তিন দিনেই শেষ ইন্দোর টেস্ট

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ তিন দিনেই শেষ ইন্দোর টেস্ট। কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতাই দাঁড় করাতে পারেনি বাংলাদেশ। ব্যাটে-বলে দাপট দেখানো ভারতের কাছে ইনিংস ব্যবধানে হারতে হলো মুমিনুল হকদের। প্রথম ইনিংসের চেয়ে পারফরম্যান্সে কিছুটা উন্নতি হলেও এলোমেলো বাংলাদেশকেই পাওয়া গেছে দ্বিতীয় ইনিংসে। তৃতীয় দিনের শেষ সেশনে ২১৩ রানে অলআউট হয়ে বাংলাদেশ হেরেছে ইনিংস ও ১৩০ রানে।

সেই ছন্নছাড়া ব্যাটিং আরেকবার প্রদর্শিত হলো ইন্দোরে। যেখানে মুশফিকুর রহিমের লড়াকু ৬৪ রানের ইনিংসটাই কেবল প্রাপ্তি হয়ে থাকলো হতাশায় ঘেরা টেস্ট থেকে। ভালো শুরু করেও ইনিংস লম্বা করতে না পারা লিটন দাস (৩৫) ও মেহেদী হাসান মিরাজের (৩৮) মাঝারি মানের ইনিংসও অবদান রেখেছে বাংলাদেশের রান ২০০ ছাড়ানোর পথে।

দ্বিতীয় দিন শেষে ৬ উইকেটে ৪৯৩ রান করা ভারত তৃতীয় দিনের শুরুতে ওই স্কোরেই ঘোষণা করে তাদের প্রথম ইনিংস। দুই ইনিংস মিলেও এই স্কোরের কাছাকাছি যেতে পারেনি বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ১৫০ রানে অলআউট হওয়া টাইগাররা দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে গেছে ২১৩ রানে। ইনিংস ও ১৩০ রানের বড় জয়ে দুই ম্যাচের সিরিজ ১-০তে এগিয়ে গেল ভারত।

নিজেদের প্রথম ইনিংস থেকে শিক্ষা নিতে পারেনি বাংলাদেশ। নইলে আবারও কেন একইভাবে ভেঙে পড়বে টপ অর্ডার? দুই ওপেনার ইমরুল কায়েস (৬) ও সাদমান ইসলাম (৬) প্রথম ইনিংসের মতোই দলকে বিপদে ফেলে ১৬ রানের মধ্যে ফিরে গেছেন প্যাভিলিয়নে।

এমনিতেই টেস্ট দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান মুমিনুল। এর ওপর এবার অধিনায়কত্ব পাওয়ায় দায়িত্ব আরও বেশি তার। কিন্তু প্রত্যাশার দাবি মোটেও পূরণ করতে পারলেন না তিনি। দ্বিতীয় ইনিংসে আউট হয়ে গেছেন মাত্র ৭ রানে। দ্রুত দুই ওপেনারকে হারালে দায়িত্বশীল একটি ইনিংস প্রত্যাশা ছিল তার কাছ থেকে। ভারত একবার রিভিউ নিলেও বেঁচে গিয়েছিলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। তবে পরে রিভিউয়েই প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয়েছে সামির বলে এলবিডাব্লিউ হওয়া মুমিনুলকে।

হতাশ করেছেন মোহাম্মদ মিঠুনও। মাত্র ১ ওভার আগেই যেখানে উইকেট হারিয়েছে দল, সেখানে ঠান্ডা মাথার ব্যাটিংই প্রয়োজন। বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেট হলে তো অবশ্যই। মিঠুন তা মানলেন কই! মুমিনুলের বিদায়ের পরপরই ফিরে গেছেন বাজে শট খেলে। মোহাম্মদ সামির লাফিয়ে ওঠা বল পুল করতে গিয়ে শর্ট মিডউইকেটে সহজ ক্যাচ দেন তিনি মায়াঙ্ক আগারওয়ালের হাতে। যাওয়ার আগে করেন ১৮ রান।

বিপদ আরও বাড়ে মাহমুদউল্লাহর বিদায়ে। লাঞ্চ থেকে ঘুরে এসে মুশফিকের সঙ্গে প্রতিরোধ গড়ার ইঙ্গিত দিলেও টিকতে পারেননি। সামির বলে স্লিপে ক্যাচ ছাড়া রোহিত শর্মা এই পেসারের বলেই শাপমোচন করেন মাহমুদউল্লাহর ব্যাট ছুঁয়ে আসা বল তালুবন্দি করে। মাহমুদউল্লাহ করেন ১৫ রান।

৭২ রানে ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশের আশা জাগে মুশফিক ও লিটনের ব্যাটে। ক্রিজে এসেই নিজের স্বভাবসুলভ ব্যাটিং চালিয়ে যান লিটন। চমৎকার সব শটে দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথমবার ভারতীয়দের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন তিনি। কিন্তু তার এই আক্রমণাত্মক মেজাজই কাল হয়ে দাঁড়ালো। ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে রিটার্ন ক্যাচ দিয়ে ৩৫ রানে ফেরেন এই ব্যাটসম্যান। এরই সঙ্গে ভাঙে ষষ্ঠ উইকেটে মুশফিকের সঙ্গে গড়া তার ৬৩ রানের জুটি।

তার আউটের পর মুশফিক-মিরাজ মিলে আরও একটি ৫০ ছাড়ানো জুটি গড়েন। তাতে অবশ্য ইনিংস ব্যবধানে হার ঠেকানো যায়নি। মুশফিক একপ্রান্ত আগলে রাখলেও অন্যপ্রান্ত থেকে উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। আর এই ব্যাটসম্যানের ১৫০ বলে ধৈর্যশীল ইনিংসের ইতি ঘটলে ‍হারটা সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। যার আনুষ্ঠানিকতা সারেন অশ্বিন শেষ ব্যাটসম্যান এবাদত হোসেনকে ফিরিয়ে।

দুই ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা নিয়েছেন সামি। প্রথম ইনিংসে ৩ উইকেট নেওয়া এই পেসার দ্বিতীয় ইনিংসে ৩১ রান দিয়ে পেয়েছেন ৪ উইকেট। ৩ উইকেট শিকার অশ্বিনের। আরেক পেসার উমেশ নিয়েছেন ২ উইকেট। ভারতীয় বোলারদের সাফল্যময় টেস্টে ম্যাচসেরা হয়েছেন অবশ্য মায়াঙ্ক আগারওয়াল। ২৪৩ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলে তিনি একাই গড়ে দিয়েছেন পার্থক্য!

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts