মেট্রো নিউজ : ঘরে বসেই জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন কিংবা নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করুন। এখন আর জাতীয় পরিচয়পত্র হালনাগাদ করার জন্য কেন্দ্রে গিয়ে লাইনে দাড়িয়ে থাকার প্রয়োজন নেই। দরকার ইন্টারনেটে সংযুক্ত একটি কম্পউটার। শুধু একটি ওয়েবসাইটে ঢুকেই আপনি ঘরে বসেই আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের যাবতীয় কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন খুব সহজেই। চলুন তাহলে সেই সহজ নিয়ম এবং প্রক্রিয়াগুলো জেনে নেই।
যে যে সুবিধাগুলো পাবেন অনলাইনে
* তথ্য সংশোধন ও হালনাগাদ
* ছবি পরিবর্তন
* ঠিকানা পরিবর্তন
* ভোটার এলাকা স্থানান্তর
* পুনর্মুদ্রণ
* ডাটাবেইসে নিজের তথ্য দেখা
* আবেদনপত্রের হাল অবস্থা জানা
প্রথম ধাপ
নিবন্ধনের জন্য যেতে হবে নির্বাচন কমিশন অফিসের নির্ধারিত ওয়েবসাইটে: https://services.nidw.gov.bd/registration
এরপর ক্লিক করতে হবে ‘রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণ করতে চাই’ অংশে। এই সাইট https ফরম্যাটে হওয়ায় আপনার ফায়ারফক্স ব্রাউজার হলে লেখা আসতে পারে This Connection is Untrusted. এ ক্ষেত্রে সমাধান হলো প্রথমে ‘I Understand the Risks’-এ ক্লিক করুন। এরপর On the warning page…লেখা আসবে। ‘I Understand the Risks’-এ ক্লিক করতে হবে। এরপর ‘Add Exception’-এ ক্লিক করে পরে ‘Confirm Security Exception’-এ ক্লিক করলে একটি পেজ ওপেন (অনলাইন ফরম) হবে।
আপনি ভোটার হয়ে থাকলে বা আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র করে থাকলে নিবন্ধনের জন্য এই ফরমটি পূরণ করতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, জন্ম তারিখ, মোবাইল নম্বর (এই নম্বরে ভেরিফিকেশন কোড পাঠানো হবে), ইমেইল ঠিকানা, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা দিয়ে পাসওয়ার্ড দিতে হবে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ১৩ সংখ্যার হলে অবশ্যই প্রথমে আপনার জন্ম সাল দিতে হবে। ধরা যাক, আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ৩৯২৮৫০৬৯৫৫৬৫৫ ও জন্মসাল ১৯৮৫। আপনাকে পূরণ করতে হবে ১৯৮৫৩৯২৮৫০৬৯৫৫৬৫৫। ভোটার হওয়ার সময় দেওয়া তথ্য অনুসারে বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানার ঘরে বিভাগ, জেলা, উপজেলা/থানা নির্বাচন করতে হবে। পাসওয়ার্ড ৮ থেকে ১২ ডিজিটের হতে হবে এবং তাতে থাকতে হবে বড় হাতের অক্ষর ও সংখ্যা। যেমন- InfoPedia71
সব তথ্য দেওয়ার পর ফরমে দেখানো ক্যাপচা পূরণ করে ‘রেজিস্টার’ বাটনে ক্লিক করতে হবে। এ সময় মোবাইলে একটি অ্যাক্টিভেশন কোড পাঠানো হবে। কোড চাওয়া হলে তা দিয়ে ভেরিফাই করতে হবে। নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ হলে আপনাকে লগ-ইন করতে বলা হবে।
দ্বিতীয় ধাপ
এবার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, জন্ম তারিখ, পাসওয়ার্ডের ও ক্যাপচার ঘর পূরণ করে ‘সামনে’ বাটনে ক্লিক করলে মোবাইলে একটি কোড পাঠানো হবে এবং একটি নতুন ফরম ওপেন হবে। তাতে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও মোবাইলে পাঠানো নতুন অ্যাক্টিভেশন কোড দিয়ে লগ-ইন করতে হবে। সঠিকভাবে কোড প্রবেশ করার পর আপনার Account Active হয়ে যাবে। দুই মিনিটের মধ্যে মোবাইলে কোড না আসলে ‘পুনরায় কোড পাঠান’-এ ক্লিক করুন। লগ-ইন করতে পারেন নিচের লিংকে গিয়েও- https://services.nidw.gov.bd/login
এবার তথ্য সংশোধন
লগ-ইন করার পর আপনার পুরো নাম, এনআইডি নম্বর, জন্ম তারিখ, পিতা ও মাতার নাম, বৈবাহিক অবস্থা প্রভৃতি তথ্য দেখাবে। একই সঙ্গে আসবে তথ্য পরিবর্তন, ঠিকানা পরিবর্তন, ভোটার এলাকা স্থানান্তর, পুনর্মুদ্রণ, ছবি পরিবর্তন, আবেদনপত্রের হাল অবস্থা প্রভৃতি অপশন। এসব অপশন ব্যবহার করে বর্ণনার নিচের অংশে থাকা ‘কার্ডের তথ্য পরিবর্তন ফরমে’ ক্লিক করে তথ্য সংশোধন ও পরিবর্তন করা যাবে।
ভুল তথ্যসংবলিত জাতীয় পরিচয়পত্রের কারণে আপনি বিভিন্ন নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। এ ছাড়া বাসস্থান পরিবর্তন বা অন্য কোনো কারণে ভোটার এলাকা পরিবর্তন বা সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে। জাতীয় পরিচয়পত্র পুনর্মুদ্রণেরও প্রয়োজন হতে পারে। চাহিদা অনুযায়ী অপশনে ক্লিক করে তথ্য হালনাগাদ করতে হবে। তথ্য পরিবর্তনের ফরমে তথ্য হালনাগাদ করে সেটির প্রিন্ট নিন। প্রিন্ট করা ফরমে স্বাক্ষর করে সেটির স্ক্যান কপি জমা দিন অনলাইনে। তথ্য পরিবর্তনের সপক্ষে অনলাইনে জমা দিতে হবে প্রয়োজনীয় দলিলের রঙিন স্ক্যান কপি।
জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবি পরিবর্তন
‘ছবি পরিবর্তন’ অপশনে ক্লিক করার পর প্রথমে কম্বো বক্স থেকে জেলা ও উপজেলা নির্বাচন করতে হবে। ছবি তোলার জন্য স্ক্রিনে উপস্থাপিত ক্যালেন্ডার থেকে সবুজ রঙের তারিখগুলোর মধ্যে নির্বাচন করতে হবে আপনার সুবিধামতো তারিখ। আবেদনপত্রের বর্তমান অবস্থা জানা যাবে ‘আবেদনপত্রের হাল অবস্থা’ অংশে ক্লিক করে।
অনলাইনেই হতে পারেন ভোটার
ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত না হয়ে থাকলে অনলাইনে আবেদন করতে পারেন। ভোটারের আবেদনের জন্য যেতে হবে –https://services.nidw.gov.bd/newVoter
ভোটার তালিকা করার পরে ১৮ বছর বয়সের বেশি হওয়া, প্রবাসী বা বাদপড়া ভোটাররা এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারবেন। ইতিমধ্যে ভোটার হয়ে থাকলে আবার আবেদনের প্রয়োজন নেই। নিবন্ধিত ব্যক্তি আবার আবেদন করলে সেটি দণ্ডনীয় অপরাধ।
অনলাইনে ভোটার হতে শর্তগুলো ভালো করে পড়ে নিন এবং ‘আমি রাজি ও নিবন্ধন ফরম পূরণ করতে চাই’-এ ক্লিক করুন। নিবন্ধনের জন্য ধাপে ধাপে সব তথ্য পূরণ করতে হবে। নিজের পূর্ণ নাম ছাড়া সব তথ্য পূরণ করতে হবে বাংলায় ইউনিকোডে। সব ধাপ শেষ হওয়ার পর প্রিভিউয়ের মাধ্যমে আপনার দেওয়া তথ্য আবার যাচাই করে নিন। অনলাইনে পিডিএফ ফাইল তৈরি করে সেটি প্রিন্ট করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ নিকটস্থ নির্বাচন অফিসে জমা দিন। তথ্য ও ঠিকানা যাচাইয়ের পর তৈরি করা হবে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র। আপনার এনআইডি কার্ড সংগ্রহ করার সময় লাগবে কাগজপত্র জমার সময় দেওয়া রসিদ।
যা যা লাগবে
জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম (বাংলা/ইংরেজি) এবং জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য লাগবে এসএসসির সনদপত্র, শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি না হলে এবং সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত কিংবা কোনো সংস্থায় চাকরিরত হলে চাকরি বই/মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার (এমপিও); অন্যান্য ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্রধারীর পাসপোর্ট/জন্ম নিবন্ধন সনদ/ড্রাইভিং লাইসেন্স/ট্রেড লাইসেন্স/কাবিননামার সত্যায়িত অনুলিপি। ধর্ম পরিবর্তন বা অন্য কোনো কারণে নামের আমূল পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এসব দলিল ছাড়াও লাগবে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সম্পাদিত হলফনামা ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির কপি।
বিয়ে বা বিয়ে বিচ্ছেদ বা অন্য কোনো কারণে কোনো মহিলা তার নামের সঙ্গে স্বামীর নামের অংশ (টাইটেল) সংযোজন বা বিয়োজন বা সংশোধন করতে চাইলে জমা দিতে হবে কাবিননামা/তালাকনামা/মৃত্যু সনদ/ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সম্পাদিত হলফনামা/বিয়ে বিচ্ছেদ ডিক্রির সত্যায়িত অনুলিপি।
মা বা বাবার নাম সংশোধনের ক্ষেত্রে লাগবে এসএসসি, এইচএসসির সনদপত্র (সনদে মা/বাবার নাম উল্লেখ থাকতে হবে) এবং পিতা, মাতা, ভাই ও বোনের জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত অনুলিপি। মা বা বাবার নামের আগে ‘মৃত’ সংযোজন বা বিয়োজন করতে লাগবে মৃত্যু সনদ বা তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত অনুলিপি এবং জীবিত থাকার সমর্থনে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান/পৌর মেয়র/কাউন্সিলরের প্রত্যয়নপত্র। রক্তের গ্রুপ সংযোজন বা সংশোধনের ক্ষেত্রে লাগবে ডাক্তারি সনদ। স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা বা ভোটার এলাকা পরিবর্তনের (বাসা/হোল্ডিং/গ্রাম/রাস্তা/ডাকঘর) ক্ষেত্রে লাগবে ঠিকানার সপক্ষে বাড়ির দলিল/টেলিফোন, গ্যাস বা পানির বিল/বাড়িভাড়ার চুক্তিপত্র/বাড়িভাড়া রসিদের সত্যায়িত অনুলিপি। জাতীয় পরিচয়পত্র পুনর্মুদ্রণের ক্ষেত্রে লাগবে সংশ্লিষ্ট থানায় করা সাধারণ ডায়েরির (জিডি) কপি ও সদ্য তোলা ছবি।
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রয়োজনে সরেজমিন তদন্ত করবেন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সত্যায়ন করতে পারবেন সংসদ সদস্য, স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, গেজেটেড সরকারি কর্মকর্তা এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান।