ফেসবুকে প্রেম, মার্কিন তরুণী লিডিয়া এথন বাংলাদেশি বউ

ইমরান খান ও লিডিয়া লুজা। ইমরান বাংলাদেশি ও লিডিয়া যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) পরিচয় তাদের। এরপর একে-অপরকে ভালোলাগা-ভালোবাসা।

প্রথমে লিডিয়াই তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। উভয় পরিবারের সিদ্ধান্তে গত মার্চে নেপালে বিয়ে হয় তাদের। এর আগে খ্রিস্টান ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করেন লিডিয়া। বিয়ের কয়েকদিন পর লিডিয়া চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে, ইমরানও দেশে চলে আসেন।

বিয়ের প্রায় চার মাস পর গত রবিবার দিবাগত রাত তিনটায় হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে এসে পোঁছান লিডিয়া। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান ইমরানসহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা। প্রেমের টানে ভিনদেশি তরুণীর আগমণে ইমরান খানের গ্রাম গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমীর কুমারভিটাজুড়ে এখন উৎসবের আবহ।

ইমরান খান (২৮) ওই গ্রামের মৃত জালাল উদ্দিন মাস্টারের ছেলে। ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি। লিডিয়া লুজা (৩১) আমেরিকার আরিজোনা রাজ্যের বাসিন্দা। কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চাকরি করতেন তিনি। তাঁরও বাবা নেই। মা আরেকজনকে বিয়ে করে সংসার পেতেছেন। দুই ভাইয়ের একমাত্র বোন তিনি। দাদার সঙ্গে থেকে বড় হয়েছেন।

ইমরান খান জানান, গত ২৮ জানুয়ারি ফেসবুকে লিডিয়া লুজার আইডি থেকে ফ্রেণ্ড রিকোয়েস্ট আসে। তা গ্রহণ করে ফেসবুক মেসেঞ্জারে কথা বলা শুরু। প্রথমে বন্ধুতা, পরে তা ভালোলাগা-ভালোবাসায় রূপ নেয়।

লিডিয়া লুজা জানান, ফেসবুকে পরিচয়ের একপর্যায়ে ইমরানকে তাঁর দারুণ ভালো লাগে। এরপর তিনিই তাঁকে প্রেমের প্রস্তাব দেন। কিছুদিন পর বিয়ে করতে চান বলেও জানান তাঁকে। ইমরানও তাতে সাড়া দেন। পরে তিনি খ্রিস্টান ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন।

গত মার্চ মাসে তুরস্ক হয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন লিডিয়া। তার ধারণা ছিল, ভিসা ছাড়াই (অন অ্যারাইভাল ভিসা) বাংলাদেশে আসতে পারবেন। কিন্তু বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তাঁকে ফেরত পাঠিয়ে দেয়।

পরে উভয় পরিবারের সিদ্ধান্তে তারা নেপালে মিলিত হন। সেখানেই একটি মসজিদে লিডিয়া ইসলাম গ্রহণ করে বিয়ে করেন তাকে। ইমরানের সঙ্গে তখন তার এক আত্মীয় (ভাগনি জামাই) উপস্থিত থাকলেও লিডিয়ার সঙ্গে কেউ ছিল না। বিয়ের কয়েকদিন পর নিজ নিজ দেশে ফিরে যান তারা। পরে বাংলাদেশের ভিসার জন্য আবেদন করেন লিডিয়া।

লিডিয়া জানান, বাংলাদেশের মানুষ সহজ-সরল। যতটুকু ঘুরে দেখেছেন, সবই ভালো লেগেছে তার। তবে বাংলা ভাষা না জানার কারণে সবার সঙ্গে ভাব বিনিময় করতে পারছেন না। এবার বাংলা ভাষা শিখতে চান তিনি।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে লিডিয়া জানান, তার শাশুড়ি এখন অসুস্থ। তিনি সুস্থ হয়ে ওঠলে ইমরানকে নিয়ে আমেরিকা চলে যাবেন।

ভিন্ন সংস্কৃতি আর ভিন্নভাষীই নয়, ১৩ হাজার ১৯৮ কিলোমিটার দূর থেকে আসা তরুণীকে পুত্রবধূ হিসেবে পেয়ে প্রতিক্রিয়ায় ইমরান খানের মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমি অনেক খুশি হইছি। বাড়িতে এসেই মা বলে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে মেয়েটা (লিডিয়া)। আমার ছেলে আর ছেলের বউ সারা জীবন সুখে থাক-আমি দোয়া করি। ’

Print Friendly

Related Posts