বরিশাল সংবাদদাতা : বরিশালের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদে গাড়ির হর্ন বাজানোকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত ঘটনায় থ্রি-হুইলার (মাহিন্দ্রা-সিএনজি) শ্রমিকদের সাথে বাস শ্রমিকদের মারামারিতে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে।
শনিবার (৪ মে) দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত দফায় দফায় বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধ করে সেখানকার বাস ও মাহিন্দ্রা শ্রমিকরা। রাতেও উভয় গ্রুপ তুমুল সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, মাদারীপুরের উদ্দেশে দুপুর ১২টার দিকে একটি বাস যাত্রী নিয়ে নথুল্লাবাদ টার্মিনাল এলাকা দিয়ে যাচ্ছিল। ওইসময় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী একটি মোটরসাইকেলকে সাইড নেওয়ার জন্য বাসের চালক হর্ন বাজান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মোটরসাইকেলে থাকা আরোহীরা বাসের চালককে মারধর করেন। আর তাকে বাঁচাতে আরেকজন এগিয়ে গেলে তাকেও মারধর করা হয়।
বাসচালক শাকিল ও সৌরভকে মারধরের খবর ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এ সময় তারা বিক্ষোভ করে এবং হামলাকারীদের আটকের চেষ্টা করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে একপর্যায়ে টার্মিনালের সামনের বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন। পাশাপাশি টার্মিনাল এলাকায় থাকা বরিশাল জেলা সড়ক পরিবহন বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের নব নির্বাচিত সভাপতি কাজী কবিরের ব্যানার ভাঙচুর করেন। পরবর্তীতে দীর্ঘ আলোচনা শেষে সমঝোতার আশ্বাসে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিত স্বাভাবিক হয়।
আহতরা জানান, বহিরাগতরা তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এরা বরিশাল জেলা সড়ক পরিবহন বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের নব নির্বাচিত সভাপতি কাজী কবিরের ঘনিষ্ঠজন। কবিরের লোকজন কিছুদিন ধরেই নথুল্লাবাদ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। কিন্তু তারা কেউ পরিবহন সেক্টরের সঙ্গে জড়িত নন।
এদিকে এ ঘটনার রেশ ধরে শনিবার সন্ধ্যার পর বাস ও থ্রি-হুইলার শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় ১৫/২০ থ্রি-হুইলার (মাহিন্দ্রা-সিএনজি) ও ৩/৪টি বাস ভাঙচুর করা হয়েছে। পুলিশ টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এসময় নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে কোনো বাস না ছাড়লেও ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর থেকে আসা যাত্রীবাহী বাসসহ সকল যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক ছিলো।
থ্রি-হুইলার চালক সোহেল বলেন, বাস শ্রমিকরা নিজেরা মারামারি করে বাস বন্ধ করেছে। আমরা যাত্রীসেবা দিতে ছিলাম। তাই তারা পঞ্চাশটারও বেশি থ্রি-হুইলার ভাঙচুর করেছে।
গৌতম রায় নামে আরেক থ্রি-হুইলার চালক অভিযোগ করে বলেন, তাদের গাড়ি যখন বাস শ্রমিকরা ভাঙচুর করে পুলিশ কিছু বলেনি। উল্টো পুলিশ এসে থ্রি-হুইলার চালক -শ্রমিকদের পিটিয়েছে। এ সময় তাদের অন্তত ২০ জন শ্রমিক আহত হয়। তাদের বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
অপরদিকে বাস শ্রমিকরা জানিয়েছেন, মাহিন্দ্রা শ্রমিকরা আকস্মিক তাদের ওপর সন্ধ্যার পর হামলা চালায়। যা প্রতিহত করতে গেলে তারা টার্মিনাল সংলগ্ন এলাকায় থাকা ১০-১২টি বাস ভাঙচুর করে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার আলী আশরাফ ভুঞা জানান, জেলা সড়ক পরিবহন বাস-মিনিবাস-কোচ-মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের কমিটি নিয়ে দুপুর ১২টার দিকে দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। এরপর সন্ধ্যার দিকে বাস ও থ্রি-হুইলার শ্রমিকদের মধ্যে ফের সংঘর্ষ বাঁধে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে।