ফুল ভাসিয়ে উৎসবে মেতে উঠেছে পাহাড়

বিজয় ধর: উৎসবের নানা রঙে পাহাড়ে চলছে বৈসুক, সাংগ্রাই, বিজু, বিষু, বিহুর বর্ণিল আয়োজন। পাহাড়ের বৃহত্তম এই সামাজিক আয়োজনে এখন মুখর পার্বত্য জনপদ।

পানিতে ফুল ভাসিয়ে শুরু হয়েছে পাহাড়ের প্রধান সামাজিক উৎসব বৈ-সা-বি’র ধর্মীয় আচার। পাহাড়জুড়ে এখন উৎসবের আমেজ। নানান আয়োজনে মুখর পাহাড়ি শহর গ্রাম।

পানিতে ফুল ভাসিয়ে পুরনো দিনের বেদনা ভুলে নতুন দিনের প্রত্যয়ের কথা জানালেন পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষেরা। ফুল ভাসাতে আসা তরুণ-তরুণীদের একজন বললেন, বিগত দুটি বছর করোনার কারণে বৈসাবি উৎসব পালন করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু এবার মহাধুমধাম করে পালন করছি।

মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) সকালে ঘুম থেকে উঠেই ফুল সংগ্রহ করে ঘর সাজানোর কাজ করেছে রাঙামাটির চাকমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর মানুষ। ঘর সাজানো শেষে পানিতে ফুল ভাসিয়ে পুরনো বছরের দুঃখ বেদনাই যেনো ভাসিয়ে দিয়ে নতুন দিনের সম্ভাবনার আলো জ্বালালেন পাহাড়ের মানুষ।

রাঙামাটি শহরের রাজবন বিহার ঘাটে কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসাতে আসা চাকমা তরুণী নবনীতা জানান, বিজু মানে আনন্দ বিজু মানে ভালোবাসা, আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠা। আজকে হচ্ছে ফুল বিজু, ফুল বিজু হচ্ছে পবিত্র একটি দিন। পবিত্র দিনের সাথে সাথে মানুষের হৃদয়ও যাতে পবিত্র হয় ভগবানের কাছে এ প্রার্থণা করেছি।

এদিকে, রাজবন বিহার ঘাটে বৈসুক, সাংগ্রাই, বিজু, বিষু, বিহু উদযাপন কমিটির উদ্যোগে পানিতে ফুল ভাসানো অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করতে গিয়ে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, গত দুটি বছর করোনা মহামারির কারণে পাহাড়ে কোন উৎসব হয়নি।

তিনি বলেন, মানুষের এত উচ্ছাস, এত রং দেখে আমাদের অন্তরকে ছুঁয়ে গেছে। রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের সকলেই আমরা এ উৎসবে অংশগ্রহণ করেছি। সকলের মঙ্গল হোক, এই উৎসব আমাদের সবাইকে এক করেছে। বাংলাদেশের এই সৌন্দর্য এবং বৈচিত্রকে আমরা ধারণ এবং চর্চা করবো।

শহরের ত্রিপুরা পল্লী হিসেবে খ্যাত গর্জনতলীতে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীও কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসিয়ে বৈসুক উৎসবের শুভ সূচনা করেন।

পানিতে ফুল ভাসাতে গিয়ে শিয়াই ত্রিপুরা বলেন, চৈত্র সংক্রান্তিকে বিদায় দিয়ে গঙ্গা মাকে পূজা করি। এবং নতুন বছর যাতে আমাদের ভালো কাটে সেই প্রার্থণাই করলাম।

ডোজী ত্রিপুরা বলেন, হারি বৈসুকের দিনে কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসিয়ে সৃষ্টকর্তার কাছে প্রার্থণা করি পুরনো যত দু:খ গ্লানি রয়েছে সবকিছু ধুয়ে মুছে চলে যাক এই পৃথিবী থেকে।

আরেক তরুণী খইমই ত্রিপুরা বলেন, আজকের দিনে গঙ্গা মায়ের কাছে প্রার্থণা ছিল বাংলাদেশের এই সময়ে যত সাম্প্রদায়িক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে এগুলো যাতে আর না হয়।

আগামিকাল বুধবার উৎসবের প্রধান দিন, যা মূল বিজু নামেই পরিচিত। সেদিন দল বেঁধে বাড়ী বাড়ী বেড়াবে ছেলেবুড়ো সবাই। পাঁচন আর দোচোয়ানির স্বাদে মুগ্ধ পাহাড়ে উৎসবের আনন্দ ছড়িয়ে পড়বে সব সীমারেখা ছাড়িয়ে। আর বেজে উঠবে পাহাড়ি গানের সুর।

 

Print Friendly

Related Posts