স্মরণ ॥ মরমী কবি পাগলা কানাই

জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ ‘মরণের আগে মর, সমনকে শান্ত কর, যদি তাই করতে পার, ভরপারে যাবি রে মন রসনা, অথবা জিন্দা দেহে মুরদার বসন, থাকতে কেন পর না / মন তুমি মরার ভাব জানো না’- এমনই হাজারো আধ্যাত্মিক লোক সঙ্গীতের রচয়িতা মরমি সাধক কবি পাগলা কানাইয়ের ১২৭তম মৃত্যু বার্ষিকী ছিল মঙ্গলবার ২৮ আষাঢ়।

দিবসটি উপলক্ষে সকালে কবির মাজার সদর উপজেলার বেড়বাড়ি গ্রামে পুস্পমাল্য অর্পণ করা হয়। বিকেলে আলোাচনা সভা এবং পাগলা কানাই রচিত সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। কবির জন্মভিটা ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বেরবাড়ি গ্রামে ‘পাগলা কানাই স্মৃতি সংরণ সংসদ’ দিনব্যাপী এসব কর্মসূচি আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে প্রতি বছরের মতো এবারো দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কবির ভক্তরা অংশ গ্রহন করেন। তারা প্রয়াত কবির প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ ধুয়াজারি গানসহ কবির রচিত সঙ্গীত পরিবেশন করেন। বিকেলের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক মাহবুব আলম তালুকদার।
এ ছাড়া ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামসহ সরকারি কর্মকর্তা, কবির হাজারো ভক্ত অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

পাগলা কানাই ছিলেন লালন পরবর্তী বাংলার অন্যতম মরমী সাধক ও লোককবি। তিনি ১৮০৯ সালের মার্চ মাস মোতাবেক ১২১৬ সালের ২৫ ফাল্গুন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার লেবুতলা মাধবপুর গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তার বাবার নাম ছিল মেসের আলী ও মা মোমেনা খাতুন। কৈশোরে বাবার মৃত্যুর পর কানাই মামাবাড়ি বেড়বাড়ি গ্রামে চলে আসেন। সেখানে তিনি গবাদি পশু রাখতেন। এ সময় তিনি আধ্যাত্মিক সাধক ও একাধিক বাউল শিল্পীর সংস্পর্শে আসেন। এরপর তিনি নিজেই রচনা করতে থাকেন একের পর এক গান।

প্রথমাবস্থায় তার গানের শ্রোতা ছিলেন রাখালরা। কানাইয়ের গানে মুগ্ধ রাখালেরা তাকে ‘পাগলা কানাই’ বলে ডাকতেন। অল্পদিনেই রাখালদের ছাড়িয়ে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে দূর-দূরান্তে। আধ্যাত্মিক গান রচনা ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পরিবেশনের মাধ্যমে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন পাগলা কানাই। প্রায় ৮০ বছরের জীবদ্দশায় কানাই প্রায় তিন হাজার আধ্যত্মিক ও ভক্তি সঙ্গীত এবং কবিতা রচনা করে গেছেন।

তার রচিত গানের মধ্যে রয়েছে পালাগান, জারিগান, ধুয়াগান, কবিগান, মুর্শিদি, মারফতি গান। ১৮৮৯ সালের ১২ জুলাই মোতাবেক ১২৯৬ সালের ২৮ আষাঢ় এই মরমী সাধক ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর পর পাগলা কানাইকে মামাবাড়ি বেড়বাড়ি গ্রামে দাফন করেন। সেখানেই সরকারিভাবে তৈরি করা হয়েছে ‘পাগলা কানাই স্মৃতি অডিটরিয়াম’।

বিপুল জনপ্রিয়তা এবং বাংলা গানে অসাধারণ অবদান রাখা সত্ত্বেও পাগলা কানাই রাষ্ট্রীয়ভাবে অবহেলিতই থেকে গেছেন বলে তার ভক্তদের অভিযোগ।

মরমী এই কবির গান সংরণে সরকারিভাবে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ভক্তদের আশঙ্কা, দ্রুত সংরণ করা না হলে চিরতরে হারিয়ে যাবে কবি রচিত বহু গান।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts