ডোবার পানিতে ছুটে বেড়াচ্ছে পুঁটি টেংরা কৈ মাগুর

মোসলেম উদ্দিন: এখন বর্ষাকাল। এসময়ে দিনাজপুর জেলায় শুরু হয়েছে আমন ধান চাষ। কৃষকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন দোগাছি করার জন্য। কিন্তু কয়েক দিনের প্রচণ্ড খরতাপে ধানের জমিতে বর্ষার পানি শুকিয়ে গেছে। বিপাকে পড়েছে আমন চাষিরা।

তবে বিভিন্ন ধানাজমি ও ডোবায় জমে থাকা পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন প্রকারের দেশি মাছ। আর ভেসে বেড়ানো মাছ ধরতে উঠেপড়ে লেগেছে কৃষাণ-কৃষাণীরা।

বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) এমন দৃশ্য চোখে পড়লো হিলির ধরন্দা গ্রামের উত্তর এলাকার আমন ধান ক্ষেতে। দেখা যায়, আমন ধানের চারা লাগানোর জন্য কৃষক জমিতে পানি পাচ্ছে না। বর্ষার পানি প্রায় জমিতে নেই, কিছু জমি আর ডোবায় অবশিষ্ট আছে পানি। সেই আমন চাষের জন্য অপ্রতুল। তবে যেসব জমি বা ডোবায় বর্ষার অল্প পানি আছে তাতেই মিলছে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ পুঁটি, টেংরা, কৈ, মাগুর, শাটি, খোলসা, ডারকা ও মইয়া ঢেলা মাছ। গ্রামের স্থানীয় লোকজন এসব স্থানে মাছ ধরতে মেতে উঠেছে।

গত বর্ষার পানিতে ডিম ছেড়েছিলো আমন ক্ষেতসহ বিভিন্ন ডোবায় এসব মাছ। বর্ষা শেষে, পানি শুকিয়ে গেলে মাছের ডিম সুপ্ত অবস্থায় কাদার ভিতর লুকিয়ে ছিলো। চলতি বর্ষা মৌসুমে এই সব মাটিতে থাকা ডিমগুলো পানি পেয়ে আবারও জেগে ওঠে এবং ডিম থেকে মাছ পোনা ছেড়েছে। অল্প দিনেই পোনা মাছগুলো বড় হতে শুরু করেছে। বর্তমান এসব ধানাজমি ও ডোবার পানি প্রচণ্ড তাপ গরমে শুকাতে শুরু করেছে। আর পানিতে থাকা ঐসব মাছগুলো ভেসে বেড়াচ্ছে। তখন বিভিন্ন রকম ডালা, কুলা আর হাত দিয়ে মাছ ধরতে ব্যস্ত হয়ে উঠে কৃষকসহ গ্রামের ছেলে-মেয়েরা।

বলা যায়, এটি একটি গ্রাম-বাংলার পুরনো ঐতিহ্যের দৃশ্য। আজও বর্ষাকালে মাঠে-ঘাটে চোখে পড়ে এই দৃশ্য।

হিলি ধরন্দা গ্রামের ওয়াসিম হোসেন বলেন, বর্ষাকাল আসলেই আমি ডোবা, নালা, খাল বিল আর ধানের ক্ষেতে মাছ ধরে থাকি। এটি আমার ছোট বেলার অভ্যাস।

এসএসসি পরীক্ষার্থী বাবু বলে, বাড়িতে মা জানে না আমি মাছ ধরতে আসছি। জানলে অনেক বকা দেবে। তবে অনেকগুলো মাছ ধরেছি, তা দেখে মা আর গালাগালি করবে না।

একজন কৃষক বলেন- আমন ধান চাষ করবো, দোগাছি লাগিয়েছি। তবে বর্তমান বর্ষার পানি প্রায় জমিতে নেই। চারা লাগাবো পানি নেই। তবে আশেপাশের ডোবার পানি রোদে শুকিয়ে যাচ্ছে। এসব ডোবায় প্রচুর দেশি মাছ পাওয়া যাচ্ছে। হাত দিয়ে এসব মাছ ধরছি। সকাল থেকে প্রায় দুই কেজির মতো বিভিন্ন জাতে দেশি মাছ পাইছি।

কিশোর সাদেক আলী বলেন, ছোট বোনকে রাস্তায় বসিয়ে রেখেছি, মাছ ধরছি আর ওর কাছে রেখে আসছি। ডালা, কুলা নাই তো, তাই হাত দিয়ে মাছ ধরছি। মইয়া, ডারকা আর পুঁটি মাছ অনেকগুলা ধরেছি। আমরা গরীব মানুষ, এসব মাছ রাস্তা থেকেই মানুষ কিনে নিয়ে যায়। ছোট মাছগুলো ১০০ টাকা কেজি বিক্রি করছি, আর বড় মাছ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি বিক্রি করছি।

Print Friendly

Related Posts