপুর গাড়িতে আরও কয়েকজন ছিলেন। গাড়িটি যানজটে পড়েছিল। তখন রাস্তার বিপরীত দিকে থেকে একজন দুর্বৃত্ত হেলমেট পরে গাড়ির জানালা দিয়ে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। পরে ওই হেলমেট পরা দুর্বৃত্ত মোটরসাইকেল চালিয়ে পালিয়ে যায়।

কেন এই হত্যাকাণ্ড, পুলিশ তা তদন্ত শুরু করেছে বলে তিনি জানান।

কাউন্সিলর শুভ্র জানান, শুক্রবার জুমার নামাজের পর মতিঝিল এজিবি কলোনি মাঠে টিপুর জানাজা হবে।

 

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts