চোটের কারণে সাকিব আল হাসান আগে থেকেই নেই। তামিম ইকবালকেও কোমরে ব্যথার কারণে বাদ দিতে হচ্ছে । দেশসেরা এ দুই ক্রিকেটারকে ছাড়াই আজ (বুধবার) আফগানিস্তানের বিপক্ষে মাঠে গড়াচ্ছে একমাত্র টেস্ট। দেশের কন্ডিশনে যে ম্যাচটি হয়ে উঠতে পারে সাহসী সিদ্ধান্তের প্রতীক।
সবুজ উইকেটে তিন পেসার নিয়ে খেলা। যে দেশ স্পিন কন্ডিশনের জন্য বিশ্বখ্যাত, একাদশে বোলিং ইউনিট সাজানো হতো স্পিনার দিয়ে, সেই দেশে পেস বোলারনির্ভরতা রোমাঞ্চকর গল্পের মতোই। আফগানিস্তানের স্পিন বোলিং ইউনিট শক্তিশালী হওয়ায় কৌশলে পরিবর্তন আনতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
সাকিবের না থাকাও ঘাসের উইকেট বানাতে কিছুটা প্রভাবিত করেছে টিম ম্যানেজমেন্টকে। কারণ, বাঁহাতি এ অলরাউন্ডার থাকলে একজন বোলার বেশি নিয়ে খেলা যায়। ব্যাটিং লাইনআপও তাতে ঠিক থাকে। অধিনায়কের অনুপস্থিতি এবং পাঁচ বোলার খেলানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত যাবতীয় পরিবর্তনে নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। এত কিছু করার একটাই উদ্দেশ্য, মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া টেস্টে আফগানিস্তানকে হারানো।
ম্যাচের দুই দিন আগে অধিনায়ক লিটন কুমার দাস অফিসিয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন ভালো ক্রিকেট খেলার কথা। স্পোর্টিং উইকেটের বড় ইনিংস গড়ে তোলাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন তিনি। তবে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ভালো খেলার সমূহ সম্ভাবনা দেখছেন। বিশেষ করে পাঁচ সদস্যের শক্তিশালী একটা পেস বোলিং ইউনিট থাকায় প্রতিপক্ষের ২০ উইকেট শিকার করা কঠিন মনে হচ্ছে না তাঁর কাছে। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে তিনি তাই সাবলীল ভাষায় বলে গেলেন, ‘তিন কেন, চারজন পেসারও খেলাতে পারি।’ তাসকিন আহমেদ খেলার জন্য পুরোপুরি ফিট।
জাতীয় দল সূত্রে জানা গেছে, ডানহাতি এ পেসারকে খেলানোর ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় পেসার এবাদত হোসেন। টেস্টের বিশেষজ্ঞ বোলার তিনি। নিউজিল্যান্ডে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের নায়কও। তৃতীয় পেসার বাঁহাতি শরিফুল ইসলাম না খালেদ আহমেদ– এ নিয়ে মধুর সমস্যায় পড়তে হয়েছে টিম ম্যানেজমেন্টকে। তবে দুই ডানহাতির সঙ্গে একজন বাঁহাতি রাখার পক্ষে ভোট বেশি। তাই তৃতীয় পেসার হিসেবে খেলছেন শরিফুল। বাকি দুই স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম। তামিম ইকবাল না থাকায় ব্যাটিং অর্ডারে কিছুটা পরিবর্তন আনা হচ্ছে। জাকির হাসান ও মাহমুদুল হাসান জয় প্রথমবারের মতো ওপেনিংয়ে জুটি বাঁধতে পারেন। চোটের কারণে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে পারেননি জাকির। ভারতের বিপক্ষে অভিষেক করা এই ওপেনারের তৃতীয় টেস্ট হবে এটি। ২০২১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে অভিষেক করা জয়ের নবম টেস্ট হবে একাদশে রাখা হলে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ টেস্ট খেলা জয় ভারত বা আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেননি। মূলত ছন্দে না থাকায় শেষ টেস্টের দলে থেকেও একাদশে ছিলেন না। ব্যাটিং অর্ডারের বাকি জায়গা মোটামুটি নির্দিষ্ট করা– নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, লিটন কুমার দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজের জন্য।
আফগানিস্তান বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে না থাকলেও এই ম্যাচের গুরুত্ব কোনো অংশে কম নয়। বাংলাদেশের কোচ চন্ডিকা মনে করেন, টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়াই ভালো করার প্রেরণা। কোনো সন্দেহ নেই, ক্রিকেটারদের সেভাবেই বার্তা দিয়েছেন তিনি। মিরপুরের এ ম্যাচ দিয়ে বিদেশের কন্ডিশনে খেলার একটা মহড়াও দেওয়া হবে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের জন্য রোমাঞ্চ ছড়ানো একটি ম্যাচ হতে পারে। যেখানে প্রতিপক্ষের চেষ্টা থাকবে জয়ের ছন্দ ধরে রেখে নিজেদের দৃঢ়চেতা মানসিকতার পরিচয় দেওয়া। হাসমতউল্লাহ শাহিদীদের কাছে ভালো খেলার প্রেরণা আছে ২০১৯ সালের জয়। রশিদ খানের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে চট্টগ্রামে বাংলাদেশকে ২২৪ রানে হারানোর স্মৃতি তাদের কাছে এখনও টাটকা। আফগানরা এ পর্যন্ত ছয় টেস্ট খেলে তিনটিতে জিতেছে। ঈর্ষণীয় এই সাফল্য যে কোনো কন্ডিশনে যে কোনো দলের বিপক্ষে লড়াই করার প্রেরণা জোগায়।
এই টেস্ট দিয়ে অধিনায়ক লিটনের অভিষেক। যেখানে তাঁকে পরীক্ষা দিতে হবে ভবিষ্যতের নেতা হিসেবে। সাকিব, তামিমের উত্তরসূরি হিসেবে কেমন করতে পারেন সেদিকে চোখ থাকবে দেশের ক্রিকেটারদের নীতিনির্ধারকদের। টি২০ আর ওয়ানডেতে আগেই অভিষেক করা অধিনায়ক লিটনের আত্মবিশ্বাস আছে। উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে পুরো মাঠ চালাতে চান বুদ্ধিমত্তা দিয়ে। ওয়ানডেতে ভারতের বিপক্ষে সাফল্য পাওয়া লিটনের সমস্যা হবে না। কারণ, মুশফিকুর রহিমের মতো অভিজ্ঞ একজন অগ্রজ অধিনায়ক রয়েছেন তাঁর পাশে। আর মুমিনুল হক তো পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খেলা একজন অধিনায়ক। যিনি কিনা টেস্টে দেশের মাটিতেও তিনজন পেসার খেলানোর জন্য লড়াই করে গেছেন। আজ যে মিরপুরে তিন পেসার নিয়ে খেলার সাহসী সিদ্ধান্ত দেখাতে যাচ্ছে, তা মুমিনুলের দেখানো পথ। তাকেও তো পাচ্ছেন লিটন।