সেন্টমার্টিনে রোববার থেকে জাহাজ চলাচল , ট্রাভেল পাস মিলবে যেভাবে

আগামী রোববার (১ ডিসেম্বর) থেকে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

আজ (বৃহস্পতিবার) জেলা প্রশাসন থেকে দ্বীপে একটি জাহাজ যাওয়ার অনুমতি মিললেও যাত্রী সংকটের কারণে যেতে পারেনি। ১ ডিসেম্বর থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য অনেকেই মুখিয়ে আছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

অনুমতি পাওয়া জাহাজ কেয়ারি সিন্দাবাদ এর কক্সবাজারের ইনচার্জ নুর মোহাম্মদ সিদ্দিকী বলেন, “পর্যটক নিয়ে জাহাজ আজ সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকলেও যাত্রী সংকটের কারণে তা আর হয়ে উঠেনি। যাত্রীদের সেন্টমার্টিন ভ্রমণে আগ্রহ আছে, কিন্তু ট্রাভেল পাস নিয়ে দ্বিধায় পড়েছেন তারা। আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি রোববার (১ ডিসেম্বর) থেকে কক্সবাজার টু সেন্টমার্টিন জাহাজ যাবে। ইতোমধ্যে টিকিট বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। বেশ সাড়াও পাচ্ছি।”

এদিকে পর্যটন নিয়ন্ত্রণ করতে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে পর্যটকদের ট্রাভেল পাস নিতে হবে বলে জানিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। যাদের ট্রাভেল পাস থাকবে তারাই দ্বীপটিতে ভ্রমণে যেতে পারবেন। ভ্রমণকারী সঙ্গে পলিথিন ও প্লাস্টিক পণ্য নিতে পারবেন না এবং পর্যটকরা কোন হোটেলে অবস্থান করবেন তার তথ্য সংরক্ষণ করা হবে। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে একটি কমিটি গঠন করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।

গত মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব সাবরীনা রহমানের সই করা এক আদেশ থেকে একথা জানানো হয়।

কমিটির কর্মপরিধিতে বলা হয়েছে, জাহাজ ছাড়ার এন্ট্রি পয়েন্টে শুধু বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড কর্তৃক প্রস্তুতকৃত অ্যাপস থেকে সংগ্রহকৃত ট্রাভেল পাসধারী পর্যটকদের অনুমোদিত জাহাজে ভ্রমণ নিশ্চিতকরণ। পর্যটক এবং অনুমোদিত জাহাজ কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন ব্যাগ এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক দ্রব্যাদি পণ্য (পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত তালিকা অনুযায়ী) পরিবহণ না করার বিষয়টি নিশ্চিতকরণ। পর্যটকরা কোন হোটেলে অবস্থান করবেন তা লিপিবদ্ধকরণ ও রেজিস্টার সংরক্ষণ। জাহাজ ছাড়ার পয়েন্টে এবং সেন্টমার্টিনে এন্ট্রি পয়েন্টে পর্যটকগণের জন্য করণীয় এবং বর্জনীয় বিষয়ে বিলবোর্ড স্থাপন। পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা অফিস সার্বিক যোগাযোগ ও সমন্বয় করবে। কমিটি প্রয়োজনে সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে।

ট্রাভেল পাস যেভাবে মিলবে :

বাংলাদেশ টুরিজম বোর্ডের অ্যাপস থেকে ট্রাভেল পাস সংগ্রহ করতে হবে। এ জন্য অ্যাপটি ডাউনলোড করে ইনস্টল করার পর জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধনের পরই প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে অনলাইনেই ট্রাভেল পাস সংগ্রহ করা যাবে।

এই ট্রাভেল পাস দেখিয়ে টেকনাফ থেকে ছেড়ে যাওয়া জাহাজে উঠতে হবে। যদিও গুগল প্লে স্টোর ভিজিট করে বাংলাদেশ টুরিজম বোর্ডের কোনো অ্যাপ এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। অ্যাপটি এখনও ডেভেলপিং পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে।

বর্তমানে সেন্টমার্টিনে যেভাবে যাচ্ছে লোকজন:

অ্যাপস থেকে ট্রাভেল পাসের কোনো প্রক্রিয়া এ পর্যন্ত চালু না হলেও টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে আবেদনের প্রেক্ষিতে কোস্টগার্ডের বিবেচনা সাপেক্ষে সেন্টমার্টিন যাওয়া যাচ্ছে।

আবেদনপত্রের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র ও সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণের উদ্দেশ্য উল্লেখ করে ইউএনও’র অনুমোদন নেওয়ার পর দ্বিতীয় দফায় সংশ্লিষ্ট কোস্টগার্ডের অনুমতির পর যাওয়া যাচ্ছে সেন্টমার্টিন।

আশরাফুল হাসান রিশাদ নামের যুবক বলেন, “সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টা হিমশিম খাওয়ার পর অবশেষে অনুমতি মিলেছে।”

তিনি বলেন, “বুধবার সকালে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার অনুমতি পাওয়ার জন্য টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবরে আবেদন করি। এরপর তিনি আমার গমনের উদ্দেশ্য জানার পর বিবেচনা করে আবেদনপত্রে অনুমোদন দেওয়া হলো উল্লেখে তার স্বাক্ষর ও সিল দেন।”

তিনি আরও বলেন, “ইউএনও’র অনুমোদন পাওয়ার পরও কাজ হয়নি। একদিন পর অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সকালে আবার যেতে হয়েছে টেকনাফ কোস্টগার্ডের কার্যালয়ে সেখানে গিয়ে কন্টিনজেন্ট কমান্ডারের স্বাক্ষরসহ অনুমোদন নিয়ে সেন্টমার্টিন যাওয়ার পূর্ণাঙ্গ অনুমতি পেলাম।”

কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামের জাহিদ আল ইসলাম নামে এক পর্যটক বলেন, “অ্যাপসে ট্রাভেল পাসের ব্যাপারে যা বলা হয়েছে তার কিচ্ছুই মিলছে না কোথাও। পুরনো পদ্ধতিতেই আবেদন করে যাওয়া যাচ্ছে শুনলাম। তাও আবার ২ হাজার পর্যটক। এরকম অবস্থা হলে সেন্টমার্টিন ভ্রমণের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে যাবে।”

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার শহর, ইনানী ও টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন নৌরুটে দিয়ে কয়েক বছর ধরে বিলাসবহুল ১২টি পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করেছিল আসছিল। এর মধ্যেই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর (এএ) তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। এসময় নাফ নদী দিয়ে সেন্টমার্টিনে যাতায়াতের সময় একাধিকবার বাংলাদেশি সার্ভিস ট্রলার ও স্পিডবোট লক্ষ্য করে মিয়ানমার থেকে গুলিবর্ষণের ঘটনার কারণে নাফ নদী অনিরাপদ হয়ে উঠে। পরে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ইনানী সৈকতে স্থাপিত নৌ-জেটি ব্যবহার করে সেন্টমার্টিনে পর্যটক পরিবহন করা হতো। ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে ইনানী জেটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেখান থেকে জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে এখন থেকে সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে চলাচলের সম্ভাবনা রয়েছে।

কক্সবাজার সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী বলেন, ‘‘সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটন নিয়ন্ত্রণ এবং জাহাজ ছাড়ার পয়েন্ট নির্ধারণে গঠিত কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। কমিটির সদস্যদের সঙ্গে পরিবেশসহ সার্বিক বিষয়াদি পর্যালোচনা করে জাহাজ ছাড়ার পয়েন্ট হিসেবে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট নির্ধারণ করা হয়েছে।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ২ হাজার পর্যটক যাতায়াত করতে পারবেন। এছাড়া, নভেম্বর ও ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বীপে রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ থাকবে। তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে পর্যটকদের রাত্রিযাপনের অনুমতি দেওয়া হবে।’’

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts