ডা. এম এম রহমান
প্রতি বছর কোরবানীর সময় চিকিৎসক এবং ডায়েটিশিয়ানদের কম বেশী একটি প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়; আমার হৃদরোগ আছে, আমি কি কোরবানীর গোস্ত খেতে পারব?
হৃদরোগ হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ চর্বিযুক্ত খাদ্য । গোস্তের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে চর্বি থাকে বিধায় হৃদরোগীদের গোস্ত খেতে নিষেধ করা হয় । যদি এক কথায় বলে দেয়া হয়; আপনি হৃদরোগে ভুগছেন, আপনি কোরবানিতে গোস্ত খেতে পারবেন না তবে তা অনেকের জন্য মনঃপীড়ার কারণ হবে । আবার যদি বলা হয়; হ্যাঁ, আপনি গোস্ত খেতে পারবেন, তাহলে তা সত্যের অপলাপ হবে ।
তবে কোন প্রকারে গোস্তের চর্বি সরিয়ে দিতে পারলে হৃদরোগীদের গোস্ত খেতে আপত্তি থাকার কারণ নেই ।
গোস্ত রান্নার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম কানুন মেনে রান্না করা হলে সীমিত পরিমাণে (কিডনীর কার্যকারিতা স্বাভাবিক থাকলে) গোস্ত খাওয়া যেতে পারে:-
রান্নার জন্য গোস্তের চর্বিবিহীন অংশ (Lean meat) বাছাই করে নিতে হবে. দৃশ্যমান চর্বি কেটে বাদ দিতে হবে । এরপর-
ক) নির্বাচিত গোস্তের মধ্যে প্রয়োজনীয় মসলাদি মেখে আগে থেকে রেখে দিতে হবে । পরে ননস্টিক ফ্রাইপ্যানে ভালোভাবে সেঁকে রান্না করে নিতে হবে । সাথে কিছু সবজি যেমন- গাজর, ব্রকলি, টমেটো, পেঁয়াজ ইত্যাদিও রাখতে পারেন. এতে করে প্রোটিনের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ফাইবার, ভিটামিন ও মিনারেলস পাওয়া যাবে ।
খ) বাছাইকৃত গোস্তে প্রয়োজনীয় সব মসলা মেখে তারপর গ্রীল করে সেই গোস্ত খাওয়া যেতে পারে ।
গ) প্রথমে গোস্তকে আগুনে ঝলসে নিতে হবে; এতে করে গোস্তের চর্বি ঝরে পড়ে যাবে । এরপর প্রয়োজনীয় মসলা দিয়ে মাখিয়ে মাইক্রোওভেনে গোস্ত রান্না করে খাওয়া যেতে পারে ।
ঘ) একটি গরম পানি ভর্তি পাতিলের উপর ছিদ্রযুক্ত পাত্র বসিয়ে তাতে গোস্ত দিয়ে বাষ্পের (steam) মাধ্যমে সিদ্ধ করে নিতে হবে । তারপর প্রয়োজনীয় মসলা দিয়ে মাখিয়ে গোস্ত রান্না করে খাওয়া যেতে পারে ।
ঙ) গোস্তকে গরম পানিতে সিদ্ধ করে গরম অবস্থায় পানি ছেঁকে ফেলে দিতে হবে । এরপর প্রয়োজনীয় মসলা দিয়ে মাখিয়ে গোস্ত রান্না করে খাওয়া যেতে পারে ।
উপরোক্ত যেকোন পদ্ধতিতে রান্না করার পরও যদি তেল-চর্বি পরিলক্ষিত হয় কয়েকটি উপায়ে তা দূর করা যেতে পারে-
ক) চামচ দিয়ে তেল-চর্বি উঠিয়ে ফেলা ।
খ) বরফের টুকরো দিয়ে তেল-চর্বি উঠিয়ে ফেলা ।
গ) দৃশ্যমান তেল-চর্বি পাউরুটির টুকরো দিয়ে সরিয়ে ফেলা যায় ।
ঘ) রান্না করার পর এক রাত ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে উপরে জমে থাকা তেল-চর্বি সরিয়ে ফেলা যায়।
তাছাড়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ভালো থাকুন।ঈদ হোক হ্রদ রোগীদের দুঃচিন্তা মুক্ত।
লেখকঃ হার্ট স্পেশালিষ্ট, সিইও ও চীফ কনসালটেন্ট, মাতৃভূমি হার্ট কেয়ার লিমিটেড ।
১,১/১ রুপায়ন তাজ, (৬ তলা), কালভার্ট রোড, নয়া পল্টন, ঢাকা।
০১৩২৪৭৩০৫১০-১৩ info@mhclbd.com