ডমিনিকায় সমুদ্রযাত্রায় টাইগারদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতা

পাঁচ ঘণ্টার ভয়ংকর সমুদ্রযাত্রায় ভয়ে সিটিয়ে গিয়েছিলেন ক্রিকেটাররা। সেন্ট লুসিয়া থেকে ডমিনিকায় আসার পথে অসুস্থ হয়ে পড়েন বেশ কয়েজন ক্রিকেটার।

শরীফুল পলিথিনের ব্যাগে বমি করছেন। ডেকে শুয়ে আছেন নাসুম। খালি গায়ে বসে থাকা নুরুল হাসান সোহানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

আটলান্টিক মহাসাগরের ভয়ার্ত রূপ দেখে ফেরিতে সেন্ট লুসিয়া থেকে ডমিনিকায় যাওয়ার পথে অসুস্থ হয়ে পড়েন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। ৫/৬ ঘণ্টার সমুদ্রযাত্রা যে এমন ভয়ংকর হবে, মাহমুদউল্লাহদের জন্য তা ছিল কল্পনাতীত।

এ নিয়ে শুক্রবার নেটমাধ্যমে তোলপাড়। ঢাকায় প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে টি ২০ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহকে লজিস্টিক ম্যানেজার নাফিস ইকবালের উদ্দেশে বলতে শোনা গেছে, ‘এর দায় কে নেবে।’ নাফিসের উত্তর অস্পষ্ট।

ডমিনিকায় আজ (শনিবার) ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টি ২০। শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা ৩০ মিনিটে। কাল হাতে মাত্র একদিন সময় পাওয়া গেছে সমুদ্রযাত্রার বিভীষিকা কাটিয়ে ওঠার। সমুদ্রযাত্রা নিয়ে শুরু থেকেই দুশ্চিন্তায় ছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।

কেননা, এর আগে দীর্ঘ ৫/৬ ঘণ্টা সমুদ্রযাত্রার অভিজ্ঞতা ছিল না তাদের। তার ওপর দুদিন আগে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে সাইক্লোনের দরুন সমুদ্র ছিল উত্তাল।

এমন ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখে ক্রিকেটারদের ঠেলে দেওয়ার দায় বিসিবি এড়িয়েছে এই বলে যে, সময় স্বল্পতার জন্য বিমানযাত্রার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি।

সেন্ট লুসিয়া থেকে ডমিনিকার দূরত্ব ১৭৩ কিলোমিটার। আকাশপথে যাওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড অতিথিদের ফেরিতে তুলে দেয়। বিসিবির তাতে সম্মতি ছিল।

সেন্ট লুসিয়ার পার্ল এক্সপ্রেস থেকে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় যাত্রা শুরু করে ফেরি। গন্তব্য মার্তিনিকে হয়ে ডমিনিকা। ফেরি ছাড়ার পর ঠান্ডায় পেয়ে বসে ক্রিকেটারদের।

প্রথমে ডেকে সাবেক ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার আতহার আলীর সঙ্গে তাদের সেলফি তুলতে দেখা যায়। কিছুক্ষণ পর যাত্রা ভয়ংকর রূপ নেয়। উত্তাল ঢেউয়ের তোড়ে দুলছিল ফেরি।

ক্রিকেটাররা এমন পরিস্থিতিতে আগে কখনো পড়েননি। তাই ভয়ে তারা চুপসে যান। ডলফিন চ্যানেল অতিক্রমের সময় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে ওঠে। বড় বড় ঢেউয়ে ফেরি তখন দুলছে। এ সময় ‘মোশন সিকনেস’ অনুভূত হয় ক্রিকেটারদের।

ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হয় পেসার শরীফুল ইসলাম, কিপার-ব্যাটার নুরুল হাসান এবং টিম ম্যানেজার নাফিস ইকবালের। শরীফুল ও নাফিস কিছুক্ষণ পর ধকল কাটিয়ে উঠলেও নুরুল আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন।

তাকে বেশ কয়েকবার বমি করতে দেখা যায়। পরিস্থিতির ভয়াবহতা আঁচ করা যায় এক ক্রিকেটারের কথায়, ‘আমরাই এখানে অসুস্থ হয়ে মারা যেতে পারি। ওদের কিছুই হবে না।’ এই ‘ওরা’ যে বিসিবির কর্তাব্যক্তিরা, তা বুঝতে বাকি নেই কারোর।

দলের এক সিনিয়র ক্রিকেটার বলেন, ‘আমি অনেক দেশ সফর করেছি। তবে এ ধরনের অভিজ্ঞতা প্রথম হলো আমার। আমরা কেউ এমন অভিজ্ঞতায় অভ্যস্ত নই। খেলার কথা ভুলে যান। আমাদের কেউ যদি ফেরিতে অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখন কী হবে। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ সফর।’

এ ব্যাপারে বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দীন চৌধুরী বলেন, ‘ওরা ফেরিতে ভ্রমণ করার প্রস্তাব দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে আমরা রাজি হয়েছি, তা নয়।

ওরা যখন জানাল আর কোনো বিকল্প নেই, তখন তাদের (ব্যবস্থার) ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। ওই ফেরিতে প্রায় ২৫০ জনের বহর গেছে। কোভিডের কারণে বড় ফ্লাইট বন্ধ হয়ে গেছে ওখানে।

অনেক এয়ারলাইন্স বন্ধ হয়ে গেছে। ফ্লাইট কমে গেছে। বড় বিমান ভাড়া করা যাচ্ছে না। ওরা আমাদের জানিয়েছিল দুই দল একসঙ্গে যাবে, ম্যাচ অফিশিয়ালসহ সম্প্রচারের দায়িত্বে থাকা সবাই একসঙ্গে এভাবে ভ্রমণ করবে, তখন আমরা আপত্তি করিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভয় পাওয়ারই মতো বিষয়। আবহাওয়া খারাপ থাকার কারণে এমনটা হয়েছে। ফেরি ছাড়ার পর এমন আবহাওয়ায় কিছু করার ছিল না। তাছাড়া আমাদের অনেক খেলোয়াড় এ ধরনের ভ্রমণে অভ্যস্ত নয়। দলের ফিজিওর সঙ্গে কথা বলেছি। যে তিন-চারজন অসুস্থ হয়েছে তাদের অনেকেই সেরে উঠেছে। একটু বিশ্রাম নিলে ঠিক হয়ে যাবে। আসলে ভোরে যাত্রা শুরু করায় রাতের ঘুম না হওয়ায় একটু খারাপ লাগা কাজ করে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে খারাপ আবহাওয়া।’

তিনি যোগ করেন, ‘বিষয়টি জানার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে বলি, আমাদের খেলোয়াড়দের যেন (মধ্যবর্তী দ্বীপ) মার্তিনেকে নামিয়ে রাখা হয়।

সে জানায়, ওখানে রাখা যাবে না। ওটা ফ্রেঞ্চ উপনিবেশ। ওখানে নামতে হলে ফ্রান্সের ভিসা লাগবে। সেটা তোমাদের নেই। দল পৌঁছানোর পর আমাকে সে ভিডিও পাঠিয়ে জানায়, দল নিরাপদে পৌঁছেছে।’

আজ (শনিবার) ক্যারিবীয় দ্বীপে টি ২০ লড়াইয়ে নামবেন মাহমুদউল্লাহরা। ম্যাচ শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টায়, দেখা যাব টি স্পোর্টসে।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts