হবিগঞ্জ পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিক ও সুশৃঙ্খলে বেলার সভা

ছবি: সভায় বক্তব্য রাখছেন মেয়র আতাউর রহমান সেলিম

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি: হবিগঞ্জ পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিক ও সুশৃঙ্খল করে জনগণের সার্বিক জীবন মান বৃদ্ধি ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) হবিগঞ্জ পৌরসভার সভাকক্ষে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেট উক্ত আলোচনা সভা আয়োজন করে।

বাপা হবিগঞ্জের সভাপতি মো. ইকরামুল ওয়াদুদের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান সেলিম।

সভায় মেয়র বলেন, আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে হবিগঞ্জের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে সংকট দূর হবে। আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। স্থায়ী ডাম্পিং স্টেশনের জন্য রিচি ইউনিয়নে জায়গা ক্রয় করা হয়েছে। শহরের বর্তমান ময়লা স্থানান্তরের জন্য অস্থায়ী ডাম্পিং স্টেশন করতে মির্জাপুরে প্রায় ১৬০ শতক জায়গা কেনা হয়েছে। ওই জায়গার চারপাশে দেয়াল তৈরির জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া করা হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে অস্থায়ী ডাম্পিং স্টেশনে ময়লা ফেলা যাবে। আমি পরিবেশবাদী বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সংগঠনসহ এ সংশ্লিষ্ট সকলকে স্থায়ী এবং অস্থায়ী ডাম্পিং স্টেশন পরিদর্শনের আহবান জানাচ্ছি।

সভায় বেলার পক্ষ থেকে বলা হয়, হবিগঞ্জ পৌরসভায় প্রতিদিন ৩৫ টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে মনুষ্য বর্জ্য, গৃহস্থালি বর্জ্য ও চিকিৎসা বর্জ্য আছে। গৃহস্থালির বর্জ্য প্রতিটি বাসা বাড়ি থেকে পরিচ্ছন্ন কর্মীর মাধ্যমে আবর্জনা সংগ্রহ করে সেকেন্ডারি ডাস্টবিনে ফেলা হয়। ৯টি ওয়ার্ডে আবর্জনা সংগ্রহের জন্য ৭১ টি যানবাহন আছে। এর মধ্যে ট্রাক, ভ্যান, রিক্সা ট্রলি, ব্যাটারি চালিত পিকআপ রয়েছে। দিনের শুরুতেই বর্জ্য সংগ্রহ করে প্রাইমারী ডাম্পিং স্টেশনে স্থানান্তর করা হয়। মেডিকেল বর্জ্য হয় পৌরশহরে অনুমোদিত ৩৪টি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে। এসব হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানসমূহের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চলে।

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, হবিগঞ্জ পৌরসভা ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি প্রথম শ্রেণির মর্যাদা সম্পন্ন একটি পৌরসভা। আয়তন: ৯০৫ বর্গ কিলোমিটার। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা ৯০,৩২৫ জন। পরিচ্ছন্ন শাখার লোকবল আছে ৪৬জন। পরিচ্ছন্ন কর্মী রয়েছেন ৪২ জন। পরিচ্ছন্নতা কাজে ব্যবহৃত যানবাহনসমূহের মধ্যে রয়েছে ট্রাক ৫টি, ব্যাটারি চালিত পিক আপ ১টি, রিক্সা ট্রলি ৬টি, পুশ কার্ট ৬টি, রিক্সা ভ্যান (হাফ বডি) ৭টি, রিক্সা ভ্যান (ফুল বডি) ২১টি। ডাম্পিং স্টেশনের মধ্যে রয়েছে প্রাইমারি ১টি (অস্থায়ী), সেকেন্ডারি ৬টি, ফাইনাল ১টি (প্রক্রিয়াধীন)।

আলোচনায় উঠে আসা করণীয়গুলো হল- পৌরসভার জন্য একটা মাস্টারপ্ল্যান করতে হবে, পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার (অবকাঠামো, যন্ত্রপাতি, কর্মীর স্বাস্থ্য নিরাপত্তার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহসহ) জন্য পৃথক বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। করোনা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আলাদা পরিকল্পনা ও সে অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণ জরুরী, শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাসমূহ থেকে ডাম্পিং স্টেশন সরানো প্রয়োজন, খোয়াই নদীর তীর থেকে জরুরী ভিত্তিতে ময়লা অপসারণ করতে হবে, প্রক্রিয়াধীন ফাইনাল ডাম্পিং স্টেশনের কার্যক্রম শুরুর আগে (পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ) ইআইএ করতে হবে এবং স্থান অনুমোদনের পূর্বে সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত ও স্থানীয় জনসাধারণের মতামত গ্রহণ করতে হবে, পৌরসভার আওতাধীন গৃহস্থালি, বাণিজ্যিক, চিকিৎসা বর্জ্যসহ (তরল ও কঠিন) সকল বর্জ্য পৌরসভাকেই বাছাই,সংগ্রহ ও সংরক্ষণের দায়িত্ব নিতে হবে, তরল বর্জ্য, ক্ষতিকর নয় এমন পচনশীল/অপচনশীল বর্জ্য, চিকিৎসা বর্জ্য, প্লাস্টিক বর্জ্যকে আলাদাভাবে সংগ্রহ ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে, প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম ক্ষতিকর। তাই এগুলো পোড়ানো যাবে না, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জন করার জন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

বেলার বিভাগীয় সমন্বয়ক শাহ সাহেদা আখতারের পরিচালনায় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন হবিগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ নুরুল হক, জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মিজানুর রহমান, জেলা মৎস কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম।

সভায় বক্তব্য দেন বাপা হবিগঞ্জের সহ-সভাপতি তাহমিনা বেগম গিনি, সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল, হবিগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্টিজের প্রেসিডেন্ট মিজানুর রহমান শামিম, হবিগঞ্জ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক ওর্নার এসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক সফিকুল বারী আওয়াল, হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি রাসেল চৌধুরী, কাউন্সিলর গৌতম কুমার রায়, সিনিয়র সাংবাদিক মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল, সাংবাদিক শোয়েব চৌধুরী, সাংবাদিক হাফিজুর রহমান নিয়ন, সাংবাদিক প্রদীপ দাশ সাগর, এনজিও কর্মকর্তা মো. আরেফ আলী মন্ডল। এছাড়াও সভায় বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

 

মামুন/এইচ

 

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts