দৈনিক ঢাকা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ইউনুস আর নেই

বিশিষ্ট সাংবাদিক, দৈনিক ঢাকা’র সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য শফিকুল ইসলাম ইউনুস আর নেই। মঙ্গলবার (৩১ মে) সন্ধ্যা ৬ টায় শ্বাসকষ্ট জনিত কারনে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজেউন।

বুধবার (১ জুন) সকাল ১১ টায় তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার দোলচাপুর গ্রামের পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হয় । মৃত্যুকালে তিনি এক স্ত্রী,আত্মীয় স্বজন ও বহুগুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

তিনি ৭৫ পরবর্তী সময়ে সাপ্তাহিক ঢাকা পত্রিকার সম্পাদক প্রকাশক হিসেবে সাংবাদিকতা শুরু করেন। সে সময়ে ওই সাপ্তাহিকীর নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন প্রখ্যাত কবি নির্মলেন্দু গুণ। পত্রিকাটির সাথে যুক্ত ছিলেন, সোহরাব হাসান,শাহ আলমগীর, ফজলুর রহমান, দীনেশ দাস। নিয়মিত লিখতেন জাফর ওয়াজেদ, আশিষ সৈকত,শাবান মাহমুদসহ অনেক তরুণ সাংবাদিক। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত সাহসী ভূমিকার কারণে পাঠক প্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করে সাপ্তাহিক ঢাকা। মতিঝিল জামান ম্যানসনের চিলে কোঠার একটি রুমে ছিল অফিস। ছাদে হতো আড্ডা। ৯০’র গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে তিনি দৈনিক ঢাকা নামে পত্রিকাটির প্রকাশনা শুরু করেন।

শফিকুল ইসলাম ইউনুস এর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোল্লা জালাল ।

প্রয়াত সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম ইউনুস এর ঘনিষ্ঠজন আতাতুর্ক কামাল পাশা বলেন, তিনি ছিলেন ঢাকা মহানগরীতে একজন সাংবাদিক নির্মাণের কারিগর।

তিনি জানান, মৃত্যুর আগে ঢাকায় মোহাম্মদপুরের চারতলা বাসার ছাদে গিয়ে হঠাৎকরে কিভাবে যেন নিচে পড়ে যান। প্রথম কয়েকদিন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসার পর গ্রামের বাড়ি নেত্রকোণায় নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। এরপর গ্রামের বাড়িতেই চিকিৎসা চলতে থাকে। এর ভেতর দু’একবার ঢাকায় আনা হয় চিকিৎসকদের দেখানোর জন্য। তারপর বাড়িতেই আত্মীয়দের তত্বাবধানে ছিলেন। গত দু’দিন আগে শরীর ভাল যাচ্ছিল না বলে আবারো মংমনসিংহ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।

তিনি জানান, ১৯৭৭ সালে জুলাই মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু তরুণ ও উদ্যোমী ছাত্র-ছাত্রী এক পাতার ট্যাবলয়েড সাইজের একটি সাহিত্য পত্রিকা বের করেন ঢাকা নামে। পরবর্তীতে পত্রিকাটির আকার বৃদ্ধি পেতে থাকে। সম্পাদক ইউনুস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর শেষ করে আশির দিকে ঢাকা পত্রিকাটি সাপ্তাহিক সংবাদপত্র হিসেবে বের করতে থাকেন। ৮ পৃষ্ঠার ট্যাবলেট আকারে সাপ্তাহিক সংবাদপত্রটি আজিমপুরের শাহসাহেব আলী মাজারের পাশের চালাঘর থেকে প্রকাশ হতে থাকে। ওখানেই কম্পোজ, তারপর প্রেসে নিয়ে গিয়ে ছাপানো হত।এ সময় তিনি (আতাতুর্ক কামাল পাশা) নিজেও সহকারী সম্পাদক হিসেবে তাঁর সাথে ছিলেন।

১৯৮৮ সালের দিকে সাপ্তাহিক ঢাকার কার্যালয় মতিঝিলে স্থানান্তরিত হয়। পরবর্তীতে ২০০৩ সালের দিকে ঢাকা পত্রিকাটি দৈনিক সংবাদপত্র হিসেবে বের হতে থাকে।

বুধবার নেত্রকোণা জেলায় তাঁর বাবার কবরের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয় সকাল দশটায়।

তিনি ১৯৫৫ সালে ১ জানুয়ারিতে ময়মনসিংহ জেলার নেত্রকোণা (তৎকালীন) মহকুমায় জন্মগ্রহণ করেন। স্ত্রী বর্তমানে ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসাতেই থাকেন।

Print Friendly

Related Posts