অস্টিওআথ্রাইটিস চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি

ডা. এম ইয়াছিন আলী

আজ ৮ই সেপ্টেম্বর বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে – অস্টিওআথ্রাইটিস চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি অত্যন্ত কার্যকারী চিকিৎসা পদ্ধতি ।

অস্টিওআথ্রাইটিস কি-

এটি একটি জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধির ক্ষয়জনিত রোগ, সাধারণত চল্লিশোর্ধ মানুষেরা এই রোগে ভূগে থাকেন, একটি সমীক্ষায় দেখা যায় বিশ্বজুড়ে ৫২০ মিলিয়ন মানুষ অষ্টিওআথ্রাইটিসে আক্রান্ত যা প্রতিবন্ধীতার ১১ তম কারন।

অস্টিওআথ্রাইটিস কেন হয় –

এটি একটি ডিজেনারেটিভ ডিজিজ বা বয়সজনিত রোগ, এর সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি তবে কিছু ফ্যাক্টর অষ্টিওআথ্রাইটিসের ঝুঁকি বাড়ায়, যেমন- ১. অতিরিক্ত ওজন বা স্থুলতা, ২. পুর্ববর্তী জয়েন্টের আঘাত বা সার্জারী , ৩. জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধির অতিরিক্ত ব্যবহার , ৪. জেনেটিক বা বংশগত কারণ।

অস্টিওআথ্রাইটিস কোথায় হয়-

এটি সাধারণত শরীরের বড় বড় জয়েন্টগুলিকে আক্রান্ত করে মেরূদণ্ডের স্যারভাইকাল স্পাইন বা ঘাড়ে, লাম্বোসেকরাল স্পাইন বা কোমরে, হিপ জয়েন্ট বা নিতম্বে ও হাটুতে বেশী দেখা যায়, একটি পরিসংখ্যানে অষ্টিওআথ্রাইটিসে আক্রান্ত ৬০ শতাংশ রোগীই হাটূতে আক্রান্ত হয়।

অস্টিওআর্থ্রাইটিসের কারণ সমূহঃ

> জয়েন্টে পূর্ববর্তী আঘাত
> অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি
> বৃদ্ধ বয়স
> বংশগত কারণ
> অন্যান্য রোগের ইফেক্ট হিসেবেও ও হতে পারে

রোগ নির্নয়-

অস্টিওআথ্রাইটিস নির্নয়ের ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির বয়স, পেশা, ওজন, আঘাতের ইতিহাসের পাশপাশি আক্রান্ত জয়েন্টের এক্সরে করার প্রয়োজন হয়।

চিকিৎসা-

অস্টিওআথ্রাইটিসের চিকিৎসার প্রাথমিক অবস্থায় কিছু ব্যাথানাশক ওষুধের সাথে কিছু ফুড সাপ্লিমেন্টের প্রয়োজন হয়, যেমন- গ্লুকোসামিন হাইড্রোক্লোরাইড , কন্ড্রোটিন সালফেট, ক্যালসিয়াম , এমএসএম, কোলাজেন, হায়ালোরনিক এসিড, ভিটামিন -ডি ইত্যাদি । এছাড়াও ব্যথা কমিয়ে কার্যক্ষমতা বাড়াতে ফিজিওথেরাপি সবথেকে বেশী গুরত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। ফিজিওথেরাপি কিভাবে এতে সাহায্য করে?

আপনি অস্টিওআথ্রাইটিসে (ওএ) আক্রান্ত রোগী হলে আপনার জন্য নড়াচড়া কঠিন হতে পারে, কিন্তু যতটা সম্ভব সক্রিয় থাকলে ব্যথার উন্নতি হতে পারে, ওএ এর অন্যান্য উপসর্গ কমাতে পারে এবং আপনাকে সুস্থ্য থাকতে সাহায্য করবে। একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক এ বিষয়ে আপনাকে পরামর্শ দেবেন আপনার কোন ধরনের থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ করা প্রয়োজন।থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ ওএ এর মূল চিকিৎসা হওয়া উচিৎ।

এর মধ্যে থাকবে-

*মাংশপেশীর শক্তি বাড়ানোর এক্সারসাইজ
*জয়েন্টের স্বাভাবিক মুভমেন্ট করা,
*এরোবিক এক্সারসাইজ
*স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ
*জয়েন্ট মোবিলাইজেশন
এবং আপনার সমস্যা অনুযায়ী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক এর এক্সারসাইজ প্রটোকল ইত্যাদি।

অস্টিওআথ্রাইটিসের আরো উপসর্গ- আক্রান্ত জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধিতে ব্যথা , ফুলে যাওয়া , জয়েন্টর মুভমেন্ট বা নাড়ানোর ক্ষমতা কমে যাওয়া।

প্রতিরোধ –

অস্টিওআথ্রাইটিস যেহেতু বয়সজনিত রোগ তাই সম্পুর্ণ প্রতিরোধ করা সম্বভ নয় তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে অনেকাংশে ভাল থাকা যায়, যেমন- শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, – জয়েন্টের আঘাত থেকে রক্ষা করা – দীর্ঘক্ষণ দাড়ীয়ে কিংবা বসে কাজ না করা, – খাদ্য তালিকায় নিয়মিত ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন -ডি জাতীয় খাবার রাখা, – নিয়মিত ব্যায়াম বা শরীর চর্চা করা। পাশাপাশি একজন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কে শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

ডা. এম ইয়াছিন আলী:
চেয়ারম্যান ও চীফ কনসালটেন্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল।
বাড়ী নং-১২/১, রোড-৪/এ ধানমন্ডি, ঢাকা।
মোবাইলঃ ০১৭৮৭-১০৬৭০২, ০২-৯৬১৪৫০০

Print Friendly

Related Posts