‘বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপেছিল পুরো শহর’

‘হাসপাতালে বসে আগুন জ্বলছে টেলিভিশনে দেখতেছি। হঠাৎ বড় বিস্ফোরণে আশেপাশের আকাশ আগুনের লেলিহানে কালো মেঘের মতো ছেয়ে যায়। যেন কালবৈশাখী ঝড় বজ্রসহ আঘাত হেনেছে। হাসপাতালে তখন শুধু শোকের ছায়া আর ছায়া কান্নার আওয়াজ। আহতদের আত্নীয়রা মাটি খামচে আহাজারি করেই যাচ্ছেন। কেমন যেন এক হ্নদয় বিদারক দৃশ্য। চট্টগ্রামের ইতিহাসে অতীতে কখনো এ ধরনের ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ঘটেনি।’ কথাগুলো বলছিলেন আগুনে নিহতের একজন স্বজন।

মেডিক্যাল পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) নুরুল আলম বলেছেন, ‘হতাহতদের মধ্যে ডিপোর শ্রমিকদের পাশাপাশি পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা রয়েছেন।’

বিস্ফোরণের ব্যাপারে স্থানীয়রাসহ অভিজ্ঞ মহল বিএম কন্টেইনার ডিপোর কর্তৃপক্ষের অব্যস্থাপনাকেই দায়ী করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফায়ার সায়েন্স বিভাগের এক ছাত্র বলেন, ‘ভাটিয়ারীর কনটেইনারগুলোতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ছিল। হাইলি কনসেনট্রেটেড H2O2 এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রিতে অক্সিডাইজার হিসেবে ব্যবহৃত হয়৷লাইক রকেট উৎক্ষেপনের জন্য থ্রাস্ট তৈরিতে। দুঃখের ব্যাপার বিএম টার্মিনাল অথরিটি বিষয়টা জানার পরও ফায়ার সার্ভিসকে হয়তো অবহিত করেনি। অথবা অবহিত করে থাকলেও ফায়ার সার্ভিসের ফাইটারদের ফায়ার সায়েন্স সম্পর্কে সম্যক নলেজ না থাকায় এমন হ্যাজার্ডাস ফায়ার পানি দিয়ে এত কাছে থেকে ফাইট করতে গিয়ে ছিলেন।’

শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘দরকার ছিল কুইক ইভাকুয়েশন। তারপর অন্য কোনো উপায়ে ফাইটিংটা হতো। (নলেজ সীমিত কারণ ফায়ার সায়েন্স পড়ে ছিলাম মাত্র ৩ ক্রেডিট) এ ধরনের বিস্ফোরণের শক ওয়েভে আশেপাশে অনেক ক্যাজুয়ালিটি ঘটার রিস্ক থাকে এবং সেটাই হয়েছে।’

সীতাকুণ্ড স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুরু উদ্দিন রাসেদ জানান, তাদেরসহ বিভিন্ন মালিকানাধীন অ্যাম্ব্যুালেন্স রেডি করে রাখা হয়েছে, যাতে আহত কোনো ব্যক্তি উদ্ধার হলেই তাড়াতাড়ি চমেক হাসপাতালে পাঠানো যায়।

এদিকে, বিস্ফোরণে নিহত ও আহতের ঘটনায় চমেক হাসপাতালে শত শত মানুষের ভিড় দেখা যায়।কেউ আত্মীয়স্বজনের খবর নিতে, কেউ রক্ত দিতে, কেউ দেখার জন্য এসেছেন। পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সদস্যরাসহ সবাই সারারাত রোগীদের সহযোগিতার জন্য চেষ্টা করছেন।

Print Friendly

Related Posts