নীতি সংলাপে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা
অন্ধত্ব এড়াতে এবং প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় করতে ডায়াবেটিস প্রতিরোধে বেশি মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
তারা ডায়াবেটিস এবং ব্যক্তি, পরিবার ও জাতীয় অর্থনীতিতে এ রোগের সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির পরামর্শ দেন এবং বলেন, বাংলাদেশ যে স্বাস্থ্য স্বাস্থ্য অবকাঠামো গড়ে তুলেছে সচেতনতা ছাড়া তা কাঙ্ক্ষিত ফলাফল দিবে না।
রোববার (২৬ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে “সমন্বিত ডায়াবেটিস মেলিটাস ও ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি সেবা: যাদের কাছে পৌঁছানো যায়নি, তাদের কাছে যাওয়া” শীর্ষক নীতিগত সংলাপে তারা এ পরামর্শ দেন।
বিএমসি হেলথ সার্ভিসেস’র বিভিন্ন গবেষণা প্রকাশনার উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির (বিএডিএএস) অধীনে পরিচালিত সেন্টার ফর গ্লোবাল হেলথ রিসার্চের প্রকল্প পরিচালক ড. বিশ্বজিৎ ভৌমিক বলেন, “সামগ্রিকভাবে, একজনের ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা গেলে বছরে ২৯৭ মার্কিন ডলার সাশ্রয় হতে পারে “
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চিকিৎসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ এইচ এম এনায়েত হোসেন বলেন, যেসব মানুষের কাছে এখনো পৌঁছেনো যাযনি তাদের কাছে সেবা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাগত বাধাসহ বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
তিনি চ্যালেঞ্জগুলো মাথায় রেখে স্বাস্থ্য কর্মসূচি গ্রহণের পরামর্শ দেন যাতে সেগুলো আরও কার্যকর হয় এবং কাঙ্খিত ফল পাওয়া যায়। অধ্যাপক এনায়েত ডায়াবেটিসকে আরও ভালোভাবে মোকাবেলার জন্য স্বাস্থ্য কর্মসূচিতে ডায়াবেটিসকে অন্তর্ভূক্ত করার ওপর জোর দেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক সংস্থা অরবিস ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ এ সংলাপের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, রোগ প্রতিরোধে যথাযথ মনোযোগ দিতে পারলে বাংলাদেশ বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।
বাংলাদেশ স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামোর উন্নয়নে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে – একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অবকাঠামোর পূর্ণ ব্যবহারে তৃণমূলের মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে যাওয়ার জন্য চিকিৎসক সম্প্রদায়কে নতুন পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আজাদ বলেন, “চিকিৎসকরা অভিযোগ করেন যে, মানুষ সেবা গ্রহণ করতে আসে না। এটা সত্য নয়। সমস্যা হলো আমরা (চিকিৎসকরা) জানি না কোন ভাষা ব্যবহার করলে তারা সেবা পেতে অনুপ্রাণিত হবে।”
অরবিস ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. মুনির আহমেদ সংলাপে সঞ্চালনা করেন। এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এনসিডিসি’র লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক রোবেদ আমিন এবং সিবিএইচসি’র লাইন ডিরেক্টর ডা. মাসুদ রেজা কবির, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মেডিকেল অফিসার (এনসিডি) সাধনা ভাগবত, অরবিস ইন্টারন্যাশনাল প্রজেক্ট ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম, ময়মনসিংহ ডা. কে জামান বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের সমন্বয়ক সাইফুজ্জামান পরাগ এবং বাংলাদেশ পোস্টের নির্বাহী সম্পাদক শিয়াবুর রহমান শিহাব। এছাড়াও ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ডা. মুনির আরও কার্যকর উপায়ে ডায়াবেটিস মোকাবেলায় অসংক্রামক রোগের সেবাগুলোর মধ্যে ডায়াবেটিস মেলিটাস এবং ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি সেবাগুলোকে অন্তর্ভূক্ত করার পরামর্শ দেন।
অধ্যাপক রোবেদ আমিন আরও ভালোভাবে সেবা দিতে সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের মধ্যে আরও ভালো সমন্বয় গড়ে তোলার ওপর জোর দেন। বেসরকারী সংস্থাগুলের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমাদেরকে ভুল বুঝবেন না যে আমরা আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে যাচ্ছি। একটি সমন্বিত উপায়ে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে আমরা আপনাদের প্রচেষ্টায় সাহায্য করতে চাই।”