শিশুঅন্ধত্ব প্রতিরোধে দেশের প্রথম জাতীয় নির্দেশিকা প্রকাশিত

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আরওপিজনিত শিশুঅন্ধত্ব রোধে সাহায্য করবে এ নির্দেশিকা

 

শিশু অন্ধত্বের প্রধান কারণ রেটিনোপ্যাথি অফ প্রিম্যাচুরিটি (আরওপি) মোকাবেলায় বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো একটি জাতীয় নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে সরকার।

শনিবার (৩০ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর রেনেসাঁ হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ‘ন্যাশনাল গাইডলাইনস ফর স্ক্রিনিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অব আরওপি’র মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, চিকিৎসা শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিজিএমই) মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. মো. শামসুল হক, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং অন্য অংশীজনেরা মোড়ক উন্মোচন করেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, বহুপাক্ষিক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে নির্দেশিকাটি যথাযথভাবে অনুসরণ করা হলে আরওপিজনিত অন্ধত্ব প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

নির্দেশিকাটির মূল উদ্দেশ্য হলো স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ, নবজাতক বিশেষজ্ঞ, চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ, অ্যানেস্থেসিয়া বিশেষজ্ঞ এবং চোখের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্য পেশাজীবী, বিশেষ যত্নের নবজাতক ইউনিট (স্ক্যানু) এবং নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (নিকু) কর্মরত ব্যক্তি, হাসপাতালের ব্যবস্থাপক এবং উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে একটি নীতি কাঠামো প্রদান করা যাতে আরওপিজনিত শিশুঅন্ধত্ব প্রতিরোধে চোখের স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করা যায়।

অফথালমোলজিক্যাল সোসাইটি অফ বাংলাদেশ (ওএসবি), অবস্টেট্রিক্স অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি), বাংলাদেশ নিওনেটাল ফোরাম (বিএনএফ), অরবিস ইন্টারন্যাশনাল, আইআরডি গ্লোবাল, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, এবং সেভ দ্য চিল্ড্রেনের সহযোগিতায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসুস্থ্য শিশুর সমন্বিত চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা (আইএমসিআই) এবং জাতীয় নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্য কর্মসূচি (এনএনএইচপি) এ নির্দেশিকাটি প্রণয়ন ও প্রকাশ করেছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ন্যাশনাল আই কেয়ার (এনইসি), এবং জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল নির্দেশিকাটি তৈরিতে সহায়তা দিয়েছে।

গাইডলাইন উন্মোচন অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অরবিস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. মুনির আহমেদ, ইউনিসেফ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান মায়া ভ্যানডেনেন্ট, আইআরডি গ্লোবাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. তাপস রায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী এবং অধ্যাপক ডা. নাজমুন নাহার।

নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশেও আরওপি একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা। এতে আরও বলা হয়, “বাংলাদেশে আরওপি’র প্রকৃত অবস্থা এখনও অজানা হলেও, এটা দেখা গেছে অপরিপক্ক অবস্থায় জন্ম নেওয়া শিশুদের ৪০ শতাংশই আরওপিতে আক্রান্ত হয়।”

বাংলাদেশে প্রতিবছর ৩৯ লাখ ৫০ হাজার শিশু জন্ম নেয়। এদের মধ্যে আনুমানিক ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ বা ৪ লাখ ২৪ হাজার ১০০ শিশু অপরিপক্ক অবস্থায় অর্থাৎ গর্ভধারণের ৩৭ সপ্তাহ শুরু হওয়ার আগেই জন্ম নেয়। সেই হিসাবে অনুমান করা হয়, প্রতি বছর দেশে প্রায় ১ লাখ ৬৯ হাজার ৬৪০টি শিশু আরওপিতে আক্রান্ত হয়।

অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক খুরশীদ আলম বলেন, নির্দেশিকাটি সঠিকভাবে অনুসরণ করা হলে আরওপিজনিত অন্ধত্বের হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা যেতে পারে।

অধ্যাপক এনায়েত শিশুঅন্ধত্ব মোকাবেলায় নির্দেশিকাটি বাস্তবায়নের জন্য অংশীজনদের সমন্বিত এবং মালিকানার বোধ নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।

সাধারণ মানুষের মধ্যে এমনকি কিছু অংশীজনের মধ্যেও আরওপি সম্পর্কে সচেতনতার অভাব রয়েছে উল্লেখ করে ডা. মো. শামসুল হক বলেন, সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচারণা চালাতে হবে। তিনি চিকিৎসা পাঠ্যক্রমে আরওপি অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেন।

ডা. মুনীর দেশের বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে থাকা রেটক্যামের পূর্ণ ব্যবহার করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি চক্ষু স্বাস্থ্য সেবায় এনজিওগুলোর অধিকতর সম্পৃক্ততার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

নির্দেশিকাটির মোড়ক উন্মোচনের আগে “আরওপিজনিত শিশুঅন্ধত্ব প্রতিরোধে বিভিন্ন খাতের দায়িত্ব শীর্ষক” এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা দক্ষ আরওপি ব্যবস্থাপনার জন্য একটি সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ, সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অংশীজনদের প্রশিক্ষণ প্রদান, সমন্বয়ের জন্য স্ক্যানু ও নিকুগুলোর মধ্যে একটি নেটওয়ার্ক স্থাপন, ফলো-আপ চিকিৎসার জন্য একটি উপযুক্ত রেফারেল ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আরওপি সেবাগুলোর উপর সেমিনার/সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করা এবং আরও ভাল সেবার জন্য এনজিওগুলোকে চক্ষু স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে যুক্ত করার পরামর্শ দেন।

ছবি: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, চিকিৎসা শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিজিএমই) মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. মো. শামসুল হক, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং অন্যান্য অংশীজনের প্রতিনিধিরা শনিবার বিকেলে রাজধানীর রেনেসাঁ হোটেলে এক অনুষ্ঠানে ‘ন্যাশনাল গাইডলাইনস ফর স্ক্রিনিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অব আরওপি’র মোড়ক উন্মোচন করেন।

Print Friendly

Related Posts