University of British Columbia ‘র PETER A. ALLARD SCHOOL OF LAW তে গিয়েছিলাম। সেখানে মিস জোএ্যানীর সাথে আগে থেকেই Appointment করা ছিল।
আমি মূলত সেখানে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে মাস্টার্স প্রোগামে ভর্তি/স্কলারশীপ বিষয়ে কথা বলতে গিয়েছিলাম। তিনি আমাকে সুযোগের সব কিছু জানালেন।
অনেক অনেক সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের। এটাকে কাজে লাগাতে পারলে অনেক সম্মানের সাথে পৃথিবীর সর্বত্র আমরা কাজ করতে পারবো……
মিস জোএ্যানীর বক্তব্যগুলোকে এভাবে সাজিয়েছি—
কানাডায় স্কলারশীপ—-
মাস্টার্স বা পি.এইচ.ডি এর জন্য (১-৫ অবশ্যই থাকতে হবে, ৬-৭ প্রোফাইল হাই করবে)
১। অনার্স বা মাস্টার্স এ সি জি পি এ ৩.৫ এর উপরে থাকতে হবে। যত বেশি হবে ততো ভালো। তবে কম হলে অবশ্যই IELTS এ ভালো স্কোর থাকতে হবে।
২। IELTS এ ওভারঅল ৬.৫ তবে কোনটাতে ৬.০০ এর নিচে স্কোর থাকলেও এডমিশন অফার পাওয়া যাবে; তবে ফান্ড পাওয়া যাবে না। ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, টরেন্ট, ম্যাকগিল, ম্যাক মাস্টার, মানিটোবা সহ টপটেন কানাডার বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর জন্য স্কোর ৭ ও লাগতে পারে।
৩। ফান্ডিং এর জন্য প্রফেসর ম্যানেজ করতে হবে। কানাডাতে প্রফেসরই ফান্ড দিয়ে থাকেন। ফান্ডিং ম্যানেজ নিয়ে বিস্তারিত নিচে পাবেন।
৪। ২টা রেফারেন্স লেটার লাগবে আপনার ডিপার্টমেন্টর টিচারের কাছে থেকে। প্রফেসর ছাড়া রেফারেন্স লেটার না নিতে পরামর্শ থাকলো। আর এমন প্রফেসরের রেফারেন্স নিবেন যেন অনলাইনে তার ২/১টা ভালো কাজ পাওয়া যায়।
৫। কোনোভাবেই ২ বছরের বেশি স্টাডি গ্যাপ সাধারণত একসেপ্টেবল হয় না। তবে ভালো জব থাকলে একসেপ্টেবল হবে।
৬। পাবলিকেশন থাকলে হেল্প হবে ১/২/৩ মিড লেভেলের অথবা ১টা হাই ইনডেক্সিং এর হলেও হবে। * ইনডেক্স ও ইমপেক্ট এক জিনিস না; পাবলিকেশন এর জন্য ইমপেক্ট ফেক্টর থেকে ইনডেক্স এর গুরুত্ব বেশি। বিস্তারিত জানতে গুগল সার্চ করতে পারেন।
আপনার ভালো কাজ কখনো ইমপেক্ট দেখে পাবলিশ করবেন না; বরং ইনডেক্স দেখে করবেন। ভালো ইনডেক্স স্কোপাস, এমডিপিআই, সাইন্সডিরেক্ট সবগুলো জার্নাল।
৭। রিসার্চ বা টিচিং দক্ষতা থাকলে ভালো হবে। তবে টিচিং দক্ষতা বলতে লেকচারার এমনটা না। কানাডাতে টিচিং এসেসটেন্টকেও টিচিং দক্ষতার মধ্যে ধরা হয়। কারণ এখানে টিচার শুধু লেকচার দেয় আর টিএ লেকচারের ডেমোসহ ক্লাস, হোমওয়ার্ক, এসাইনমেন্ট, টিউটরিয়াল, পরীক্ষার মার্কিং ও রেজাল্ট সব কিছু টিএ করে থাকে। তবে প্রফেসার সবকিছু অবজার্ভ করে। আপনি যদি কোনো প্রফেসরকে বলে টিএ এ বা রিসার্চ এ্যাসিসটেন্ট আরএ সার্টিফিকেট বা রেফারেন্স নিতে পারেন এটা ফান্ডিং এর জন্য খুবই হেল্প করবে।
ফান্ডিং ডিটেইলস
আপনি প্রথমে স্থির করুন মাস্টার্স না পিএইচডি করবেন। দুইটার ই ফান্ডিং ম্যানেজ একই রকম। তবে….
মাস্টার্সে ১৮০০০ ডলারের বেশি ফান্ড সম্ভব না আর ১৮০০০ থেকে আপনার টিউশন ফি ও ইনসুরেন্সের মিলে ১৭৫০০ ই নিয়ে নিবে। তাহলে আপনার চলতে হলে সপ্তাহে ১২-২০ ঘন্টা জব করতে হবে। আর ১৮০০০ ডলার কিন্তু সবটা ফ্রীতে দিবে না আপনাকে অবশ্যই টিএ বা আরএ হিসাবে কাজ করতে হবে।
পিএইচডি তে ২৪০০০ ডলার পর্যন্ত ফান্ড পাওয়া যায়, তার থেকে টিউশন ইনসুরেন্সে ৮০০০ বাকি ১৬০০০ দিয়ে মোটামুটি ভাবে ফ্যামিলি সহ চলা যাবে। পিএইচডিতে ফান্ড পেলে অবশ্যই আপনাকে টিএ বা আরএ করতে হবে। ল্যবে নিজস্ব বসার জায়গা থাকবে আপনাকে সবসময় একটিভ থাকতে হবে।
আপনার আবেদনের সব শর্ত পূর্ণ থাকলে এবার শুরু করে দিন ফান্ড খোঁজা
ফান্ডিং কিভাবে পাবেন?
১। আপনি আপনার এইম অফ ইন্টারেস্ট অনু্যায়ী প্রফেসার দেখতে থকেন। ডিপার্টমেন্ট এর পিপোলস সেকশনে সব টিচারের প্রফাইল থাকে। সেখান থেকে আপনি টার্গেট করেন। তবে এক ডিপার্টমেন্ট এর ২জন প্রফেসরকে ভুলেও মেইল করা যাবে না।
২। কিভাবে বুঝবেন প্রফেসরের কাছে ফান্ড আছে কি না?
আপনি প্রফেসরের প্রজেক্ট সেকশনটা দেখেন। সেখানে বলা থাকবে তিনি কোন স্টুডেন্ট নিবে কি না। এছাড়া তার অধীনে যারা কাজ করছে তাদেরকে দেখুন যে তাদের সময় আর এক বছর বাকি আছে কি না? যদি এক বছর বাকি থাকে তাহলে বুঝতে হবে সে অবশ্যই নতুন ছাত্র নিবে।
৩। আপনি কমপক্ষে ১৫০ জন প্রফেসরের একটা ডাটাবেজ বানান । প্রফেসরের নাম, ইমেইল, রিসার্চ ক্ষেত্র এসব তথ্য দিয়ে (আমি ১৮০ জনকে মেইল করেছিলাম, ৩০/৩৫ রেসপন্স, ৩ জন ফান্ডিং এ আগ্রহী হয়)।
এবার সিমিলার ইন্টারেস্টেড প্রফেসরদের ভাগ করে ফেলুন এবং তাদের জন্য ইমেইলের ভাষা ও সিভি তাদের ইন্টারেস্ট এর সাথে মিলায়ে আপডেট করে ফেলুন। মনে রাখবেন আপনার মেইলের কথায় সে আপনার সিভি দেখবে এবং আপনাকে রেসপন্স করবে। সে বছরে আপনার জন্য ১২০০০-২৪০০০ ডলার দিবে। অবশ্যই আপনার মেইলও সিভি দেখে তার মনে হতে হবে আপনি যোগ্য প্রার্থী। এক্ষেত্রে আপনি শিক্ষক বা কোন মেন্টরের হেল্প নিবেন।
৪। সব রেসপন্স পজেটিভ রেসপন্স না!!!
যদি প্রফেসর আপনাকে শুধু মেইল করে বলে এপ্লাই করতে তবে মনে করবেন সে বলছে কিন্তু ফান্ড খুবএকটা দিবে না। আর যে ফান্ড দিবে অবশ্যই আপনার থিসিস বা রিপোর্ট বা কাজের সিনোপসিস চাইবে এবং অবশ্যই স্কাইপি ভাইভা ফোনে আপনার ভাইভা নিবে (আমার এক বন্ধুর ১ঘন্টা২৩মি ধরে ভাইবা নেয়া হয়েছিল)।
আপনাকে প্রফেসর এমনি এমনি নিবেনা।তার কাজ করার জন্যই নিবে এবং যতোটা সম্ভব যাচাই করে নিবে। যদি ভাইভার পর আপনাকে পজেটিভ রেসপন্স করে তাহলে মনে করবেন আপনার ফুলফান্ড হবে।
৫। কখন প্রফেসর কে মেইল করতে হবে !!!
আপনাকে অবশ্যই ১২-১০ মাস আগে মেইল করতে হবে। আপনি যদি সেপ্টেম্বর বা ফল সেশনে আসতে চান তো এক বছর আগে থেকে মেইল করবেন। কারণ ২মাস প্রফেসর এর সাথে যোগাযোগে যাবে, অফার লেটারে ১-২ মাস যাবে (আবেদনের শেষ দিন থেকে ৪/৮ সপ্তাহ), আপনার অন্যসব কাগজ কাগজ যোগাড় করতে ১মাস আর ভিসা ২-৩ মাস লাগবে।
সব দিক দিয়ে সেপ্টেম্বর – নভেম্বরের মধ্যে মেইলের কাজ শেষ করতে হবে।
সব ঠিক থাকলে আপনিও ব্যাস্ত জীবনে পা রাখতে পারবেন।
হতাশ হলে হবে না, মনে হচ্ছে কঠিন কিন্তু শুরু করলে শেষ হবে ইনশাআল্লাহ —-
যারা বাইরে অন্য যে কোনো দেশে পড়তে যেতে ইচ্ছুক তাদের অবশ্যই ১-২বছর চেষ্টা করতে হবে।
এটা একটা অভিজ্ঞতার আলোকে আলোচনা।
বিষয়গুলো অনেকের সাথে নাও মিলতে পারে -তবে এটাই সাধারন পদ্ধতি।
যারা নিজের টাকায় পড়তে চান তাদের এতো কিছু না করলেও হবে, মাস্টার্সের জন্য +/-৫০ লাখ, আন্ডারগ্রেডের জন্য +/-৮০ লাখ হলে চলবে। নিজের টাকায় কেউ পিএইচডি করে বলে মনে হয়না; করলে সেখানে মেধার বিকাশ ঘটানো কঠিন হবে
Md Mohsinul Haque এর ফেসবুক থেকে।
লিংক: https://www.facebook.com/mohsinul.haque
লিংক: https://www.facebook.com/mohsinul.haque