তীব্র তাপদহন: হিটস্ট্রোক থেকে সতর্ক থাকা জরুরি

জ. ই বুলবুল: নজিরবিহীন তাপদহন ও গরম আবহাওয়ায় জনজীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। এসময় হিটস্ট্রোক, জ্বর-সর্দিসহ নানা রোগবালাই ছড়িয়ে পড়েছে। প্রায় ৫৮ বছর পর দেশে এই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রিতে উঠেছে। আমাদের শরীরে তাপ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে শরীরের তাপমাত্রা ১০৫০ ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলে তাকে হিটস্ট্রোক বলে।

স্বাভাবিক অবস্থায় রক্ত দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। গরমের দিনে মারাত্মক স্বাস্থ্যগত একটি সমস্যার নাম হিটস্ট্রোক। কোনো কারণে শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে ত্বকের রক্তনালি প্রসারিত হয় এবং অতিরিক্ত তাপ পরিবেশে ছড়িয়ে দেয়। প্রয়োজনে ঘামের মাধ্যমেও শরীরের তাপ কমানো হয়। কিন্তু প্রচন্ড গরম ও আর্দ্র পরিবেশে অনেকক্ষণ থাকলে বা পরিশ্রম করলে তাপ নিয়ন্ত্রণ আর সম্ভব হয় না। এতে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বিপদসীমা ছাড়িয়ে যায় এবং তখনই হিটস্ট্রোক দেখা দেয়। এছাড়াও ঘরে ঘরে জ্বর- সর্দির মতো নানা রোগের কারণ দেখা দিয়েছে। তাই সতর্ক থাকার পরামর্শ রয়েছে।

এবিষয়ে সিএমএস এর মেডিসিন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ লে: কর্ণেল ডা.নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, শিশুদের বাইরে বের করার দরকার নেই, বার বার শরীর মুছে দিন, ডাবের পানি,স্যালাইন সরবত,পানি বেশি বেশি খাওয়াবেন, খাবেন। বয়োবৃদ্ধের বাড়তি যত্ন নিতে হবে।

শিগগিরই গরম থেকে মিলবে না রেহাই: আবহাওয়া অফিস সুএে তাই জানা গেছে, সেজন্য আমাদের এ সময় টা একটু বাড়তি সতর্কতা জরুরি রয়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়োবৃদ্ধ যারা রয়েছেন, তাদের প্রতি যত্নবান হোন প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রাখতে পারেন।

হিটস্ট্রোকের লক্ষণ :

১. তাপমাত্রা দ্রুত ১০৫০ ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যায়। ২. ঘাম বন্ধ হয়ে যায়। ৩. ত্বক শুষ্ক ও লালাভ হয়ে যায়। ৪. নিঃশ্বাস দ্রুত হয়। ৫. নাড়ির স্পন্দন ক্ষীণ ও দ্রুত হয়। ৬. রক্তচাপ কমে যায়। ৭. খিঁচুনি, মাথা ঝিমঝিম করা, অস্বাভাবিক ব্যবহার, হ্যালুসিনেশন, অসংলগ্নতা ইত্যাদি। ৮. প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়। ৯. রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়।

আক্রান্ত হলে করণীয় :

প্রাথমিকভাবে হিটস্ট্রোকের আগেই যখন হিট ক্র্যাম্প বা হিট এক্সাসশন দেখা দেয়, তখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে হিটস্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি নিজেই যা করতে পারেন, তা হলো:

১. দ্রুত শীতল কোনো স্থানে চলে যান। ফ্যান বা এসি ছেড়ে দিন। ২. ভেজা কাপড়ে শরীর মুছে ফেলুন। সম্ভব হলে গোসল করুন। ৩. প্রচুর পানি ও খাওয়ার স্যালাইন পান করুন। চা বা কফি পান করবেন না।যদি হিটস্ট্রোক হয়েই যায়, রোগীকে অবশ্যই দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে, ঘরে চিকিৎসা করার কোনো সুযোগ নেই।

এ ক্ষেত্রে রোগীর আশপাশে যারা থাকবেন, তাদের করণীয় হলো :

১. রোগীকে দ্রুত শীতল স্থানে নিয়ে যান। ২. গায়ের কাপড় খুলে দিন। ৩. শরীর পানিতে ভিজিয়ে দিয়ে বাতাস করুন। এভাবে তাপমাত্রা কমাতে থাকুন।৪. সম্ভব হলে কাঁধে, বগলে ও কুঁচকিতে বরফ দিন। ৫. রোগীর জ্ঞান থাকলে তাকে খাওয়ার স্যালাইন দিন। ৬. দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন।৭. সবসময় খেয়াল রাখবেন, হিটস্ট্রোকে অজ্ঞান রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস ও নাড়ি চলছে কি না। প্রয়োজন হলে কৃত্রিমভাবে নিঃশ্বাস ও নাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করতে হতে পারে। ৮. হিটস্ট্রোকে জীবন বিপদাপন্ন হতে পারে। তাই এই গরমে এর থেকে সতর্ক থাকুন। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হবেন না।

লেখক : জনস্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক ও সিনিয়র সাংবাদিক।

Print Friendly

Related Posts