১৮৩ রানের পুঁজি নিয়েও পারল না বাংলাদেশ। দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামের ইতিহাসে রেকর্ড রান তাড়া করে রোমাঞ্চকর জয় তুলে নিল শ্রীলঙ্কা। আফগানিস্তানের পর সুপার ফোরে উঠে গেল দাসুন শানাকার দল। গ্রুপ পর্বেই এশিয়া কাপ থেকে বিদায় ঘটল বাংলাদেশের।
রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ের পর শ্রীলঙ্কা পেয়েছে ২ উইকেটের জয়। ৪ বল হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় তারা। শেষের উত্তেজনায় মাথা ঠিক রেখে ৩ বলে ১০ রান তুলে নায়ক বনে যান আসিথা ফার্নান্দো। যদিও আসল কাজটা করেন তিন ব্যাটার মিলে।
ওপেনার কুশল মেন্ডিস ৩৭ বলে ৬০ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে দলকে রাখেন লড়াইয়ে। অধিনায়ক শানাকা ৩৩ বলে ৪৫ রান করে শেষ ওভার পর্যন্ত লড়ার সুর সেট করে দেন। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে চামিকা করুনারত্নের ১০ বলে ১৬ রানের ইনিংসও ম্যাচ জয়ে রাখে অবদান।
বাঁচা-মরার লড়াইয়ে নায়ক হতে পারতেন ইবাদত হোসেন। টি-টুয়েন্টি অভিষেকে প্রথম ওভারে দুই উইকেট নিয়ে বেক থ্রু এনে দেন। পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে আসেন বোলিংয়ে। তার আগের ওভারেই সাকিব আল হাসান খরচ করেন ১৮ রান। ম্যাচ ঘুরিয়ে দেয়া বোলিংয়ের পরের ওভারেও উইকেট নেন ইবাদত। ২ ওভারে তিন শিকারে অভিষেক রাঙান।
পরের দুই ওভারে হয়ে যায় সব ওলটপালট। তৃতীয় ওভারে ২২ রান খরচ করেন। সেখান থেকে তাসকিন আহমেদ ম্যাচে ফেরান বাংলাদেশকে। ২ ওভারে যখন ২৫ রান দরকার শ্রীলঙ্কার, তখন দিয়ে বসেন ১৭। চার ওভারে ইবাদত দেন ৫১ রান। যা সবচেয়ে খরুচে। ওখানেই ম্যাচটা বেরিয়ে যায় হাত থেকে। মেহেদীর ২ বলেই ৮ রান তুলে নেয় লঙ্কানরা।
দুবাইয়ে ১৮০ রান তাড়া করে জয়ের কীর্তি এটিই। ২০১৬ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ১৭৯ রান তাড়ায় আফগানিস্তানের ৫ উইকেটের জয় এই মাঠের রেকর্ড।
টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নামা টাইগাররা ব্যাট করেছিল ভয়ডরহীন। চমক দেখিয়ে ওপেনিংয়ে নেমে ঝলক দেখান মেহেদী হাসান মিরাজ। তার দেখানো পথে হাঁটেন আফিফ-মোসাদ্দেকরা।
গরমের মাঝে মিরাজ-আফিফ অসাধারণ সব শটে সচল রাখেন স্কোরবোর্ড, মাতিয়ে রাখেন গ্যালারি। ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তোলে ১৮৩ রান। মরুর বুকে টি-টুয়েন্টিতে যেটি টাইগারদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ।
ইনিংসের সুরটা ধরিয়ে দেন মিরাজ। মাঝে সাকিব হাল ধরেন। পরের ধাপে আফিফ-মাহমুদউল্লাহর অসাধারণ জুটি, আর শেষে মোসাদ্দেকের ক্যামিও এনে দেয় বড় পুঁজি।
এনামুল হক বিজয় ও নাঈম শেখকে বাদ দিয়ে নামানো হয় সাব্বির রহমান ও মিরাজের ওপেনিং জুটি। শুরু থেকেই দারুণ উদ্যম নিয়ে ব্যাট করতে থাকেন তারা। ২৬ বলে ৩৮ রানের ইনিংস খেলে মিরাজ পাওয়ার প্লে’র দাবি মেটান পুরোপুরি।
তিন বছর পর জাতীয় দলে ফেরা সাব্বির দারুণ এক স্কুপে চার মেরে শুরু করেন। ফিয়ারলেস ক্রিকেট! যদিও টিকে থাকতে পারেননি। ৬ বলে ৫ রান করে আউট হন তৃতীয় ওভারে।
সাকিব নেমে শুরুতে সংগ্রাম করলেও পরে মানিয়ে নেন। পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তোলে ৫৫ রান।
পরের ওভারেই বোল্ড হন মিরাজ। তার ইনিংসে ছিল দুটি করে ও ছয়ের মার। মুশফিকুর রহিম ৫ বলে ৪ রান করে ফেরেন সাজঘরে। দ্রুত ২ উইকেট হারালেও দলকে চাপে পড়তে দেননি সাকিব। তিন চারে ২২ বল ২৪ রান করে অধিনায়ক যখন আউট হন, আফিফ হোসেন তখন পুরোপুরি থিতু।
একটু সময় নিয়ে এশিয়া কাপে বাংলাদেশ দলের সহ-অধিনায়ক মারতে থাকেন একের পর এক বাউন্ডারি। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আক্রমণাত্মক হতে একটু সময় নেন। দুজনে একই সময়ে জ্বলে ওঠেন। দেখান অসাধারণ ব্যাটিং ঝলক। পঞ্চম উইকেটে ৫৭ রানের জুটি আসে মাত্র ৩১ বলে।
২২ বলে ৩৯ রান করে আউট হন আফিফ। মারেন চারটি চার ও দুটি ছয়। মাহমুদউল্লাহ ২২ বলে ২৭ রান করেন। শেষটায় ঝড় তোলেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। মাত্র ৯ বলে ২৪ রান করে অপরাজিত থাকেন। তাসকিন আহমেদ ৬ বলে ১১ রানে অপরাজিত থাকেন।