আনন্দে ভাসছে সাতক্ষীরা

শাহীন গোলদার: সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ জয় করে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। এই বড় জয়ে অবদান রেখেছেন বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। টুর্নামেন্টে ৮ গোল করে তিনিই সর্বোচ্চ গোলাদাতা। হয়েছেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ও।

সাবিনার বাড়ি সাতক্ষীরা শহরের সবুজবাগ। অন্যদিকে এ দলেরই আরেক খেলোয়াড় মাসুরা পারভীন সাতক্ষীরা সদরের বিনেরপোতার মেয়ে। তাই নারী দল চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় আনন্দের বন্যা বইছে সাবিনা-মাসুরার জেলা সাতক্ষীরায়।

সাতক্ষীরা শহরে ও সবুজবাগে সাবিনাদের বাড়িতে সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল থেকে খেলা দেখছেন সবাই। ফাইনালে গোল না পেলেও টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার গৌরবে গৌরান্বিত সাবিনার পরিবারসহ ফুটবলের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই।

সোমবার রাতে সাবিনা খাতুনের বাড়িতে গেলে দেখা য়ায়, সাতক্ষীরা জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সংগঠকরা ফুল ও মিষ্টি নিয়ে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেছে। সাবিনার ছোট বোনদের ফুল দিয়ে বরণ করে মিষ্টি মুখ করাচ্ছেন পরিবারসহ ফুটবলের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই।

সাবিনা খাতুনের মা মমতাজ বেগম জানান, বাংলাদেশের সাফল্যে তিনি খুবই উচ্ছ্বসিত। মেয়েটার ধ্যান-জ্ঞান ফুটবলকে নিয়ে। ৮ গোল নিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ায় অপরিসীম আনন্দ উপভোগ করছেন তিনি। পিতাহীন সাবিনার বড় বোন সালমা খাতুন। পরিবারের তিনিই এখন কর্ত্রী।

খেলা শেষ হওয়ার পরে সাবিনা খাতুনের বোন সালমা খাতুন বলেন, সারাদিন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছেন জয়ের খবরটা কখন আসবে। অবশেষে সন্ধ্যার পরপরই টিভির পর্দায় যখন ভেসে আসল বাংলাদেশ ৩-১ গোলে জয়ী, তখন মনে হয়েছিল স্বপ্ন সার্থক হয়েছে আমার বোনটার।

অপরদিকে, সাতক্ষীরা সদরের বিনেরপোতায় নারী ফুটবল দলের অপর খেলোয়াড় মাসুরা পারভীনের বাড়িতেও চলছে জয়ের উৎসব। বাবা রজব আলী মাসুরাকে খেলতে দিতে চাইতেন না। কিন্তু স্থানীয় কোচ আকবার আলী ও মা ফাতেমা খাতুনের উৎসাহে নারী দলে শক্ত জায়গা করে নিয়েছেন মাসুরা পারভীন।

মাসুরা পারভীনের মা ফাতেমা খাতুন জানান, আমরা গরীব মানুষ। ছোটবেলা থেকে মাসুরার খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ দেখে আমি তাকে খেলা চালিয়ে যেতে বলেছিলাম। কোচ আকবার আলীই আমার মেয়েকে এ পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, দুর্ভাগ্য হলো এত বড় জয় আকবার আলী দেখে যেতে পারলেন না। গত দুই বছর আগে তিনি মারা গেছেন। আকবার আলী আজ অনেক খুশি হতেন।

সাতক্ষীরা জেলা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মীর তাজুল ইসলাম রিপন বলেন, নারী ফুটবল দল সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় গর্ব অনুভব করছি। সাবিনা ও মাসুরার মত খেলোয়াড়রা সাতক্ষীরার মাটি থেকে আজ জাতীয় দলে শক্ত জায়গা করে নিয়েছেন। দল জয়লাভ করায় সঙ্গে সঙ্গে সাবিনার বাসায় ফুল নিয়ে চলে এসেছি। তাদের এ সফলতার ধারা অব্যাহত থাকুক।

সাতক্ষীরা জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আরিফ হাসান প্রিন্স বলেন, আজ ফাইনালে গোল পাননি সাবিনা খাতুন, তবে গোল করিয়েছেন। কোনো না কোনো ভাবে দলে জয়ে অবদান থাকেই সাবিনার। নারী ফুটবল দল সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় গর্ব অনুভব করছি। তাদের এ সফলতার ধারা অব্যাহত থাকুক।

তিনি আরও বলেন, দেশের নারী ফুটবল এক নতুন জাগরণের সুর উঠেছে। এই সুরেই একদিন বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন দেখছেন দেশের ফুটবলপ্রেমিরা।

Print Friendly

Related Posts