মোহাম্মদ সিরাজ বল হাতে তেমন কার্যকারিতা দেখাতে পারছিলেন না । তখন জাকির হাসান ও নাজমুল হোসেন শান্তর মনোযোগ নড়াতে মুখের অস্ত্র ব্যবহার করা শুরু করলেন।
শান্তকে বল করেই এগিয়ে যান। স্লেজিং করে ঘাবড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু শান্ত একেবারেই শান্ত। মুখে হাসি দিয়ে ফিরিয়ে দেন ভারতীয় পেসারকে। বরং প্রতি আক্রমণে জবাব দেন। ডানহাতি পেসারের শর্ট বল পুল করে মিড উইকেট দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠান অতি সহজে। তার ওই চারে ৯৭ থেকে বাংলাদেশের রান একশ পেরিয়ে যায়।
তাতে শান্ত ও জাকির লিখে ফেলেন নতুন এক ইতিহাস। ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে প্রথমবার উদ্বোধনী জুটিতে একশ রান পেলো বাংলাদেশ। এর আগে কেবল একটি ইনিংসেই উদ্বোধনী জুটির রান পঞ্চাশ পেরিয়েছিল। ২০১০ সালে চট্টগ্রামেই ইমরুল ও তামিম ৫৩ রান করেছিলেন।
তৃতীয় দিন ৪২ রানে অপরাজিত থকে শান্ত ও জাকির দিন শেষ করেছিলেন। চতুর্থ দিনের শুরু থেকেই দুজন জমাট ব্যাটিং শুরু করেন। ভারতীয় বোলারদের কোনও সুযোগ না দিয়ে নিজেদের শান্ত রেখে এগিয়ে যান। বাজে বল অবশ্য শাসন করেছেন ঠিকই। সিরাজকে কভার ড্রাইভ ও পুল করে শান্ত পরপর দুই চার মেরেছেন অনায়াসে। উমেশকে দারুণ স্কয়ার কাটে জাকির পাঠিয়েছেন বাউন্ডারিতে। দুজন ফিফটি পেয়েছেন। বাংলাদেশের রান পেরিয়ে গেছে একশ।
উইকেটের দুই প্রান্ত থেকে ভালো ব্যাটিং করায় তাদের ব্যাটে রাঙা হয়েছে নতুন ইতিহাস। চতুর্থ ইনিংসে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় উদ্বোধনী জুটিতে শতরানের ঘটনা। ২০০৫ সালে জাভেদ ওমর বেলিম ও নাফিস ইকবাল ১৩৩ রান করেছিলেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। টপ অর্ডার ব্যাটিং ছিল মাথা ব্যথার কারণ। প্রথম ইনিংসে শান্ত গোল্ডেন ডাক পাওয়ায় বেশ সমালোচিত হয়েছিলেন। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে নিজেকে মেলে ধরেছেন বাঁহাতি ওপেনার। তাতে সাত ইনিংস পর উদ্বোধনী জুটিতে শতরান পেলো বাংলাদেশ। সবশেষ এই চট্টগ্রামেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৬২ রান করেছিলেন মাহমুদুল হাসান জয় ও তামিম ইকবাল।
আরেকটি পরিসংখ্যান অবাক করে দিতে পারে। তামিম ইকবালের অভিষেকের পর তাকে ছাড়া এটিই বাংলাদেশের প্রথম উদ্বোধনী জুটিতে একশ রান। ওপেনিংয়ে বাংলাদেশ নয়টি একশ পেরুনো ইনিংস পেয়েছে। তামিমের অভিষেকের আগে ছিল কেবল একটি। সেখানেও ছিলেন তার পরিবারের সদস্য বড় ভাই নাফিস ইকবাল।
জিম্বাবুয়ের সঙ্গে জাভেদ ওমরকে নিয়ে করেছিলেন ১৩৩ রান। এছাড়া বাকি সাতটিতেই ছিলেন তামিম। তার সঙ্গী হয়ে শতরানের চারটি জুটিতে ছিলেন ইমরুল কায়েস। একটি করে ছিলেন সৌম্য সরকার, জুনায়েদ সিদ্দীক ও মাহমুদুল হাসান জয়।
শান্ত ও জাকিরের শান্ত মেজাজের ব্যাটিংয়ে এই টেস্টে এখন পর্যন্ত স্বপ্নের মতো সেশন কাটিয়েছে বাংলাদেশ। কোনও উইকেট না হারিয়ে বাংলাদেশের রান ১১৯। অভিষিক্ত জাকির ৫৫ ও শান্ত ৬৪ রানে অপরাজিত আছেন। ভারত ৫১৩ রানের লক্ষ্য দিয়ে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিল। লক্ষ্য থেকে এখনও ৩৯৪ রান দূরে বাংলাদেশ। হাতে আছে পাঁচ সেশন।