এক. নতুন ঋতু ও স্বপ্ন
আজ যখন তোমার দিকে তাকালাম, বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে এবং আবহাওয়ার শীতলপরশ বুলিয়ে দিচ্ছে বাংলার কুড়েঘরে অথচ এ শরীর থেকে তখন নোনাঘাম ঝরতে ঝরতে বুকটা তৃষ্ণার্ত মরুভূমির মতো হাহাকার করছে, তবে কি এই হাহাকার মানে কোন সুরভিত বাগানের বহুরঙে বর্ণিল প্রজাপতিকে পাবার প্রবল আকাঙ্খা? নাকী অন্যকিছু?
তোমার আগমনকে স্বাগত জানিয়ে একদল অতি উৎসাহী আঙ্গিনার চড়ুই লাল, নীল, সবুজ বাতি জ্বালিয়ে উড়ছে, ঠিক পর্দায় ঝড়তোলা নায়িকার মতই আর তোমার দৃষ্টি সম্ভাবনাময় ঋতুর দিকে প্রবলবেগে প্রবাহমান, গুচ্ছ গুচ্ছ স্বপ্ন এঁকে আমার দিকেই ছুটে আসছে!
অথচ নতুন ঋতু ও স্বপ্নকে আবিষ্কারে ভীত সন্ত্রস্থ আমার মাটি ভূ-কম্পনের মতো কাঁপছে, তথাপি নতুন ঘ্রাণে নেশাগ্রস্থ ঘামতে ঘামতে আমিও লুপ্ত জ্ঞানে তোমার দিকেই প্রবল স্রোতে প্রবলবেগে ঘূর্ণায়মান…।
দুই. বসন্তের চিঠি
ভালেবাসা ভালোবাসা বলতে বলতে বুক পকেটে জমা হয় শীতের স্বপ্নগুচ্ছ। গোলাপ আর গোলাপ। লাললাল, নীল নীল, শাদা শাদা। এতো এতো গোলাপ…। গোলাপ আর গোলাপের ভেতর দিয়ে যেতে যেতে শুকনো পাতার মর্মর ধ্বনি শেষে চিঠি আসে ডাক হরকরার বাসন্তি কালার প্যাডে। আর বুুক পকেটে উকি দিতে থাকে নতুন নতুন গোলাপের সুঘ্রাণ… ! তখন বসন্ত আরো প্রিয় হয়ে ওঠে ফাগুনের আগুন মহড়ায়!
তিন. বসন্তপুরের জংশনে
শীতের কুয়াশা ভেজা দিনগুলি পেরিয়ে ভালোবাসার লালনীল গাড়ি এসে থামল ঋতু বদলের উৎস মুখে। তখন মনে হচ্ছিল নদীর উষ্ণতায় আমি যেন প্রবেশ করছি বসন্তপুরের জংশনে। যদিও চাঁদরে লেগেছিলো শীতের কিছুটা দাগ ও দ্বিধা। তথাপি নদীর উষ্ণমাত্রা আমাকে টেনে নিচ্ছিল ধীরে ধীরে নদীর গভীরে ভিন্ন এক গল্পের নিবিড় নিঃশ্বাসে।
আমি নদীর স্বাস্থ্যবান ঢেউ গুণে গুণে পরখ করি; এতো মোলায়েম, এতো আরাম- মনে হচ্ছিল শিশির গন্ধে শিহরিত হয়ে উঠছে মাঠের তরতাজা দুর্বাঘাস। আর বসন্তের অনাবিল সুখ বার্তায় বারবার কেঁপে উঠছে নদীর জল।
আমি নতুন ফুলের সুবাস নিতে নিতে বসন্তপুরের জংশনে ঘুরে বেড়াই।
চার. আজ আমি অন্য কোথাও যাবো না
আজ আমি অন্য কোথাও যাবো না। রেবেকার হাত ধরে কাটাবো সময়। পার্কের বিকেলে সবুজ ঘাসের মুগ্ধতায় জেনে নেবো তার চোখে অন্য কোন পৃথিবীর চিত্রকল্প আছে কী না। বাড়ি ফেরা পাখিদের কানাঘুষায় সন্ধে হবে যখন, মন ছুঁয়ে জেনো নেবো তার মনে, অন্যকোন নদীর গল্প আছে কী না।
রেবেকা সেতো পাড়ার অনেক চোখের লাল নীল কালো গোলাপের ফেভার। যদি জানি, সে জীবনের স্রোত রেখায় ভাসে একা একা, তার জীবন কবিতার খাতায় কাটাকাটির মতো আঁকাআঁকিতে ভরা, তবে কিচিরমিচির পাখি আলোয় বাড়ির আঙ্গিনায় গড়ে নেবো সোনালি হাসের খামার।
-যদি রেবেকা এই চোখে রাখে চোখ!
পাঁচ. পাখি জংশন ও বেদনা মুখার্জী
পাখি জংশনে এসে দূরবীণে রাখি চোখ। যদিও এই তৃষ্ণার্থ আঙ্গিনায় ঘুরছে মহাদেশীয় মুখ ও সুখ এবং আমি তাও জানি এই শীতে বরফ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আসা মৌসুমী অতিথির চেয়ে খুববেশি রোমান্টিক আমার দেশের মাছরাঙা ও চড়ুই।
দেখো, নিবিড় প্রণয়পাঠে প্রগাঢ় বন্ধনে দেখো, দূরবীণে দূরছায়ায়; বিকেল ও সন্ধের মাঝখানে প্রবল আকাঙ্খার চুম্বন নিয়ে একা একা দাঁড়িয়ে আছে পাশের বাড়ির বেদনা মুখার্জী। আর ওদিকে ফিরে পূর্ণবার দেখো; মৌসুমের সঞ্চয় নিয়ে জংশন ছেড়ে উড়ে যাচ্ছে সাইবেরীয় নভোচারী।
মহাদেশীয় মুখ ও সুখ নয়, কুড়েঘরের বেদনা মুখার্জী…
দূরবীণের দূরছায়া মাড়িয়ে পাখির মতো ডানামেলে আসছি…
sheoulmanjur@yahoo.com.