দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। অনেকে আবার মৃত্যুবরণ করেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কোভিড-১৯ পাশাপাশি ডেঙ্গু নিয়ে প্রতিদিন বুলেটিন প্রকাশ করে। আমাদের দেশের ডেঙ্গু এখন মারাত্মক আকার ধারণ করছে।
ডেঙ্গু আসলে কি, কীভাবে উৎপত্তি এবং প্রতিরোধের উপায় কি?
ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ। যার মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়ায় সেই ভাইরাসটি নাম ফ্ল্যাভি ভাইরাস (Flaviviridae Family)। এটি আসলে আরএনএ ভাইরাস (RNA Virus)। এই ভাইরাসের বাহক হচ্ছে এডিস মশা ( Aedes aegypti , Aedes albopictus) ।
সবার প্রথম ডেঙ্গু ছড়ায় ১৭৮০ সালে চেন্নাই শহরে (ভারত)। পরে এটি মহামারী আকার ধারণ করে ১৯৬৩-৬৪ সালে কলকাতা শহরে (ভারত)। পরবর্তীতে এটি পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে শুধু বাংলাদেশই নয় এশিয়া এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ডেঙ্গু রোগের প্রার্দুভাব দেখা যায়। এই রোগ মশা থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায়। কিন্তু সরাসরি মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না।
লক্ষণ:
ডেঙ্গু রোগের সুপ্তকাল ৪-১০ দিন। শিশু এবং তরুণদের মধ্যে ডেঙ্গু ছড়ায় বেশি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মতে, ডেঙ্গুকে ২ ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১) সাধারণ ডেঙ্গু।
২) মারাত্নক ডেঙ্গু।
সাধারণ ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে দেখা যায়-
১) জ্বর (১০৪-১০৬ ডিগ্রী)।
২) প্রচন্ড মাথাব্যথা।
৩) চোখের পিছনে ব্যথা।
৪) মাংসপেশিতে ব্যথা।
৫) বমি বমি ভাব।
৬) বহিঃক্ষরা গ্রন্থি ফোলা।
৭) র্যাশ।
মারাত্মক ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে দেখা যায়-
১) পেটে প্রচন্ড ব্যথা।
২) জোরে জোরে শ্বাস নেওয়া।
৩) নাকে বা দাঁতের মাড়িতে রক্ত পড়া।
৪) অস্থির থাকা।
৫) বমি বা পায়খানার সাথে রক্ত বের হওয়া।
যদি ৪৮ ঘন্টার মধ্যে রোগীর চিকিৎসা না করানো হয় তাহলে রোগী মারা যেতে পারে।
রোগ নির্ণয়:
সেরোলজি: রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে IgM অ্যান্টিবডি উপস্থিত মাধ্যমে ডেঙ্গু শনাক্ত করতে পারি। যদি মারাত্নক হয়, তাহলে IgM পরিমাণ তিন থেকে চার গুণ বৃদ্ধি পেতে পারে।
অনুচক্রিকা পরিমাণ: অনুচক্রিকার পরিমাণ ১৫০০০০/cumm এর কম হয় তাহলে বুঝতে হবে যে তার ডেঙ্গু হয়েছে।
প্রতিকার:
চিকিৎসা মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগ নিরাময় করা সম্ভব।
১) বেশি পরিমাণে পানি পান করতে হবে এবং তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে।
২) পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হবে।
৩) এসপিরিন জাতীয় ঔষুধ থেকে বিরত থাকতে হবে। এতে রক্ত মারাত্নক প্রভাব পড়বে।
৪) প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষুধ সেবণ করতে হবে।
৫) যদি সম্ভব হয় প্লেটিলেট ট্রান্সফিউশন করতে হবে। এতে রক্ত সমতা বজায় থাকবে।
৬) ৯-৪৫ বছর বয়সী এবং যাদের একবার ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে তারা Dengvaxia নামে ভ্যাকসিন নিতে হবে।
প্রতিরোধ:
১) ঘুমানোর সময় মশারী টাঙিয়ে ঘুমাতে হবে। বিশেষ করে দিনের বেলা।
২) ডাবের খোসা, কন্টেইনার, খালি বালতি যেখানে পরিষ্কার পানি জমা থাকে সেগুলো সেগুলোকে যথাস্থানে ফেলে দেওয়া।
৩) পতঙ্গনাশক স্পে দেওয়া।
আশা করি এতে আপনারা ডেঙ্গু রোগ থেকে বাঁচতে পারবেন।
-এস. এম. এম. মুসাব্বির উদ্দিন
শিক্ষার্থী
ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।