বরিশাল বিভাগের চাহিদা ৩ কোটি নতুন বই

খান মাইউদ্দিন,বরিশাল : ১ জানুয়ারি সারা দেশে বই উৎসব পালিত হবে। বরিশালেও নানা আয়োজনে অনুষ্ঠিত হবে এই উৎসব। শিশু-কিশোরদের হাতে পৌঁছে যাবে বিনামূল্যের বই।

শিক্ষা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চাহিদামত বই ইতিমধ্যে পৌঁছেছে বরিশালে। এমনকি বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার প্রতিটি উপজেলায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বই। ফলে বই উৎসবের অপেক্ষায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা।

বিগত বছরের মতো এবারও বছরের প্রথম দিনেই সারাদেশে প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিতে কাজ করছে সরকার। ইতিমধ্যে ৯৭ শতাংশ পাঠ্যপুস্তক উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এ সপ্তাহের মধ্যে বাকি বই স্কুলে পৌঁছে যাবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, সারা দেশের প্রাক-প্রাথমিক, মাধ্যমিক, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের ৪ কোটি ২৬ লাখ ৩৫ হাজার ৯২৯ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩৬ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার ২৪৫টি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে।

২০১৭ শিক্ষাবর্ষে ৩৫ কোটি ৪২ লাখ ৯০ হাজার ১৬২টি বই শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা হয়। গত বছরের চেয়ে এবার ১০ লাখ ৭০ হাজার ৯৬৬ জন শিক্ষার্থী বেড়েছে। বই বেশি ছাপা হয়েছে ৭১ লাখ ৯৩ হাজার ৩৬৯টি। বইগুলো আকর্ষণীয় ও রঙিন। নবম-দশম শ্রেণির ১২টি সুখপাঠ্য বই দামী কাগজে রঙিন ছবিসহ ছাপা হয়েছে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর তা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে।

এদিকে বরিশাল বিভাগেও বেড়েছে বইয়ের চাহিদা। গত বছরের তুলনায় প্রায় দেড়গুণ চাহিদা রয়েছে বলে জানিয়েছেন মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা এবং প্রাথমিক মিক্ষা অধিদফতরের বিভাগীয় উপ-পরিচালকরা।

জানা গেছে, ২০১৭ সালে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় (বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর) সোয়া দুই কোটি বইয়ের মধ্যে প্রাথমিকে ১২ লাখ ৫৬ হাজার ৯৯৩ জন ভর্তিকৃত শিশুর জন্য মোট বইয়ের চাহিদা ছিল ৫৯ লাখ ১১ হাজার ১৫৭ এবং মাধ্যমিক স্তরে ৯৮ লাখ ৫৫ হাজার ২৭৭ বইয়ের । পাশাপাশি দাখিল পর্যায়ে ৩৮ লাখ ৫৯ হাজার ১২৮ বই, ইবতেদায়ী স্তরে ১৮ লাখ ৫৮ হাজার ১৫৯ বই, এসএসসি ভোকেশনাল এক লাখ ৯৭ হাজার ৫৩৮ ও দাখিল ভোকেশনালে ৩ হাজার ৩৪০ বইয়ের চাহিদা ছিল।

গতবছর সোয়া দুই কোটি বইয়ের চাহিদা থাকলেও এ বছর তা প্রায় তিন কোটি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে । মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালক ড. মু: মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ২০১৮ সালে বরিশাল বিভাগে এক কোটি ৫৪ লাখ বইয়ের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে মাধ্যমিকের ৮৬ ভাগ ও দাখিল, ভোকেশনাল, কারিগরির ৮১ ভাগ বই বরিশালে পৌঁছেছে। জেলা অফিসের মাধ্যমে তা উপজেলায় পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

ওদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপ পরিচালক এসএম ফারুক জানান, গত বছরের তুলনায় বইয়ের চাহিদা প্রায় দেড়গুণ।  এই শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিকের বই ইতিমধ্যে শতভাগ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বরিশাল বিভাগের জেলা সমূহে এবং জেলা অফিস থেকে তদারকি করে উপজেলায়ও পৌঁছানো হয়েছে। তিনি দাবি করেন, প্রায় ৯০ শতাংশ বই বিদ্যালয়গুলোতে পৌঁছেছে।

জানা গেছে এবছরও উৎসবমুখর পরিবেশে বই বিতরণ করা হবে। উৎসব চলবে নতুন বছরের শুরু থেকে সপ্তাহব্যাপী। দেশের স্বার্থে সরকারের এই পরিকল্পনা সফল করতে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র পাল।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ছেঁড়া-ফাটা বই নিয়ে মাদুরে বসে পন্ডিত মশাইয়ের কাছে শিক্ষা নেওয়ার সেই দিন বদলেছে। এখন প্রায় সব শিক্ষার্থী পাকা ভবনে বেঞ্চে বসে। বিনা মূল্যে বই বিতরণের এই উদ্যোগ যেমন প্রশংসিত হয়েছে, তেমনি শিক্ষা আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসেছে ।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts