কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে নতুন এক আকর্ষণ সৃষ্টি করেছে ৫০ ফুট উঁচু এক মানবাকৃতির প্লাস্টিক দানব। এর দুই পাশে আরও দুটি দৈত্যাকৃতির ভাস্কর্য। সন্ধ্যার আলো-আঁধারিতে এই বিশাল ভাস্কর্যগুলো যেন দূষণের ভয়াবহতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন লাখো পর্যটকের সমাগম হয়। কিন্তু বালিয়াড়ি ও সমুদ্রপানিতে ছড়িয়ে পড়া প্লাস্টিক বর্জ্যে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে দূষণ এবং হুমকির মুখে পড়ছে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য। এসব বর্জ্য সৈকতের সৌন্দর্যকে প্রতিনিয়ত নষ্ট করছে। দূষণ রোধে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে এই ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের একদল শিল্পী এক মাস ধরে এই ভাস্কর্য তৈরি করেছেন। কক্সবাজার, উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন সৈকত থেকে সংগৃহীত ১০ মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। কাঠ, পেরেক ও আঠার সংমিশ্রণে ৫০ ফুট উচ্চতার প্রধান দানব ছাড়াও, দুই পাশে ১৫ ফুট উচ্চতার দুটি দৈত্য ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার সকালে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন দানব ভাস্কর্যের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এরপর এটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। আয়োজকদের দাবি, এটি এশিয়ার সর্বোচ্চ প্লাস্টিক দানব ভাস্কর্য।
এর আগে, ৭ নভেম্বর কক্সবাজার সৈকতে জেলা প্রশাসন ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর’ এবং স্থানীয়দের জন্য ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ মার্কেট’ চালু করে। যেখানে প্লাস্টিক বর্জ্যের বিনিময়ে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য দেওয়া হয়। এর মাধ্যমেই এই বিশাল পরিমাণ প্লাস্টিক সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে।
চারুকলার ভাস্কর আবীর কর্মকার বলেন, ‘দৈত্যদানবের ভয়ংকর রূপ আসলে দূষণের ভয়াবহতার প্রতীক। এটি মানুষকে সচেতন করবে প্লাস্টিক পণ্যের যথাযথ ব্যবহার ও পুনর্ব্যবহার সম্পর্কে।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, ‘বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতকে দূষণমুক্ত রাখতে আমরা সবাইকে সচেতন করতে চাই। এই ভাস্কর্য তারই একটি অংশ। আশা করি, এটি পর্যটক ও স্থানীয়দের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে এবং দূষণ রোধে ভূমিকা রাখবে।’
২০১২ সালে কক্সবাজার সৈকতে ৪২ ফুট উচ্চতার আরেকটি প্লাস্টিক দানব নির্মাণ করা হয়েছিল। এবার এর আকার আরও বড় ও ভয়ংকর করা হয়েছে, যা দূষণের বাড়তি সংকটকেই প্রতিফলিত করে।
সমুদ্র থেকে উঠে আসা পূর্বমুখি এই দৈত্য বা দানবের অর্থ হলো- প্লাস্টিক মানবজাতিকে ধীরে ধীরে গ্রাস করছে। পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করছে। মানুষ যদি সচেতন হয়ে প্লাস্টিক ব্যবহার কমিয়ে দেয় ও রিসাইকেল করে তবেই এই দানব থেকে মুক্তি মিলবে।