রোদ ও খরতাপে পুড়ছে পাটের ক্ষেত

মহাসিন আলী: খরার কারণে পাট নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মেহেরপুরের চাষিরা। শ্রাবণ মাসের প্রথম সপ্তাহতেও মেহেরপুরে বৃষ্টির দেখা নেই। মাঠের পাট গাছ পুড়ে যাচ্ছে। বাড়তি খরচ করে পানি সেচ দিয়েও পাট গাছের চেহারা ফিরছে না। পাটের পাশাপাশি মৌসুমী ফসল নিয়েও বিপাকে পড়েছেন জেলার চাষিরা।

মেহেরপুর পাট উৎপাদনের জেলা হিসেবে খ্যাত। পাটের ফলন ও দাম পাওয়ার উপর ভাগ্য বদলায় এ জেলার চাষিদের। বৈরি আবহাওয়ার কারণে এবছর জেলার কৃষকদের মাথায় হাত উঠেছে। লাভের মুখ দেখা হবেনা জেনেও খরচ তুলতে তারা এখনও বৃষ্টির পানির দিকে তাকিয়ে। আর ১৫ দিন পরে পুরোদমে পাট কাটা শুরু হবে। এতদিনে চাষিরা পাট ক্ষেতে সেচ দিয়ে এসেছেন। আর কত? এখন তারা পাট কেটে কোথায় কিভাবে পাট জাগ দেবেন, তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।  তাদের সব আশা ফুরিয়ে যেতে বসেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের হিসেব মতে, এবছর জেলায় ২১ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ২৫০ হেক্টর বেশি। এবছর পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবার কথা।

কৃষি বিভাগ জানায়, বৃষ্টির অভাবে শুধু ক্ষেতের পাটই পুড়ছে না- ক্ষেতের চিচিংগা, পুঁইশাক, পটল, ঢেঁড়স, পেঁপেসহ মৌসুমী ফসল পুড়ছে। বর্তমান সময়ে ক্ষেতের ফসল নিয়ে চাষিদের পাশাপাশি কৃষি বিভাগও উদ্বিগ্ন।

জেলার মুজিবনগর উপজেলার মানিকনগর গ্রামের পাটচাষি শেখ শফিউদ্দিন বলেন- বৃষ্টির অভাবে ক্ষেতের পাট পুড়ে যাচ্ছে। পাটে পোকা লেগেছে। জমিতে সেচ ও কীটনাশক দিয়েও কোন লাভ হচ্ছেনা। এদিকে পানির অভাবে পাট জাগ দেওয়াও সমস্যা। ভৈরব ও স্রস্বতী খালসহ জেলার নদ-নদীগুলোতে পাট জাগ দিতে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় পাট নিয়ে জেলার পাটচাষিদের মাথায় হাত উঠেছে।

মেহেরপুর সদর উপজেলার দীঘিরপাড়া গ্রামের পাটচাষি আকছার আলী জানালেন, বৃষ্টির অভাবে এবছর রেকর্ড পরিমান সেচ দিতে হচ্ছে। পাট ক্ষেতে সপ্তাহে একবার সেচ দিতে হচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে সপ্তাহে দু’বারও সেচ দিতে হচ্ছে। গত ৫ সপ্তাহে এ জেলার চাষিদের পাট ক্ষেতে পানি সেচ দিতে কি পরিমান খরচ করতে হয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। এরপরও পানি সেচ দিয়ে যদি পাট জাগ দিতে হয় তবে জেলার কৃষকরা কয়েক বছরের জন্য পিছিয়ে পড়বে।

গাংনী উপজেলার গাড়াডোব গ্রামের মকবুল হোসেন বলেন- বৈশাখ মাসে পাট ক্ষেতে ৪ বার সেচ দিয়েছেন। আর পোকা দমনে ২ বার কীটনাশক প্রয়োগ করেছেন।

তিনি বলেন, নিজের স্যালো মেশিন দিয়েও প্রতিবিঘা জমিতে একবার পানি সেচ দিতে খরচ হয় ৪শ টাকা। আর অন্যের স্যালো মেশিন দিয়ে প্রতি বিঘা জমিতে একবার সেচ দিতে ৫শ থেকে ৬শ টাকা খরচ করতে হয়। এছাড়া এক বিঘা জমিতে একবার কীটনাশক প্রয়োগ করতে খরচ হয় প্রায় ৫শ টাকা। চাষিরা একবার ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাদের উঠে দাঁড়াতে বেগ পেতে হবে মনে করেন তিনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মো. সামছুল আলম বলেন, বৃষ্টির অভাব এ মৌসুমের পাটচাষিদের কান্নার কারণ হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির অভাবে ক্ষেতে সেচ আর সার-বিষ দিতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। এদিকে পাট কাটা শুরু হলেও পানির অভাবে পাট পচানো যাচ্ছে না। এ মুহূর্তে ভৈরবসহ জেলার বিভিন্ন নদ-নদীতে পাট জাগ দেওয়া নিষেধ। তাই খরচ বেশি হলেও রিবন পদ্ধতিতে পাট জাগ দিতে হবে। অন্যথায় মাঠ কিংবা গ্রামের ছোট ছোট ডোবা বা পুকুরে পানি সেচ দিয়ে পাট জাগ দিতে হবে। এতে করে অন্ততঃ ক্ষতির হাত থেকে কিছুটা হলেও বাঁচবে কৃষক। তারপরও তিনি আশাবাদি অল্পদিনের মধ্যে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

Print Friendly

Related Posts