ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা অলিউল হক রুমি মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
সোমবার (২২ এপ্রিল) ভোরে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার পারিবারিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
অভিনেতার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তিনি কোলন ক্যানসারে ভুগছিলেন। শুরুতে চেন্নাইয়ে গিয়ে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। পরে দেশে ফিরে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
অভিনয়ে তিন দশকের বেশি সময় পার করেছেন রুমি। দীর্ঘ এ পথচলায় অভিনয় করেছেন অসংখ্য নাটক ও সিনেমায়। ১৯৮৮ সালে রুমির অভিনয়ের শুরু থিয়েটার বেইলি রোডের ‘এখনো ক্রীতদাস’ নাটকের মধ্য দিয়ে। একই বছর ‘কোন কাননের ফুল’ নাটকের মাধ্যমে ছোট পর্দায় অভিষেক হয় তার। টেলিভিশনের পাশাপাশি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। ২০০৯ সালে ‘দরিয়া পাড়ের দৌলতী’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে বড়পর্দায় অভিষেক হয় অলিউল হক রুমির।
তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটক হলো—‘ঢাকা টু বরিশাল’, ‘আমেরিকান সাহেব’, ‘জার্নি বাই বাস’, ‘বাকির নাম ফাঁকি’, ‘যমজ সিরিজ’, ‘কমেডি ৪২০’, ‘চৈতা পাগল’, ‘জীবনের অলিগলি’, ‘মেঘে ঢাকা শহর’ ইত্যাদি।
বরগুনায় জন্ম রুমির। তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হক। মা হামিদা হক। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন রুমি। তিনি স্ত্রী ও দুই সন্তান রেখে গেছেন।
রুমির মৃত্যুতে শোবিজ পাড়ায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
তিনি অভিনয়ের আগে সংবাদপত্রে কাজ করতেন। তার মৃত্যুর পর স্মৃতিচারণে সাংবাদিক আশিষ সৈকত সে কথা উল্লেখ করেছেন।
তিনি লেখেন- রুমি ভাইকে পেয়েছিলাম ইত্তেফাকে গিয়ে। ২০১২ সালে প্রথম আলো ছেড়ে ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হিসেবে যোগ দেই ইত্তেফাকে। বসতাম তখন ইত্তেফাক ভবনের ৫তলায়। একদিন হটাৎ করে তিনি ফোন করে আমার রুমে আসতে চাইলেন। বললাম এখনই চলে আসুন। এর আগে পরিচয় হলেও এত ঘনিষ্ঠ ভাবে কথা হয়নি তখনও। অনেক কথা অনেক গল্প। কাজ করতেন পেজ মেকিং বিভাগে। মনপ্রান ভরপুর ছিল সৃষ্টির আনন্দে। কাজের ফাঁকে ফাঁকেই অভিনয় করে তিনি তখনই জনপ্রিয়।এরপর টানা ছয় বছর আমরা একসাথেই পাড়ি দিয়েছি। ইত্তফাকের পিকনিক বা বড় কোন অনুষ্ঠান মানেই রুমি ভাইএর ছিল সরব উপস্থিতি। মানুষকে কিভাবে ভালোবাসতে হয়, সম্মান দিতে হয় তা ছিল তার কাছ থেকে শেখার বিষয়। ইত্তেফাক ছেড়ে আসার আগের দিন আমার রুমে এসে এসে অনেক কথা বললেন। যাবার সময় হাত মেলানোর সময় অনেকক্ষণ হাত ধরে ছিলেন। এটা আমার এখনও মনে পরে। এরপর প্রেসক্লাবসহ অনেক জায়গায় দেখা হয়েছে। সেই হাসি মুখ।কয়েক মাস আগে আমাদের বার্তা সম্পাদক আকমলের কাছে শুনলাম তার অসুস্থতার কথা। ইত্তেফাকে সহকর্মীদের সাথে খবর নিয়ে জানলাম ক্যানসার ফোর্থ স্টেজ। কিছুই করার নেই। আজ ভোরে সেই দুঃসংবাদ। আর নেই রুমি ভাই। আমাদের অক্ষমতাকে ক্ষমা করবেন রুমি ভাই।