পশুর হাটে করোনা সতর্কতা জরুরী যে কারণে..

লে. কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমেদ 

কাল কোরবানির ঈদ । কোরবানির পশু কিনতে অনেকেই ব্যস্ত শেষ মুহূর্তে । এর পাশাপাশি খবর হচ্ছে প্রতিদিন করোনার আক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পশুহাটের অতিরিক্ত ভিড় ও জনসমাগম যাতে করোনা বিস্তারে সহায়ক ভূমিকা পালন না করে সেজন্য অবশ্যই সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
করোনাভাইরাস মূলত বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়। একজন আক্রান্ত মানুষ থেকে ছড়াতে পারে অসংখ্য মানুষের দেহে। হাঁচি-কাশি এমনকি সাধারণ কথাবার্তা, হাসি-ঠাট্টার সময় নিঃশ্বাসের বাতাস থেকে ছড়াতে পারে করোনাভাইরাস।
একজন মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় প্রতি মিনিটে ২০টি ভাইরাস ছড়াতে পারে। উচ্চস্বরে কথা বলার সময় তার চেয়ে দশ গুণ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। হাঁচি-কাশির সময় ভাইরাস নির্গমনের পরিমাণ সাংঘাতিক রকমের বেড়ে যায়। কাশির কারণে ২০ কোটি ভাইরাস বেরিয়ে আসতে পারে। হাঁচিতেও সমপরিমাণ ভাইরাস নির্গত হয় শ্বাসতন্ত্র থেকে। এই ভাইরাস কয়েক ঘণ্টা বাতাসে ভেসে বেড়াতে পারে। আর নাক দিয়ে এগুলো প্রবেশ করতে পারে মানুষের শ্বাসতন্ত্রে।
এ কারণেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে শুরু করে জনস্বাস্থ্য-সংক্রান্ত সব প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ভিড়, জনসমাগম এড়াতে বলা হচ্ছে কভিড-১৯ প্রতিরোধের জন্য। কোরবানির পশুর হাটে এসব এড়ানো আদৌ কি সম্ভব? মোটেও সম্ভব নয়। তবু বাধ্য হয়ে কেউ পশুর হাটে গেলে কিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।
অবশ্যই মাস্ক পরিধান করুন। প্রয়োজনে ডাবল মাস্ক পরিধান করুন। আমরা অনেক ক্ষেত্রেই মনের অজান্তেই কথাবার্তা বলার সময় নাকের ওপর থেকে মাস্ক সরিয়ে ফেলি। মনে রাখবেন এটি এক বিরাট ভুল। কেউ আবার নাক-মুখ খোলা রেখে থুতনির ওপর মাস্ক পরেন। মনে রাখবেন যথানিয়মে মাস্ক না পরা ভাইরাসকে নিজ দেহে আমন্ত্রণ জানানোর নামান্তর মাত্র। মাস্ক পরিধান করা, খুলে ফেলা এবং সংরক্ষণের যথাযথ নিয়ম রয়েছে। সেগুলো মেনে চলতে হবে।
হাটে গেলে আপনার সঙ্গী হোক স্যানিটাইজার। হাত ধৌত করার ব্যবস্থা থাকলে কিছুক্ষণ পরপর হাত ধুয়ে নিন। অন্যথায় স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। হাট থেকে বের হওয়ার সময় হাত জীবাণুমুক্ত করুন। বাসায় ঢুকে অন্যদের সঙ্গে মেলামেশার আগে সাবান মেখে গোসল সেরে ফেলুন।
ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন। তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখা স্বাস্থ্যসম্মত। দীর্ঘ সময় উচ্চ স্বরে দাম-দর না করে অল্প কথায় গরু-ছাগল কেনার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন যত কথা বলবেন ততই ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা বেড়ে যাবে।
শিশু, বৃদ্ধ, অসুস্থ ব্যক্তিদের নিয়ে হাটে যাবেন না। এরা করোনার সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে আছেন। যারা বুস্টার ডোজ সহ  ভ্যাকসিন নিয়েছেন এবং সক্ষম- এমন ব্যক্তিরা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাটে যাবেন। যারা করোনার উপসর্গে ভুগছেন তারা হাটে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
এই মহামারীকালে অনলাইনে কোরবানির পশুর কেনার সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন, যা আপনাকে করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে নিরাপদ রাখবে। আসুন আমরা সচেতন হই। করোনা বিস্তার রোধে সবাই হই অতন্দ্র প্রহরী। মনে রাখতে হবে আপনার সচেতনতাই হবে আপনার পরিবারের সুরক্ষা।
লেখক: মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডােক্রাইনােলজিস্ট, সিএমএইচ।
চেম্বার :আল রাজি হাসপাতাল( ২ য় তলা) ফার্মগেট, ঢাকা। মোবাইলঃ ০১৭৫৬১৭৩৭৬৫, ০১৭২৬০৫০৯১২
Print Friendly

Related Posts