অভিজ্ঞ ও জাত ব্যাটাররা যেটা করতে ব্যর্থ হলেন, সেটাই করে দেখালেন জিম্বাবুয়ের সাত ও দশ নম্বরে নামা ব্যাটার। জনাথন ক্যাম্পবেল ও ফারাজ আকরামের বিধ্বংসী ইনিংসে নিশ্চিত জয়ের ম্যাচে হারের শঙ্কায় পড়েছিল বাংলাদেশ। শেষ ওভারে আতঙ্ক বাড়িয়েছিলেন ১১তম ব্যাটার ব্লেজিং মুজারাবানি। তবে শেষ পর্যন্ত তাদের অবিশ্বাস্য জয়ের নায়ক হতে দেননি টাইগার বোলাররা। টানা তৃতীয় জয়ে দুই ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করেছে শান্ত বাহিনী। তবে ঘরের মাঠে সিরিজ জিততে ঘাম ঝরাতে হলো বাংলাদেশকে।
চট্টগ্রামে মঙ্গলবার (৭ মে) সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে ৯ রানের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ১৬৬ রান তাড়া করতে নেমে ৭৩ রানে ৬ উইকেট হারানো জিম্বাবুয়ে ক্যাম্পবেল ও ফারাজের বিধ্বংসী ইনিংসে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৫৬ রানে পৌঁছে যায়। ক্যাম্পবেল ১০ বলে ২১ রান করে আউট হলেও ১৯ বলে ৩৪ রানে অপরাজিত ছিলেন ফারাজ। টাইগারদের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেয়া মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন খরচের বেলাতেও ছিলেন সবার ওপরে। ৪ ওভারে তিনি দেন ৪২ রান।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ১৬৬ রানের লক্ষ্যটা যে খুব একটা কঠিন নয়, ম্যাচশেষে যেটা অকপটে স্বীকার করে নিলেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক সিকান্দার রাজা। শেষদিকে লড়াই জমে উঠলেও তাদের শুরুটা ছিল হতাশার। প্রথম দু্ই ওভার দেখেশুনে ব্যাট চালায় দুই ওপেনার। তবে তৃতীয় ওভারে তুলে মারতে গিয়ে উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশকে ব্রেকথ্রু এনে দেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। টাইগার পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের শট বলে তুলে মারতে গিয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে বন্দি হন জয়লর্ড গাম্বি। ৮ বলে ৯ রানে থামে তার ইনিংস। এক ওভার পর আক্রমণে এসে আঘাত হানেন তৃতীয় ম্যাচে সুযোগ পাওয়া তানজিম হাসান সাকিব। তাকে লং অনের ওপর দিয়ে তুলে মারার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন ব্রায়ান বেনেট। ৮ বল ৫ রান করে তানজিমের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে এসে জিম্বাবুয়ের ক্ষত বাড়ান সাইফউদ্দিন। ৭ বলে ৭ রান করা ক্রেইগ আরভিনকে বোল্ড করেন টাইগার অলরাউন্ডার। ৩৩ রানের বিনিময়ে ৩ উইকেট হারিয়ে পাওয়ার প্লে শেষ করে জিম্বাবুয়ে। দলের শুরুর ধাক্কা সামলানোর দায়িত্ব কাঁধে নিতে ব্যর্থ হন অধিনায়ক সিকান্দার রাজাও। ৫ বলে ১ রান করে রিশাদ হোসেনের বলে কট বিহাইন্ড হন রাজা। ওপেনার মারুমানি যা একটু লড়াইয়ের আভাস দিয়েছিলেন, তাকে ক্রিজে স্থায়ী হতে দেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ২১ মাস পর আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে বোলিংয়ে এসে মারুমানিকে শিকার করেন তিনি। দলীয় ৭৩ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। মাদান্দেকে (১১) লিটন দাসের ক্যাচে পরিণত করে ম্যাচের নিজের প্রথম উইকেট তুলে নেন তাসকিন। তাতে জয় একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের।
তবে সপ্তম উইকেট জুটিতে টাইগার শিবিরে কিছুটা ভয়ের সঞ্চার করেন জনাথন ক্যাম্পবেল। আগের ম্যাচে ২৪ বলে ৪৫ রান করা জিম্বাবুয়ের এ অলরাউন্ডার এ ম্যাচে ৪ ছক্কায় টাইগার বোলারদের ভীত করে তোলেন। তবে এদিন বেশিক্ষণ ক্রিজে রাজত্ব করতে পারেননি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা ক্যাম্পবেল। ইনিংসের ১৪তম ওভারে তানভীরকে টানা ২ ছক্কা মারার পরের বলে লাইন মিস করে লিটনের হাতে ধরা পড়েন তিনি। ১০ বলে ২ ছক্কা ও ২ চারে ২১ রানে থামে তার ইনিংস। তবে ক্যাম্পবেল মাঠ ছাড়লেও শেষদিকে টাইগার শিবিরে আরেকবার ভয় ছড়ান জিম্বাবুয়ের দশ নম্বর ব্যাটার ফারাজ আকরাম। ১৫তম ওভারে রিশাদকে ২ ছক্কা হাঁকানোর পর ১৭তম ওভারে সাইফউদ্দিনকে পরপর দুটি ৪ হাঁকান তিনি।
তাতে শেষ তিন ওভারে জয়ের জন্য জিম্বাবুয়ের প্রয়োজন পড়ে ৩৬ রান। ১৮তম ওভারে তানজিম ৯ আর ১৯তম ওভারে মাত্র ৬ রান দিয়ে বাংলাদেশকে নিরাপদ স্থানে রাখেন তাসকিন। কিন্তু শেষ ওভারে নতুন করে আতঙ্ক ছড়ান ১১ নম্বরে নামা মুজারাবানি। সাইফউদ্দিন প্রথম বলে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে ফেরালেও পরের দুই বলে দুটি বাউন্ডারি দেন। তাতে শেষ ৩ বলে দরকার পড়ে ১৩ রানের। তবে টাইগার পেসার কোনো অঘটন হতে দেননি। পরের ৩ বলে ৩ রান দিয়ে নিশ্চিত করেন বাংলাদেশের জয়। ১৯ বলে ২ ছক্কা ও ২ চারের মারে ৩৪ রানে অপরাজিত থাকেন ফারাজ।
এর আগে শান্ত-লিটনদের ব্যর্থতা কাটিয়ে হৃদয়ের ৫৭ ও জাকের আলীর ৪৪ রানের ইনিংসে ভর করে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৬৫ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের হয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেন মুজারাবানি। ৪ ওভার বল করে মাত্র ১৪ রান খরচায় ৩ উইকেট তুলে নেন এ পেসার। পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৮ ও দ্বিতীয় ম্যাচে ৬ উইকেটের জয় পেয়েছিল শান্ত বাহিনী। তাতে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে সিরিজ নিশ্চিত করল হাথুরুর শিষ্যরা।