সৈয়দ রফিকুল আলমের প দা ব লী

হৃদয়পুর

 

পৌষের শীতে বাঘ ডুকরে
হাড় কনকনে শীতের দাপট
পা-বাড়ানো চলার পথে
যাচ্ছি যাবো পাহাড় পুরে
ছোট্ট টিলার ছোট্ট ঘরে
যেথায় আছে স্বর্ণচাপার-
স্বর্ণদোলার মৌ মৌ গন্ধে
মাতাল হাওয়া; বনস্পতির ছায়ার
টোপর, আদর ঢেলে বরণ করে।

একলা আমি হাটছি বসছি আনমনে
মনেরভেতর সেঁকো বিষের ক্রিয়াভরে
কুয়াশা চালে শীত কাতুরে উড়কি সয়ে
ভাল্লাগেনা-ভাল্লাগেনা কিছুই আমার অন্তঃবিষে।
হঠাৎ দেখি ধোঁয়া কর্নিকাতে দিলে ধরা
কুয়াশা ছিঁড়ে ময়ূরপঙ্কী নাও ভাসিয়ে
চটক দিয়ে ভিড়লে তুমি আমার পাশে
দুধেল ফেনিল ঝাপটা শুভ্র শরীরে বেয়ে;
কুয়াশা স্নাতে গরম হাওয়ার দাপট নিয়ে
এমন কেন করলে তুমি-বল্লেনা কেন বল্লেনা কিছু?

নবনীত চম্পক আঙ্গুলে আদর মেখে
দেবে কি ঠাঁই? তোমার পাশে
আগুন ঝরা তাপ পুড়িয়ে?
প্রকৃতি ছায়ার মিহি শীতল কুহক ছায়ে
স্থাপত্যে মোড়া হৃদয়পুরে?

 

হিসাবে আছে গোয়ালে কই

 

ছল-চাতুরী ভাব ভাবনায় চলছে নিপাট ধারায়
অঙ্ক-কষার বিদ্যায়তনে বিপুল বেভুল ছকে
ডোবার জল সাগর জলে মিলমিশে হয় এক
এমন তথ্য-তত্ত্ব বোধের কুশীলব হতে কি হয়?
পাগলা মোড়ার নয়ানজুলি দেখার তৃপ্তি মিটে
পিঠে চড়া সওয়ারীর প্রাণ যায় যায় যে-করে
মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের দিনানু দিনে অশ্রু শুধু ঝরে
ভারবাহি বোঝার উপর নিত্য বোঝা চড়ে।

ঐতিহ্য পুরাণ মধ্যবিত্তের মুষ্ঠি বন্ধ থাকে
হাত না পাতানো স্বভাব দোষ নিত্য ঘুরে আসে
বিত্তহীনের যাপিত জীবন পুষ্ঠিহীনে ভূগে
একের রসদ পরিবারে চিমটি ভরে পুষে।
নব্বই শতাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠে এরা যদি হয় সম্পদ
তবে কেন বোঝার উপর বোঝা চাপাও-‘বিবেক হীনের মতো?
লক্ষ হাজার কোটি টাকা কল-কৌশলে লোপাট হয়ে যায়
ভুরি ওয়ালার চর্বিসারে দিনকে দিন গতর বয়ে যায়
উশুল কই? প্রবচনের ধারা চলে ভুল অঙ্কের কেচ্ছা।

 

যাসনে বাহিরে

 

অসূর্য স্পর্শের ছায়া চারণিক মেখে ধূসর আকাশ ছিঁড়ে
থম থমে ঘনীভূত হয় বিজলী চমকে-জর্জেট ছায়ায়-
মিশকালো আঁধারের কোল-হতে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির ঝর্ণায়
ক্রমে-ক্রমে বেগে বহে ঝনঝন শনশন মৃত্তিকা আলয় ঘিরে।

আকাল বর্ষণে ফুলে ওঠে চমকে ঠমকে অবিরাম স্রোত
জলরাশি কূলভাঙ্গা জোয়ারের মতো উর্ধ্বগ্রাসে খেলে যায়,
বুকের অবধি জলে ঘর হতে পা-বাড়ানো কোন পথ নাই
ভিতর মহলে জল, এঁদোজলে গৃহস্থালি রোধ
শাঁ শাঁ বাতাসের তোড় ঝমঝম বৃষ্টির অসম অঘোরে ঘূর্ণি
হত দরিদ্রের চাল উড়ে যায় আনাজপাতি সম্বল
বজ্রমেঘের ফাটানো রৌরব কম্পনে-হৃদ, নিস্পৃহে বিহ্বল
আহাজারী চলে মৃত্যু-সম দিনানু ভবিষ্যে জটরের আর্তি।

ধারাবহে উন্নয়নে বাণী শুনি পত্র পাঠান্তের কালো শব্দে
দশকে দশক যায় কল্পে;- বহু ব্যয়ে, দেখা হবে কোন অব্দে?

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts