এবার কমতে পারে আমের উৎপাদন

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার ৩৭ হাজার ১৬৫ হেক্টর জমিতে আমগাছ চাষাবাদ হচ্ছে।কিন্তু এবারের মৌসুমে বড় গাছ গুলোতে পর্যাপ্ত মুকুল আসেনি। ফলে পুরনো আম বাগান বিক্রি নিয়ে হতাশায় ভুগছেন চাষিরা। কিন্তু একেবারেই উল্টো চিত্র ছোট গাছের বাগানগুলোতে। এসব বাগানের অধিকাংশ গাছে মুকুল ফুটে আমের গুটিও বের হয়েছে।

স্থানীয় আম বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরনো গাছের বয়স বেশি হওয়ায় উৎপাদন সক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে।

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চাঁপাইনবাগঞ্জের আম বাগানগুলোর মধ্যে তিন চতুর্থাংশ জমিতেই পুরনো গাছ। গত ১০ বছরে জেলায় ৮৫ হাজার ৫৯১ বিঘা জমির আম বাগান বেড়েছে। এর অধিকাংশই নাবি জাতের আম বাগান। এবারের আমের মৌসুমে সেই সব গাছের উপরই নির্ভর করবে আমের সার্বিক উৎপাদনের পরিমান। তবে পুরাতন গাছগুলোতে পর্যাপ্ত মুকুল না আসায় উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ব্যহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার সরকার পাড়ার একটি বাগানের আমগাছে ভাইরাস নাশক দিচ্ছিলেন শ্রমিকরা। পুরনো আম গাছের দিকে তাকিয়ে ওই বাগান মালিক সেরাজুল বিড়বিড় করে বলছিলেন- বড় গাছেতো মুকুল এলোনা, আর এখন আসবেও না। এবার বাগানটা বিক্রি করতে ভোগান্তি পহাতে হবে। তিনি বলেন, এবারের মৌসুমে পুরনো আম গাছগুলোতে মুকুল নাই বললেই চলে। মুকুলের পরিবর্তে গাছগুলোর ডগায় কচি পাতা এসেছে। এখন আর মুকুল হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

পুরনো গাছে মুকুল না আসায় বিপাকে পড়া আম বাগানি ফয়সাল আহমেদ বলেন, এবারের মৌসুমে পুরনো আম গাছে মুকুল কম হয়েছে।তাই কোন আম বাগান ক্রেতারা বড় আম বাগানগুলো কিনছেন না।তবে ছোট বাগান কেনার দিকে ঝোঁক দিয়েছেন বাগান ক্রেতারা।এ বছর ছোট গাছের বাগানগুলো থেকেই আমের ফলন বেশি হবে।

এ দিকে পুরনো সরকারি বাগানগুলো এ বছর এখনও লিজ দেওয়া যায়নি। জেলা হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক বিমল কুমার প্রামানিক জানান, হর্টিকালচার সেন্টারের বাগানে বিভিন্ন জাতের ৩০০টি পুরানা আম গাছ রয়েছে।এ বাগানটি গত বছর আমের মৌসুমে প্রায় ১৩ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে।কিন্তু এবার মুকুল না আসায় প্রকৃত ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত এ বাগানটির দাম উঠেছে মাত্র ৬ লাখ টাকা।

তিনি বলেন, ছোট গাছগুলোতে মুকুল বেশি আশায় আমের ফলন ভালো হবে।যা আম উৎপাদন হবে, সেগুলো ছোট গাছের বাগান গুলো থেকেই হবে।এবার পুরনো আমগাছগুলোতে মুকুল কম। ফলে আম উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ব্যহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

আম গবেষণা কেন্দ্রের ভেতরের বাগানে গিয়ে দেখা যায়। পুরানা গাছে একে বারেই দেখা মুকুল নেই।ডগায় ডগায় বের হয়ে নতুন পাতা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত গবেষণা কেন্দ্রর মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোখলেসুর রহমান জানান, গাছের যে উৎপাদনের শক্তি না ক্ষয় হয়ে গেছে।ফলে পুরনো আমের গাছগুলোতে মুকুল কম হয়েছে।কিন্তু ১০ থেকে ১২ বছরসহ নাবি জাতের আম গাছগুলো মুকুলে ছেয়ে গেছে। এবার যেসব আম উৎপাদন হবে, তা ছোট গাছের বাগান থেকেই হবে।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts