শরীরেই শুকাচ্ছে কাপড়, সবই নিয়ে গেছে বন্যার পানি

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: ভারতের মেঘালয়, আসাম, চেরাপুঞ্জির বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে সুনামগঞ্জ। পানির স্রোতে অনেকেরই গরু-ছাগলসহ সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। জেলার অধিকাংশ মানুষের (এক তলা বাড়ি ওয়ালা) ঘরের সকল আসবাসপত্র পানিতে ভেসে গেছে।

শহরতলী ইকবালনগর এলাকার বাসিন্দা শাহেদা বগম। তার ঘরের কাপড় চোপড় থেকে শুরু করে সকল আসবাসপত্র বন্যার পানির স্রোতে চলে গেছে তার।

শাহেদা জানান, বন্যার পানিতে ঘরে গলা পানি। সন্তানদেরকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন দেকার হাওরপাড়ের অবস্থিত সুনামগঞ্জ পৌর কলেজ আশ্রয়কেন্দ্রে। গত ৬ দিন ধরে সন্তানদেরকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে আছেন। ৬ দিনের মধ্যে একদিনও ভাত খেতে পারেননি। মানুষের দেওয়া শুকনো খাবার খেয়ে আছেন। তবে ঘরের সবকিছু পানিতে ভেসে যাওয়ায় সন্তান আর নিজের পড়নের জামা-কাপড় ছাড়া আর কিছু ধরে রাখতে পারেননি।

শাহেদা বলেন, গত ৬ দিন ধরে এক কাপড়ে আছি। শরীরে ভেজা কাপড় শরীরে শুকায়। আবার কাপড় ভেজে। পড়নের কাপড় ছাড়া সব নিয়ে নিয়ে গেছে বন্যার পানিতে।

তিনি বলেন, পানিতে ঘরের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘরে থাকার মতো অবস্থা রইছে না। এখন নতুন করে ঘর বেঁধে আবার আসবাসপত্র কিনে সন্তানদেরকে নিয়ে থাকতে হবে। খুব কষ্টে আছি। কীভাবে কী করবো চিন্তা করতে পারছি না। নিজের ঘরে এখনো যেতে পারিনি। আশ্রয়কেন্দ্রে থেকে সন্তানদেরকে খাবার যোগাতে প্রতিদিন রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকি, কখন মানুষ ত্রাণ দিবে আর বাচ্চাদের মুখে খাবার দিবো। কোমর পানি ভিজে রাস্তায় থাকলে সন্তানদের জন্য খাবার সংগ্রহ করতে পারি, আর না বের হলে অনাহারে থাকতে হয়।

পানিবন্দি রজব আলী বলেন, সংসারে আমার পাঁচটা সন্তান। ঘর বন্যার পানিতে ভেঙে গেছে। থাকার জায়গাটা নাই। এখন আশ্রয়কেন্দ্রে আছি। পানিতে ঘরের সবকিছু ভেসে গেছে। মানুষের দেওয়া খাবার খেয়ে থাকতেছি। কিন্তু পানি কমে গেলে থাকার জায়গাটা নাই। গত শুক্রবার থেকে এক শার্ট আর এক লুঙ্গি পড়ে আছি। গোসলও করতে পারিনি। গোসল করলে বদলানোর কাপড় নাই। বন্যায় একেবারে নিঃস্ব করে দিলো। বন্যার হাত থেকে পরিবার ও নিজের জীবন ছাড়া আর কিছু রইলো না।

এরকম হাওরপাড়ের মনি আক্তার, রেহেনা, জমিরুন নেছাসহ শতাধিক নারীরাও বন্যা আসার পর থেকে এক কাপড়ে আছেন। তারা জানান, বন্যায় শুধু খাবার সংকটই নয়, জামা কাপড়ের অভাবে অনেকে কষ্টে আছেন। অনেকের শরীরে ভিজা কাপড় পড়তে পড়তে চুলকানি জাতীয় রোগ বালাই দেখা দিয়েছে। তাদেরকে চিকিৎসা সেবাও প্রয়োজন।

এদিকে পানিবন্দি মানুষের সহায়তায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিপি, কোস্টগার্ড ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো কাজ করছে। ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানালেন, স্মরণকালে ভয়াবহ বন্যার কবল থেকে কিছুই রেহাই পায়নি। সরকারি রেকর্ডরুম, দপ্তর, কোর্টকাচারি, খাদ্য গুদাম সবই প্লাবিত হয়েছে। চরম প্রতিকূলতার মাঝেও বিশেষ ব্যবস্থায় দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রাণালয়ের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে দুর্গত মানুষদের উদ্ধার করে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। জেলার ৪৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে এক লাখ ৬০ হাজারের বেশি মানুষকে নিয়ে আসা হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনায় ৬৭৫ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ৮০ লাখ বিতরণ করা হয়েছে। আমাদের হাতে আরও ৫০ লাখ টাকা মজুদ আছে, সেগুলোও দ্রুত বিতরণ করা হবে। সেইসাথে ১২ হাজার বস্তা শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে রান্না করা খাবার দেওয়া হয়েছে।

 

Print Friendly

Related Posts