সুইজারল্যান্ডে প্রথমবারের মতো ব্যবহৃত হল এক মিনিটেরও কম সময়ে ব্যথা-বেদনাহীন মৃত্যু বা আত্মহত্যার জন্য তৈরি বিশেষ যন্ত্র ‘সুইসাইড পড’। আর এই ‘সুইসাইড পড’ ব্যবহার করেই স্বেচ্ছামৃত্যু বরণ করেছেন ৬৪ বছর বয়সী একজন বৃদ্ধা। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।
সংবাদ মাধ্যম নিউইয়র্ক পোস্ট জানিয়েছে, গত ২৩ সেপ্টেম্বর সোমবার সুইজারল্যান্ডের একটি মাঠে বসানো হয় সুইসাইড পড। সেখানেই যন্ত্রটি প্রথমবারের জন্য ব্যবহার করা হয়। এরপরই আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া এবং সহায়তার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন ওই যন্ত্র প্রস্তুতকারী সংস্থার সহ-সভাপতিসহ চার জন।
সুইজারল্যান্ডের স্বাস্থ্য বিষয়ক মন্ত্রী এলিজাবেথ বাউমে-শ্লেইডার জানিয়েছেন, এই যন্ত্রটি পণ্য সুরক্ষা আইনের প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করে না। তা ছাড়া ওই যন্ত্রে নাইট্রোজেনের ব্যবহারও আইনসম্মত নয়। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে সুইসাইড পড প্রস্তুতকারী সংস্থা। তাদের দাবি, ওই যন্ত্র ব্যবহারে তাদের আগেই আইনি ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল।
‘সুইসাইড পড’ এমন একটি যন্ত্র, যেখানে এক মিনিটের মধ্যে কোন ব্যক্তির মৃত্যু ঘটানো সম্ভব। ছোট্ট ক্যাপসুলের মতো দেখতে এই যন্ত্রটি বহনযোগ্য। যেখানে প্রয়োজন, সেখানেই নিয়ে যাওয়া যায়। মূল মেশিন থেকে বিচ্ছিন্ন করলে একে দেখতে লাগে খানিকটা কফিনের মতো। একবার শুয়ে পড়লেই নিমেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ব্যবহারকারী।
২০১৯ সালে যন্ত্রটির প্রাথমিক প্রোটোটাইপ তৈরি হয়। এর পর ২০২১ সালে ব্যবহারে আইনি ছাড়পত্র পায় সারকো পড। যদি কোন ব্যক্তি সুইসাইড পড ব্যবহার করেন সেক্ষেত্রে তাকে এই বিশেষ যন্ত্রের মধ্যে বসিয়ে নাইট্রোজেন গ্যাস ভর্তি করে দেওয়া হয়। এরপর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ওই ব্যক্তি ঘুমিয়ে পড়েন। তারপর শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান।
যন্ত্রটিতে কৃত্রিম উপায়ে অক্সিজেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রয়েছে। কফিনে ঢুকে আত্মহত্যায় ইচ্ছুক ব্যক্তি একটি বোতাম টিপলেই নাইট্রোজেনে ভরে যায় ক্যাপসুলটি। প্রথমে অক্সিজেন কমে আসায় অস্বস্তি বোধ করলেও ধীরে ধীরে জ্ঞান হারান তিনি। পরে হাইপোক্সিয়া এবং হাইপোক্যাপনিয়ায় মারা যান।
শুনতে অবাক লাগলেও সুইজারল্যান্ডের আত্মহত্যার অধিকার রয়েছে নাগরিকদের। দেশটিতে আত্মহত্যার ঘটনা প্রায়শই ঘটে। সেখানে আত্মহত্যায় সহায়তা করাও আইনত বৈধ। শুধুমাত্র ২০২০ সালেই ১৩০০ ব্যক্তিকে আত্মহত্যায় সহায়তা করা হয়েছিল।