বাসে ডাকাতি ও গণধর্ষণ, রাজার ভাগে দুটি মোবাইল ও ৩০০ টাকা

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলে বাসে ডাকাতি ও গণধর্ষণের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া রাজা মিয়া অপর এক শ্রমিকের প্রস্তাবে ডাকাতিতে অংশ নেন। অপর শ্রমিক রাজাকে বলেছিলেন ‘গাড়ি চালাইয়া তেমন টাকা পয়সা পাওয়া যায় না। একটা ডাকাতি করলে ভাল টাকা পয়সা পাবা।’ এমন প্রস্তাবে বাস ডাকাতিতে অংশ নিয়ে তিনি দুটি স্মার্ট ও ৩০০ টাকা ভাগে পেয়েছেন।

রাজা মিয়া শনিবার (৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জবানবন্দিতে এ তথ্য জানান।

টাঙ্গাইল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শামসুল আলম রাজা মিয়ার জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার পর  কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। রাজা মিয়া বর্তমানে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে রয়েছে।

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বল্লা গ্রামের হারুন অর রশিদের ছেলে রাজা মিয়া টাঙ্গাইল চন্দ্রা সড়কে ঝটিকা পরিবহনে একটি বাস চালাতেন। কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঈগল পরিবহনের বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের অভিযোগে বৃহস্পতিবার ভোরে টাঙ্গাইল শহরের দেওলা এলাকা ভাড়া বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আদালত ও পুলিশ সূত্রে রাজা মিয়ার জবানবন্দির এ তথ্য জানা গেছে।

জবানবন্দিতে রাজা জানিয়েছেন, যে পরিবহন শ্রমিক পরিবহন শ্রমিক তাকে ডাকাতিতে অংশ নেয়ার প্রস্তাব দেন তিনি মঙ্গলবার দুপুরে তাকে প্রথম ফোন দেন। বিকেল ৪/৫ টার দিকে আবার ফোন দিয়ে জানান, বাস ডাকাতিতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে কিনা। তখন রাজা মিয়া তাকে জানিয়ে দেন প্রস্তুত আছেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে প্রস্তাব দেওয়া ওই শ্রমিক, গ্রেপ্তার হওয়া আওয়াল ও নুরনবীসহ আরও এক জনকে নিয়ে টাঙ্গাইল নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আসেন। সেখানে তাদের সাথে রাজা মিয়ার সাক্ষাত হয়। তারা একটি সিএনজি চালিত অটো রিকশা ভাড়া করে এলেঙ্গা পর্যন্ত যান। এলেঙ্গা বাজার থেকে চার পাঁচটি চাকু ও কাঁচি কিনে ব্যাগের মধ্যে রাখেন। এরমধ্যে খবর আসে সিরাজগঞ্জের তাদের দলের অন্যরা পৌছে গেছেন। রাত ১১ টার দিকে তারা সিরাজগঞ্জে যায়। সেখানে আরও পাঁচজনকে দেখতে পান। গাড়িতে উঠার আগে তারা তিন ভাগে ভাগ হন। রাজা মিয়া সামনের দিকে চালকের পাশে বসেন। সিরাজগঞ্জ থেকে গাড়ি ছাড়ার পর তাদের অন্য সহযোগিরাও গাড়িতে উঠেন। এক পর্যায়ে তারা গাড়ি নিয়ন্ত্রণ নেন। রাজা মিয়া গাড়ির চালাতে থাকেন। পরে অন্য একজন এসে গাড়ির চালকের আসনে বসেন। এ সময় রাজা মিয়া পেছনের আসনে গিয়ে এক নারী যাত্রীকে ধর্ষণ করেন। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধের সৃষ্টি হয়। মধুপুরের রক্তিপাড়ায় গাড়ি সড়কের খাদে পড়ে যায়। তারা সবাই জানালা দিয়ে বের হয়ে মধুপুরের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। একটি বাস এলে সেই বাসে উঠে মধুপুর বাসস্ট্যান্ডে যান। সেখান থেকে অটো রিকশা করে তাদের দলের একজনের নানীর বাড়ি যান। সেখানে লুন্ঠিত টাকা পয়সা ও মোবাইল ভাগবাটোয়ারা করেন। রাজা মিয়া ভাগে দুটি স্মার্ট ফোন এবং নগদ তিন শত টাকা পান।

জবানবন্দিতে রাজা মিয়া জানান, বুধবার সকাল ৬ টার দিকে তিনি মধুপুর থেকে টাঙ্গাইল শহরের বাসায় চলে আসেন। পরদিন ভোরে গোয়েন্দা পুলিশের দল তার বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় লুন্ঠিত মুঠো ফোন সেট ও তার নিজের ব্যবহৃত মুঠো ফোন নিয়ে নেন।

রাজা মিয়া ছাড়াও গ্রেপ্তারকৃত অন্য দুই আসামী মো. আওয়াল ও নুরনবী আদালতে স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারাও দুজনও বাস ডাকাতির সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তবে তারা ধর্ষণে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেনি।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, বাসে ডাকাতি ও গণধর্ষণ মামলায় অপর আসামীদের গ্রেপ্তারের জন্য গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সকল আসামীদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ সক্ষম হবে।

Print Friendly

Related Posts