সন্তানদের পাশে থাকতে মৎস্য কর্মকর্তার পদ ছাড়লেন মা

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি: সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা পৃথিবীর কোন কিছুর সঙ্গে তুলনা হয়না। এই বাস্তব সত্যকে আরেকবার সামনে নিয়ে আসলেন ময়মনসিংহের এক চাকরিজীবী মা।

তিনি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জান্নাত ই হুর সেতু।

পেশাগত জীবনে সাফল্যের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে সন্তানদের প্রতি দায়িত্ববোধ ও ভালোবাসা থেকে বিসিএস ক্যাডার হয়েও স্বেচ্ছায় অবসর চাইলেন সেই মা।

গত বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) ১০ বছরের চাকরি জীবনের অবসান ঘটিয়ে সহকর্মীদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছেন। তবে অবসরের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন না পেলেও তা এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। এর আগে এবছরের জানুয়ারিতে তিনি সরকারের কাছে আবেদন করেছেন।

জান্নাত ই হুর সেতু বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে ২০১১ সালে মাস্টার্স পাস করেন। একই বছর ২৯তম বিসিএস ক্যাডার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হোন। চাকরির পরপরই সেতু বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন সহপাঠী সানোয়ার রাসেলের সঙ্গে।

তিনি ব্যাক্তিগত জীবনে তিন কন্যা সন্তানের জননী। বর্তমানে স্বামী, শাশুড়ি ও সন্তানদের নিয়ে ময়মনসিংহ নগরীর নজরুল সেনা স্কুল রোড এলাকায় বসবাস করেন।

জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলায় দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। এরপর ২০১৫ সালে বদলি হয়ে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন ময়মনসিংহের গৌরীপুরে। তিনি শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী উপজেলার রাণীশিমুল গ্রামের মো. জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে। স্বামী সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সানোয়ার রাসেল ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত।

জান্নাত ই হুর সেতু জানান, আমাদের বড় মেয়ের বয়স ৯ বছর, মেঝো মেয়ে ৫ বছর ও ছোট মেয়ের বয়স ১৮ মাস। বড় মেয়ের জন্মের পর আমার শাশুড়ি মা লালন পালন করতেন। এখন আরও দুজন বাচ্চা ছোট হওয়ায় বৃদ্ধ শাশুড়ি মা একা পেরে উঠেন না। আর এদিকে আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনই চাকরি করি। পেশাগত কারণে খুব ব্যস্ত সময় পার করতে হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অফিস করতে হয়।

আমার সন্তানরা বাবা-মায়ের স্নেহ মমতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ওদের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। নানান দিক চিন্তা করেই চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাছাড়া আমাদের জীবনে উচ্চাকাঙ্খা না থাকায় তেমন কোন চাহিদা নেই। তেমন আর্থিক সংকটও নেই। তাই চাকরি থেকে অবসর চাইছি। আমার এই সিদ্ধান্তে পরিবারের কোন প্রতিক্রিয়া নেই। আমার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়েছেন আমার স্বামী।

জান্নাত ই হুর সেতু আরও বলেন, আসলে আমাদের সমাজে অনেক নারীরা রয়েছেন যারা চাকরির পাশাপাশি সংসার ও সন্তান সামলাচ্ছেন। আমিও দশ বছর করেছি। কিন্তু আর পারছি না। এটা আমার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমার অবসরের সিদ্ধান্ত অন্য কোন কর্মজীবী মায়ের উপর প্রভাব পড়ুক সেটা আমি চাইনা।

ময়মনসিংহ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দিলীপ কুমার সাহা জানান, জান্নাত ই হুর সেতু গৌরিপুর উপজেলায় দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ব্যক্তিগত অসুবিধার কথা উল্লেখ করে স্বেচ্ছায় অবসর চেয়ে অধিদপ্তরে লিখিত আবেদন করেছেন। অধিদপ্তর তার আবেদন অনুমোদন করেছেন। এই সপ্তাহেই চিঠি পাওয়া যাবে।

 

Print Friendly

Related Posts