কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে উপনির্বাচন : শেষ হাসি কার

রুবেল মজুমদার: কে কুমিল্লার নতুন মেয়র? দুইবারের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাককু নাকি কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকন্যা তাহসিন বাহার সূচনা? নাকি সবাইকে চমকে দিয়ে কি মেয়র হতে যাচ্ছেন বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সার! এই প্রশ্নের হিসাব-নিকাশ কষছেন কুমিল্লা নগরের আড়াই লাখ ভোটার ও রাজনীতি সচেতনরা।

কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে উপনির্বাচন আগামীকাল শনিবার। সব জল্পনা কল্পনা শেষে জনতার রায় জানা যাবে শনিবার (৯ মার্চ) সন্ধ্যার পর। এই উপ নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতিতে দিনভর ভোট শেষে ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে নগরবাসীকে।

২০২২ সালে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে নির্বাচিত মেয়র ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর চিকিৎসা চলাকালে মারা যান। এরপর কুসিকের মেয়র পদ শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে। শনিবার ১০৫টি ভোট কেন্দ্রের ৬৪০টি কক্ষে ভোট নেওয়া হবে।

সংঘাত-সংঘর্ষ, একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ- ইত্যাদি কারণে কুমিল্লা সিটির উপ- নির্বাচন নিয়ে নগরজুড়ে টানটান উত্তেজনা বিরাজমান। নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও সুন্দর করতে নির্বাচন কমিশনার কর্তৃক নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে কুমিল্লা নগরীকে।

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) থেকে ৪ দিন সিটি এলাকার ২৭ টি ওয়ার্ডে ১০৫টি কেন্দ্রের জন্য প্রতি ওয়ার্ডে ১টি করে পুলিশের মোবাইল টিম, প্রতি ৩ ওয়ার্ডে ১টি পুলিশের স্পেশাল ফোর্স, ২টি রিজার্ভ স্ট্রাইকিং, র্যাবের ২৭টি টিম এবং ১২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েনের করা হয়েছে।এছাড়া প্রতি কেন্দ্রে ৪ জন অস্ত্রসহ ১৪ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন।

উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোভাবাপন্ন ২ প্রার্থী এবং বিএনপির বহিষ্কৃত ২ প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। এদের ডাক্তার তাহসান বাহার সূচনা বাস প্রতীকে, মনিরুল হক সাককু টেবিল ঘড়ি প্রতীকে, নিজামুদ্দিন কায়সার ঘোড়া প্রতীকে এবং নুর উর রহমান মাহমুদ তানিম হাতি প্রতীকে নির্বাচন করছেন।

তবে কে জয়ের হাসি হাসবেন, রয়েছে নির্বাচনী নানা সমীকরণের জটিলতা। তবে মনে করা হচ্ছে নির্বাচনে অনেটাই পিছিয়ে আছেন হাতি প্রতীকের প্রার্থী।

২০১৭ সালের কুসিক নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন প্রথম নির্বাচনে পরাজিত আফজল খানের কন্যা আঞ্জুম সুলতানা সীমা। ধানের শীষ প্রতীকে মনিরুল হক সাককু ৬৮ হাজার ৯৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। সীমা পেয়েছিলেন ৫৭ হাজার ৮৬৩ ভোট।

পরপর দুটি নির্বাচনে জয়লাভের কারণে কুমিল্লা নগরীকে সাককুর দুর্গ হিসেবেই বিবেচনা করা হয়।
যদিও ২০২২ সালের নির্বাচনে সাককু আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত এর কাছে হেরে যান। এ নির্বাচনে প্রথমবার অংশগ্রহণ করে নিজামুদ্দিন কায়সার ভোট পান ২৯ হাজার। যা ছিলো বিএনপির ভোট। ভোটের মাঠে তার পক্ষে এবার বিএনপির নেতা কর্মীদের কাজ করতে দেখা যাচ্ছে, তাই এবারে নির্বাচনের সমীকরণ তাই ত্রিমুখী হওয়ার সম্ভাবনা।

ফলে নগরজুড়ে ত্রিমুখী লড়াইকে আমলে এনে চলছে ভোটের হিসাব-নিকাশ। সাককু কী পারবেন গেল দুইবারের মতো সবাইকে টেক্কা দিয়ে হ্যাট্রিক জয় তুলে নিতে? নাকি মেয়রের আসনে বসবেন প্রথমবার নির্বাচন করা সূচনা, না কি সবাইকে চমকে দিয়ে নগর পিতা হবেন কায়সার?

২৩ ফেব্রুয়ারি প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই ৭ মার্চ পর্যন্ত বিরামহীনভাবে প্রচার চালিয়েছেন প্রধান তিন প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থী। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে দিয়েছেন নানা প্রতিশ্রুতি। নির্বাচনে মেয়র পদে আরও একপ্রার্থী থাকলেও তাদেরকে হিসাবে রাখছেন না কেউ। এ ছাড়া নির্বাচনী এই ডামাডোলের মাঝেও চোখে পড়েনি তার কোনো প্রচার, দেখা মিলেনি পোস্টারও। ফলে ভোটের হিসাব চলছে প্রধান তিন প্রার্থীকে ঘিরেই।

সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, বিএনপি থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কৃত মনিরুল হক সাককু যেসব সমীকরণে মেয়র পদে বিজয়ী হতেন এবার সেসব সমীকরণ আর ধোপে টিকবে না মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কারণ আওয়ামী লীগের যে অংশের সহযোগিতা তিনি গ্রহণ করেন বলে বক্তৃতা দিয়ে বেড়াতেন- সেই অংশেই এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন বাহার কন্যা সূচনা। অন্যদিকে বিএনপির মূল অংশ থেকেই এবারও প্রার্থী হয়েছেন নিজাম উদ্দিন কায়সার। একইসঙ্গে সাককুর জন্য বড় দুঃসংবাদ হচ্ছে, তার সাথে থেকে যেসব বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা কাজ করে বিজয় নিশ্চিত করতেন তাদের বেশিরভাগই অনেক আগে থেকে সাককুর সঙ্গে নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মনিরুল হক সাককু বলেন, কুমিল্লার মানুষ আমাকে ভালোবাসে। আমি মানুষের জন্য কাজ করছি, বিগত দুইবার আমাকে মেয়র নির্বাচিত করেছেন। প্রথমবারের নির্বাচনে যখন বিএনপি অংশ নেয়নি সেবারও জনগণ আমাকে মেয়র বানিয়েছে। পরের বার বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে যখন ভোটারদের কাছে গিয়েছি, তারা আমাকে ফিরিয়ে দেননি। গত নির্বাচনে আমি জয় লাভ করেছি, কিভাবে আমাকে হারানো হয়েছে দেশের মানুষ তা জানে, জনগণের প্রতি আমার আস্থা আছে। জনগণেরও আমার ওপর আস্থা আছে। জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী আমি।

অপরদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী ডাক্তার তাহসিন বাহার সূচনা বলেন, সিটি কর্পোরেশনে নানা সমস্যা আছে, আমি নির্বাচিত হলেই এইগুলো সমাধান করবো। কুমিল্লার মানুষ আমার বাবাকে ভালোবাসেন। বাবা সব সময় এই কুমিল্লার মানুষের জন্য কাজ করেছেন,কুমিল্লার আওয়ামী লীগ আজ ঐক্যবদ্ধ, শনিবার বিশাল ব্যবধানে বাস প্রতীকের জয় হবে।

ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী নিজামুদ্দিন কায়সার বলেন, দানব ও মুনাফিক (সাককু-বাহার) থেকে কুমিল্লার মানুষ মুক্তি চায়, চারদিকে শুধু একটি শব্দ পরিবর্তন আর পরিবর্তন, ইনশাআল্লাহ ৯ তারিখ ঘোড়ার জয় হবে।

আওয়ামী লীগের আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী নূর-উর রহমান তানিম বলেন, কুমিল্লার মানুষ একজনের আধিপত্য পছন্দ করছে না আর, মানুষ পরিবর্তনে বিশ্বাসী, ইনশাল্লাহ জয়ের ব্যাপারের শতভাগ আত্মবিশ্বাসী আমি ।

Print Friendly

Related Posts