ভক্তের স্ত্রী উদ্ধার, খেতা বাবা হাওয়া

ভক্তের স্ত্রীকে নিয়ে উধাও হওয়া সেই খেতা শাহকে গ্রেপ্তার করতে না পারলেও ভক্তের স্ত্রীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। গাজীপুরের জয়দেবপুর এলাকার একটি বাড়ি থেকে সোমবার রাত ১২টার দিকে রাবেয়া খাতুন নামের ওই নারীকে উদ্ধার করা হয়।

তারাকান্দা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. মালেক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘সংবাদের ভিত্তিতে জয়দেবপুর এলাকার একটি বাড়ি থেকে রাবেয়াকে উদ্ধার করা হয়।

এ সময় খেতা শাহ সেখানে ছিলেন না। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ’

নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার হীরণপুর গ্রামের কথিত আধ্যাত্মিক ফকির ফজলুল হক তালুকদার ওরফে খেতা শাহর (৬০) সঙ্গে পরিচয় হয় তারাকান্দার শফিকুলের। দেড় মাস আগে ওই ফকির এসে তার ভক্তের বাড়িতে আশ্রয় নেন। শরীরে একাধিক কাঁথা রাখায় এলাকার সবাই তাকে ‘খেতা বাবা’ বলে ডাকে।

গত ২২ জুন দুপুরের দিকে ভক্তের স্ত্রী রাবেয়া খাতুন (৩৩) ফকির খেতা শাহকে সঙ্গে নিয়ে ধোবাউড়া উপজেলার গোয়াতলায় বাপের বাড়িতে বেড়াতে যান। সেখান থেকে বের হয়ে তারা আর বাড়িতে ফেরেননি। পরে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তাদের আর কোনো খোঁজখবর পাওয়া যায়নি।

পরে এ ঘটনায় ভক্ত শফিকুল থানায় অভিযোগ করেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, যাওয়ার সময় তারা শফিকুল ইসলামের ঘর থেকে গরু বিক্রি করার ৯০ হাজার টাকা নিয়ে যান। এ ব্যাপার নিয়ে তিনি এলাকার জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের দ্বারস্থ হয়েও কোনো সমাধান পাননি।

তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের বলেন, ‘৯ দিন পর ভিকটিমকে সোমবার গাজীপুর জয়দেবপুর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আসামি খেতা শাহ পলাতক রয়েছে। তাকেও গ্রেপ্তার করার জন্য চেষ্টা চলছে। ভিকটিমকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বিকেলে তাকে ময়মনসিংহ মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে পাঠানো হবে। ’

 

কে এই  খেতা বাবা?

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তার আসল নাম ফজলুল হক তালুকদার। ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষায় কাঁথাকে বলা হয় খেতা। খেতা শাহ নামের এক ব্যক্তি জেলার তারাকান্দার টিকুরী এলাকায় সব সময় ছেঁড়া কাঁথা শরীরে জড়িয়ে রাখতেন। তিনি যা বলতেন তাই হতো―এমন বিশ্বাসে অনেক লোক তার ভক্ত হয়ে যান।

বৃদ্ধ বয়সে মারা যান সেই ব্যক্তি। কিন্তু থেকে যান ভক্তরা। একপর্যায়ে নির্মাণ করা হয় মাজার। নামকরণ হয় ‘খেতা ছিঁড়ার মাজার’। প্রতিবছর পালন করা হয় ওরস। এবারও চার মাস আগে ওরস শুরু হয়। বরাবরের মতো এবারও হাজারও ভক্তসহ লোকজন আসে মনের বাসনা পূরণ করার আশায়।

ওই মাজারে পাগলবেশে ফজলুল হক তালুকদার নামের একজন আসেন। ৬০ বছর বয়সী ফজলুলের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার পাইলাটি গ্রামে। বড় দাড়ি, লম্বা গোঁফ ও ছেঁড়া কাঁথা গায়ে জড়িয়ে সারাক্ষণ মাজারে বসে সময় কাটাতেন। কেউ নাম জিজ্ঞেস করলে মাজারের নামের সঙ্গে নাম মিলিয়ে নিজেকে ‘খেতা শাহ’ হিসেবে পরিচয় দিতেন৷

ফজলুল কতগুলো পদ্ধতি অবলম্বন করতেন। যেমন আধ্যাত্মিক ফকির হিসেবে সবার কাছে নিজেকে বোঝানোর জন্য পরিচিতি পেতে কথাও বলতেন খুব কম। এভাবে গ্রামের সাধারণ মানুষের বিশ্বাস অর্জন করেন তিনি। তাকে বাবা ডেকে অনেকে মনের বাসনা পূরণ করতে দোয়া চেয়ে নিতেন। যারা তার কাছে আসতেন, তাদের অনেককে মাথায় হাত বুলিয়ে ঝাড়ফুঁক দিতেন। এভাবে কয়েক দিনেই তার ভক্তের সংখ্যা বেড়ে যায়।

আধ্যাত্মিক ফকির ভেবে খেতা শাহর ভক্ত হয়ে যান শফিকুলও। দেড় মাস আগে ওই ফকির এসে তার ভক্ত শফিকুলের বাড়িতে আশ্রয় নেন। ভক্ত শফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী মিলে গুরু ফকির খেতা শাহকে ভালোমন্দ খাওয়াতে থাকেন।

Print Friendly

Related Posts