প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজ বোনকে জবাই!

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার আঙ্গারু গ্রামের বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নারজু খাতুন (২৮) হত্যাকাণ্ডের দেড় বছর পর হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করেছে সিআইডি।

প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যেই নারজুর বড় ভাই আতাহার সরদার ও তার স্বজনরা নারজুকে গলা কেটে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছেন সিরাজগঞ্জের সিআইডি ইন্সপেক্টর মো.ওহেদুজ্জামান।

বুধবার (২০ জুলাই) রাতে সিআইডি কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে মো.ওহেদুজ্জামান জানান, শাহজাদপুরের আঙ্গারু গ্রামের আতাহার হোসেনের ছেলে সবুজ বাদী হয়ে তার ফুফু নারজু খাতুনকে গলাকেটে হত্যা করা হয়েছে মর্মে শাহজাদপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় তাদের প্রতিপক্ষকে আসামি করেন। এতে উল্লেখ করেন, ২০২০ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাত ১০ টা থেকে পরদিন বিকেল ৫ টার মধ্যে প্রতিপক্ষের লোকজন তার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ফুফুকে ডেকে নিয়ে গলা কেটে হত্যা করেছে।

থানা পুলিশ তদন্তের একপর্যায়ে মামলাটি সিআইডির উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ স্ব-উদ্যোগে তদন্ত শুরু করে। প্রাথমিক তদন্তে সিআইডি জানতে পারে, মামলার বাদীপক্ষ এবং আসামিপক্ষ একই এলাকার বাসিন্দা। ধোলাই নদীর জলকরসহ নানা বিষয় নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিলো। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর সকালে এলাকায় দুপক্ষের সমন্বয়ে শালিস বৈঠক বসে। বৈঠকে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে মামলার বাদী সবুজ ও তার বাবা আতাহারসহ তাদের পক্ষের লোকজন আব্দুল আওয়াল নামে একজনকে মারপিট করে হত্যা করে। এ ঘটনায় শাহজাদপুর থানায় সবুজ ও তার পিতাসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।

বিষয়গুলো মাথায় নিয়ে সিআইডি গভীরভাবে তদন্ত শুরু করে এবং মামলার সন্দেহভাজন আসামি সরোয়ার হোসেন সনজু নামে একজন আটক করে। পরে সনজুকে আদালতে সোপর্দ করলে আসামি সনজু আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেন।

জবানবন্দিতে আসামি সরোয়ার হোসেন সনজু উল্লেখ করেন, আওয়াল হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ালের স্বজনরা তাদের ঘরবাড়ি ভাংচুর, গরু, ছাগল ও মালামাল লুট করে নেয়। ভয়ে তারা দীর্ঘদিন ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে থাকে এবং অনেকে জেলহাজতে ছিলো। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রতিপক্ষককে ঘায়েল এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য নিজেদের কাউকে হত্যা করে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২০ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাত ১১ থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে আমরা সকলেই (যে কয়জন ঘটনার সাথে জড়িত) ঘটনাস্থলে একত্রিত হই এবং বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নারজু খাতুনের বড় ভাই আতাহারের নির্দেশে আমাদের মধ্যে একজন নারজু খাতুনকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে আসেন। পরে আতাহারের নির্দেশে অন্যান্যদের সহযোগীদের একজন নারজু খাতুনকে গলাকেটে হত্যার পর ফাঁকা জায়গায় ফেলে রাখা হয়। এরপর প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।

হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

 

Print Friendly

Related Posts