ভৈরবে নার্সের লাশ উদ্ধার ঘটনায় হাসপাতালের এমডি আটক

কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার পৌর শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে সোমবার সকালে রিমা প্রামাণিক (১৮) নামের নার্সের লাশ হাসপাতালের কেবিন থেকে বৈদ্যুতিক পাখার সঙ্গে ঝুলে থাকা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

এ নার্সের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হানিফুর রহমানকে আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১২ জুলাই) ভোরে পুলিশ তাকে আটক করে।

রিমা প্রমাণিক নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার পিরিজকান্দি গ্রামের সেন্টু প্রমাণিকের মেয়ে। হাসপাতালটিতে দুই বছর ধরে নার্স হিসেবে কর্মরত ছিলেন রিমা। তিনি ভৈরব বাসস্ট্যান্ড এলাকা ওই হাসপাতালের পঞ্চম তলায় স্টাফ কোয়ার্টারে থাকতেন।

রিমার লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি ও উদ্ধারে নেতৃত্ব দেন ভৈরব থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রফিক। এমডি হানিফুর রহমানকে আটকের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আত্মহত্যার আগে এমডির সঙ্গে রিমার কথা হয়েছে। আমাদের মনে হয়েছে, দুর্ঘটনার স্পষ্ট ধারণা পেতে এমডির সঙ্গে কথা বলা দরকার। এ কারণেই তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়।’

পুলিশি হেফাজতে এমডি হানিফুর রহমান বলেন, ‘রিমা পুলিশে চাকরি করতে চেয়েছিলেন। চাকরি ছেড়ে দেওয়ার জন্য পদত্যাগপত্রও জমা দেন। কিন্তু আমি সেটি গ্রহণ করিনি। আমি এই পর্যন্তই জানি।’

ইউনাইটেড হাসপাতালের এমডি হানিফুর রহমান

পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুরোধে গত শুক্রবার কর্মস্থলে ফেরেন তিনি। ফিরেই এমডির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। কিন্তু এমডি সেটি গ্রহণ করেননি। শুক্রবার রাতে রিমা হাসপাতালে কর্তব্য পালন করেন। রাত তিনটার দিকে নার্স ইনচার্জ লিজা বেগমের মাধ্যমে মুঠোফোনে এমডির সঙ্গে কথা বলেন রিমা। তখন জানান, সকালে তিনি বাড়ি ফিরে যেতে চান।

এরপর রাত চারটার দিকে ২০৩ নম্বর কেবিনে বৈদ্যুতিক পাখার সঙ্গে তাঁকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। এ সময় সহকর্মীরা তাঁকে নামিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু এর আগেই রিমার মৃত্যু হয়।

রিমার মা বিত্রিতা পাল মেয়েকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে আত্মহত্যা করতে পারে না। মেয়েকে হারিয়েছি। কিন্তু হাসপাতালের লোকজন আমাকে কাঁদতেও দেয়নি। তারা আমার কান্না থামিয়ে দিয়েছে।’

রিমা প্রামাণিকের বাবা সেন্টু প্রামাণিক বলেন, তার মেয়ের আত্মহত্যা করার মতো কোনো কারণ আছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন না। তিনি বলেন, ‘ঈদের আগে তিন দিন বাড়িতে থেকে এল। আমার মেয়ের মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখতে পাইনি। ধারণা করতে পারি, এমন কিছুও আমাদের বলেনি।’

 

Print Friendly

Related Posts