মো. রাসেল হোসেন, ধামরাই: ঢাকার ধামরাইয়ে কুশুরা-বাউজা আঞ্চলিক সড়কে রাস্তায় গাছ ফেলে মোটরসাইকেল গতিরোধ করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হাত পা বেঁধে নগদ টাকা লুট করেছে সংঘবদ্ধ ডাকাত দল ।
রোববার (১৬ অক্টোবর) রাতে উপজেলার কুশুরা ইউনিয়নে বাউজা আঞ্চলিক সড়কে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এসময় ডাকাতরা আনোয়ার হোসেনের কাছ থেকে প্রায় নগদ এক লাখ টাকা লুট করে। এঘটনায় আনোয়ার হোসেন বাদি হয়ে ধামরাই থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এর আগে গত ২৭ জুলাই বুধবার রাতেও কুশুরা ইউনিয়নের কুশুরা বাজার থেকে বান্নাখোলা বাজার সড়কের ডালিপাড়ার পূর্বপাশে গাছ কেটে ডাকাতরা সড়কে ফেলে বিভিন্ন যানবাহনের গতিরোধ করে ডাকাতি চালায়। এসময় ডাকাতির কবলে পড়েন কুশুরা ইউনিয়নের বাউজা গ্রামের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেনসহ বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা। বিল্লাল হোসেন জানান, হাইএস-চালক, পিকআপ ভ্যানচালকসহ বিভিন্ন অটো রিকশাচালকদের হাত-পা বেঁধে ডাকাতরা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে নগদ টাকাসহ মোবাইল ফোনসেট ছিনিয়ে নেয়। ওইসময় একটি ট্রাকের গতিরোধ করে চালকের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা, একটি মাইক্রোবাসের (হাইএস) চালকের কাছ থেকে ২০ হাজার, একটি পিকআপ ভ্যানের চালকের মোবাইল ও টাকাসহ সঙ্গে থাকা সর্বস্ব লুটে নেয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত কিংবা মালামাল উদ্ধার করতে পারেনি।
এছাড়া গত ২৫ জুলাই সোমবার রাতে ধামরাই-মির্জাপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের কালামপুর হাটের পশ্চিম পাশে ও মাদারপুর এলাকায় বিভিন্ন যানবাহনের শ্রমিকদের কাছ থেকে সর্বস্ব লুটে নেয় ডাকাতরা। এ পরিস্থিতি থেকে পালাতে গিয়ে একটি পণ্যবাহী পিকআপ ভ্যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যায়। এতে চালক আবদুল আলিম আহত হন। এসব ঘটনায় পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
এর আগে একই ইউনিয়নের বৈন্যা গ্রামে স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব বেনজির আহমদ এর আপন বড় ভাই সাবেক রাষ্ট্রদূত সোহরাব হোসেনের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে ও ডালিপাড়ায় কনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আহমদ আল জামান সিআইপির বাড়িতে ডাকাতরা হানা দেয়। ওই রাস্তায় প্রায় রাতেই ডাকাতি সংঘটিত হয়। এলাকাবাসী পুলিশের কাছে বার বার অভিযোগ দেওয়ার পরও ডাকাতি বন্ধ হচ্ছে না। বর্তমানে কুশুরা ইউনিয়নের বাসিন্দারা আতঙ্কে দিন পার করছেন।
জানা গেছে,উপজেলার কাওয়ালীপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন ও একই গ্রামের নয়ন মিয়া নবিনগর থেকে মোটরসাইকেল করে কুশুরা -বাউজা আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে বাড়ি ফিরছিল। তারা ঢালিপাড়া এলাকায় পৌঁছালে ডাকাতরা রাস্তায় গাছ ফেলে তাদের মোটরসাইকেল গতিরোধ করে ওই দুইজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হাত পা বেঁধে নগদ প্রায় একলাখ টাকা লুট করে। এসময় তারা টাকা দিতে না চাইলে তাদের বেদম মারপিট করে। ওই রাস্তায় প্রায় রাতেই ডাকাতি সংঘটিত হয় বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। এলাকাবাসী পুলিশের কাছে বার বার অভিযোগ দেওয়ার পরও ওই এলাকায় ডাকাতি বন্ধ হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
এবিষয়ে আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা দুইজন নবিনগর থেকে মটরসাইকেল করে বাড়ি ফিরছিলাম ডালিপাড়া এলাকায় পৌচ্ছালে ডাকাতরা রাস্তার ওপর গাছ ফেলে রেখে। এসময় ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আমাদের সাথে থাকা প্রায় এক লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়।
ধামরাই থানার ওসি তদন্ত ওহেদ পারভেজ বলেন, থানায় অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে, কুল্লা-আড়ালিয়া সড়কের লাড়ুয়াকুন্ড গ্রামের উত্তর পাশে ফাঁকা রাস্তায় গাছ ফেলে ডাকাতির ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। এ রাস্তার পাশে পোল্ট্রি ভিলেজখ্যাত লাড়ুয়াকুন্ড, সীতি, বাড়িল্লা এলাকায় ঢাকা ও সাভারের মুরগি ও ডিমের ব্যবসায়ীরা পিকআপ ভ্যানে মাল ক্রয়ের জন্য যাতায়াত করে থাকেন। তাদের কাছ থেকেও গত দুই মাসে পাঁচটি ডাকাতির ঘটনায় কয়েক লাখ টাকা লুটে নেয়া হয়েছে। ডিমব্যবসায়ী লাড়ুয়াকুন্ড গ্রামের জুয়েলের কাছ থেকে দুই লাখ, আড়ালিয়া গ্রামের মোটর গ্যারেজ মালিক মামুন ও লাড়ুয়াকুন্ড গ্রামের চরপাড়া জুলহাসের কাছ থেকেও লক্ষাধিক নগদ টাকাসহ মোবাইল ফোনসেট লুটে নেয় ডাকাতরা।
এছাড়া গত ১৭ জুন রাতে বারবাড়িয়া গ্রামের গদাধর হালদারের বাড়িতে অস্ত্রের মুখে সবাইকে জিম্মি করে নগদ চার লাখ টাকা ও ১৬ ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুট করে ডাকাতদল। ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে স্থানীয় এমপি বেনজীর আহমদের ভাই সাবেক রাষ্ট্রদূত সোহরাব হোসেনের বৈন্যা গ্রামের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় তিন লাখ টাকা ও ১২ ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুট করা হয়।
এছাড়া ঢুলিভিটা-ফোর্ডনগর সড়কে রূপনগর এলাকার ফাঁকা রাস্তায় গাছ ফেলে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ে ঘটনা নিত্যদিনের। এসব ঘটনায় এলাকার জনগণ আতঙ্ক নিয়ে চলাফেরা করেন।