ব্যাটারিচালিত যানের কারণে দুর্ঘটনা বেড়ে ৪২৫১, আহত হয়েছেন ৪৭৭৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৪৫৫ জনের।
সেভ দ্য রোড-এর মহাসচিব শান্তা ফারজানা ৬ ডিসেম্বর তোপখানা রোডস্থ বিজয় মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত প্রতিবেদন পাঠ ও সংবাদ সম্মেলনে উপরোক্ত তথ্য দিয়ে আরো বলেন, প্রতিবেদন-সচেতনতামূলক কর্মসূচির পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও প্রশাসনের সক্রিয়তায় চালক-পথচারি ও যাত্রী সাধারণের মধ্যে সচেতনতা-সাবধানতার কারণে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত দুর্ঘটনা স্বাভাবিক থাকলেও নভেম্বর মাসে সারাদেশে ব্যাটারিচালিত যানবাহনের বিশৃঙ্খলতার কারণে দুর্ঘটনা বেড়েছে।
২০২৪ সালের ১ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত শুধুমাত্র ব্যাটারিচালিত যানবাহনে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৮০৪ টি। এতে আহত হয়েছেন ২২৯১ এবং মৃত্যু বরণ করেছেন ১৭৩ জন। ৮৬৬ টি বাস দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৯৬৯ এবং নিহত হয়েছেন ১৮০ জন। ৬২৬ টি ট্রাক দূর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৭০৩ এবং নিহত হয়েছেন ৭৮ জন। উপস্থিত সাংবাদিকদেরকে সেভ দ্য রোড-এর পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়, ৯৫৫ টি মোটর বাইক দূর্ঘটনায় ১০১১ জন আহত এবং ৮০ জন নিহত হয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সেভ দ্য রোড-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০০৮ সালে আকাশ-সড়ক- রেল ও নৌপথ দুর্ঘটনামুক্ত করার লক্ষ্যে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের টিএসসিতে আত্মপ্রকাশের পর থেকে গত ১৬ বছর ধরে গবেষণা-সচেতনতা ও স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন হিসেবে কাজ করছে সংগঠনটি। প্রতি মাসের প্রতিবেদন, গবেষণা ও সচেতনতামূলক কাজে চেয়ারম্যান জেড এম কামরুল আনাম, প্রতিষ্ঠাতা মোমিন মেহেদী, মহাসচিব শান্তা ফারজানা, ভাইস চেয়ারম্যান বিকাশ রায় ও জিয়াউর রহমান জিয়া বিশেষ ভূমিকা রাখছেন।
গবেষণা সেল-এর তত্বাবধায়নে দৈনিক যুগান্তর, দৈনিক দেশ রূপান্তর, দৈনিক দিনকাল, দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক কালের কন্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, দৈনিক জনকন্ঠ, দৈনিক কালবেলাসহ ১৭ টি জাতীয় দৈনিক, আরটিভি, জিটিভি, যমুনা নিউজ, মাসরাঙ্গা, এটিএন বাংলাসহ ২০ টিভি-চ্যানেল, জাগো নিউজ, বাংলা নিউজ, বিডিনিউজসহ ২২ টি নিউজ পোর্টাল এবং স্থানিয় প্রত্যক্ষদর্শী-সেভ দ্য রোড-এর স্বেচ্ছাসেবিগণের দেয়া তথ্যানুসারে এই প্রতিবেদন দুর্ঘটনামুক্ত পথ-এর জন্য তৈরি করা হয়েছে। সেভ দ্য রোড-এর পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়- ১ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত নৌপথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬৭ টি। আহত ৯৭ জন, নিহত হয়েছেন ৪ জন। রেলপথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬৯ টি। আহত ১০২ নিহত হয়েছে ১৮ জন। আকাশপথে কোন দুঘটনা না ঘটলেও বিমানবন্দরের অব্যবস্থাপনার কারণে সাধারণ যাত্রীদের ১ টি বড় অংশ শারিরীক ও মানষিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
সেভ দ্য রোড-এর পক্ষ থেকে গত ১৬ বছর যাবৎ ৪ পথ দুর্ঘটনামুক্ত করতে সেভ দ্য রোড-এর ৭ দফা দাবিকেই সুপারিশ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়-
১. ১১ জুলাইকে ‘দুর্ঘটনামুক্ত পথ দিবস’ ঘোষণা করতে হবে এবং রাজধানী ঢাকায় সড়ক প্রশস্থকরণ কর্মসূচি হাতে নিয়ে ৭ ভাগের পরিবর্তে কমপেক্ষ ২১ ভাগ সড়ক বাস্তবায়ন করতে হবে।
২. ফুটপাত দখলমুক্ত করে যাত্রীদের চলাচলের সুবিধা দিতে হবে।
৩. সড়ক পথে ধর্ষণ-হয়রানি রোধে ফিটনেস বিহীন বাহন নিষিদ্ধ এবং কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ ও জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যতিত চালক-সহযোগি নিয়োগ ও হেলপারদ্বারা পরিবহন চালানো বন্ধে সংশ্লিষ্ট সকলকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
৪. স্থল-নৌ-রেল ও আকাশ পথ দূর্ঘটনায় নিহতদের কমপক্ষে ১০ লাখ ও আহতদের ৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ সরকারিভাবে দিতে হবে।
৫. সড়ক-রেল ও নৌপথে ‘ট্রান্সপোর্ট পুলিশ ব্যাটালিয়ন’ গঠন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
৬. পথ দূর্ঘটনার তদন্ত ও সাজা ত্বরান্বিত করণের মধ্য দিয়ে সতর্কতা তৈরি করতে হবে এবং ট্রান্সপোর্ট পুলিশ ব্যাটালিয়ন গঠনের পূর্ব পর্যন্ত হাইওয়ে পুলিশ, নৌ পুলিশ সহ সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা-সহমর্মিতা-সচেতনতার পাশাপাশি সকল পথের চালক-শ্রমিক ও যাত্রীদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। সকল পরিবহন চালকের লাইসেন্স থাকতে হবে।
৭. ইউলুপ বৃদ্ধি, পথ-সেতুসহ সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়ে দূর্নীতি প্রতিরোধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যাতে ভাঙা পথ, ভাঙা সেতু আর ভাঙা কালভার্টের কারণে আর কোন প্রাণ দিতে না হয়।