ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

বিডি মেট্রোনিউজ  ।। জাতীয় সংসদের স্পিকার ও কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) চেয়ারপারসন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, আমরা সংবিধান ও গণতন্ত্রের কথা বলি; কিন্তু গণতন্ত্র ও গণমাধ্যম অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। গণতন্ত্রের বিকাশ, সাংবিধানিক শাসনব্যবস্থা সমুন্নত রাখা ও কার্যকর সংসদ প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম। যেহেতু সংবাদের তথ্য ও বস্তুনিষ্ঠতা পাঠককে প্রভাবিত করে, সে কারণে তা জনমত সৃষ্টি ও জাতিগঠনে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের (ডিএসইসি) ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

ড. শিরীন শারমিন বলেন, পরিবর্তনের বিশ্বে বিশেষায়িত বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও জ্ঞান অর্জন প্রয়োজন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি), লিঙ্গসমতা, নারীর ক্ষমতায়ন ও অর্থ-বাণিজ্যে বিশ্বে নিয়ত পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার বিষয়গুলো ছাড়াও জাতিসংঘ যেসব ইস্যুতে কাজ করছে-সেসব বিশেষায়িত বিষয়ে জনগণের কাছে যথাযথ তথ্য উপস্থাপনের জন্য সাংবাদিকদেরও প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সংবিধান ও কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী চলা জাতীয় সংসদের খবরাখবরও নির্ভুলভাবে পাঠকদের কাছে পৌঁছে দিতে হলেও প্রশিক্ষণ দরকার। পাশাপাশি একজন ভালো সাংবাদিক হতে হলে রাষ্ট্রের চারটি স্তম্ভ- বিশেষ করে সংসদ, নির্বাহী ও বিচার বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক এবং এদের যার যার কর্মপরিধি সম্পর্কেও জ্ঞান অর্জন বিশেষভাবে প্রয়োজন।

 স্পিকার বলেন, একটি সংবাদপত্রের সফলতা ও পাঠকপ্রিয়তা অনেকাংশেই নির্ভর করে সাব-এডিটরদের ওপর। এজন্য তাদেরকে প্রশিক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তিতেও সমৃদ্ধ হওয়া বাঞ্ছনীয়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাংবাদিক নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী দ্বিধাবিভক্ত সাংবাদিক ইউনিয়নের ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে বলেন, অনৈক্যের কারণেই আমরা (সাংবাদিকরা) অনেক অধিকার ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।
তিনি বলেন, সুষ্ঠু গণমাধ্যম না থাকলে গণতন্ত্রের বিকাশ অসম্ভব। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে এবং স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্রের জন্য তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, জহুর হোসেন চৌধুরী ও আবদুস সালামের মতো পূর্বসুরী সাংবাদিকরা যেভাবে কলমযুদ্ধ চালিয়েছিলেন, আজও গণতন্ত্রের শত্রু ও অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।
বিশেষ অতিথি দৈনিক ইত্তেফাকের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক তাসমিমা হোসেন বলেন, বাংলাদেশে গণমাধ্যমের অনেক বিকাশ ঘটেছে, এটি ইতিবাচক দিক। এখন আমাদের বিশ্বমানের সাংবাদিক গড়ে তুলতে হবে। এটি করতে হলে সাংবাদিকদের জন্য একটি স্থায়ী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা জরুরি। এছাড়াও সাংবাদিকদের তথ্য-প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি ইংরেজিসহ অন্যান্য ভাষা সম্পর্কেও জানা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, সাংবাদিকতাকে মহত্ পেশা বলা হয়; কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়- সাংবাদিকদের সম্মান আগের তুলনায় কমে যাচ্ছে। একজন ভালো সাংবাদিক হতে হলে সাংবাদিকতাকে ভালোবাসতে হবে এবং এই পেশার উন্নয়নেও ভূমিকা রাখা দরকার। একজন সাংবাদিকের নিজের যদি কাজের প্রতি আগ্রহ থাকে তাহলে তার পক্ষে ভালো সাংবাদিক হওয়া সম্ভব। কে ভালো সাংবাদিক, তার কাজেই সেটির প্রতিফলন ঘটবে।
তাসমিমা হোসেন আরো বলেন, সাব-এডিটরদের দক্ষতা ও ধৈর্য থাকা জরুরি। তবে এক্ষেত্রে সম্ভবত আমাদের এখনো বিরাট ঘাটতি রয়েছে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, এই দেশে কোনো আইএস নেই। তবে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র রয়েছে। এই দুষ্টু চক্রটিই এখানে আইএস, আলকায়েদা ও মুসলিম ব্রাদারহুড- ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমের প্রতিটি কর্মীরই দায়িত্ব পালনের সময় এসেছে।
রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র শরফুদ্দিন আহমেদ ঝণ্টু তার বক্তব্যে সাব-এডিটরদের সমস্যা সমাধানে পাশে থাকার আশ্বাস দেন। একই আশ্বাস দেন ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমানও।
ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের সভাপতি নাছিমা আক্তার সোমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ। আলোচনা শেষে অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে সংগঠনের কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটেন।
Print Friendly, PDF & Email

Related Posts